নতুন প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল কাজেমি
তবে কি ইরাকে রাজনৈতিক সংকটের অবসান ঘটতে চলেছে?
-
ইরাকের নয়া প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল কাজেমি
ইরাকে গত পাঁচ মাস ধরে চলে আসা রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সংসদে অনুষ্ঠিত আস্থাভোটে মোস্তফা আল কাজেমি’র নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা জয়লাভ করেছে।
গত বছর ১ অক্টোবর থেকে ইরাকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ চলে আসছিল। বিদেশিদের উস্কানিতে এসব বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় রূপ নেয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকায় এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী আদিল আব্দুল মাহদি গত ২৯ নভেম্বর তার পদ থেকে ইস্তফা দেন। আদিল আব্দুল মাহদি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর গত কয়েক মাসে নয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। প্রেসিডেন্ট বারহাম সালেহ নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য তিনজন ব্যক্তিকে মন্ত্রিসভা গঠনের সুযোগ দেয়া হলেও তারা আস্থাভোটে পরাজিত হন। অনেক নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে মোস্তফা আল কাজেমি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয় লাভ করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মোস্তফা আল কাজেমির নেতৃত্বে ইরাকের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন কয়েকটি দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলো পার্লামেন্টে তাদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। দ্বিতীয়ত, নুরি আল মালিকি নেতৃত্বাধীন জোটসহ আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল পার্লামেন্টে আস্থাভোট অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকে। অন্তত ৬৩জন প্রতিনিধি ভোট গ্রহণকালে উপস্থিত ছিলেন না। সংসদ অধিবেশনে ৩২৯ জন আইনপ্রণেতা উপস্থিত ছিলেন, এর মধ্যে ২৩৩ জন মোস্তফা কাজেমির মন্ত্রিসভাকে ভোট দিয়েছেন।

তৃতীয়ত গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, মোস্তফা আল কাজেমি ২২ জন মন্ত্রীর প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু এর মধ্যে ১৫জন আস্থাভোটে জয়ী হয়েছেন এবং পাঁচজন প্রয়োজনীয় সমর্থন পাননি। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পোষ্ট অর্থাৎ তেল মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কাকে দেখা হয়ে হবে সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। খুব শিগগিরি এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে এবং এর মাধ্যমেই অচলাবস্থার পুরোপুরি অবসান ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যে ১৫ জন মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন তাদের মধ্যে ৯জন শিয়া, ৫ জন সুন্নি ও একজন কুর্দি রয়েছেন। যারা আস্থা ভোটে জেতেননি তাদের মধ্যে দুজন শিয়া, একজন সুন্নি ও একজন খ্রিস্টানও রয়েছেন। এর আগে আদিল আব্দুল মাহদির মন্ত্রিসভায় যাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তখন তিনি আস্থাভোটে জিততে না পারলেও এবার কাজেমির মন্ত্রিসভায় তিনি আস্থাভোট অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।
চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে কাজেমির প্রস্তাবিত মন্ত্রিসভায় ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোর কোনো প্রতিনিধি নেই। এ কারণে পার্লামেন্টে বসরার একজন প্রতিনিধি এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ইরাকি বাজেটের ৯৫ শতাংশ যোগান আসে বসরা থেকে কিন্তু মন্ত্রিসভায় তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। পার্লামেন্টে বসরার সদস্যরা তেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তাদের ওপর ন্যস্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
সর্বশেষ বিষয়টি হচ্ছে এখনো সাতটি মন্ত্রিত্ব ঝুলে আছে। এ বিষয়টি সুনিশ্চিত করার পর তাদেরেকে আর্থ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার বিষয়ে নজর দিতে হবে। এ কারণে নয়া প্রধানমন্ত্রী কাজেমি বলেছেন, তার কাজ হচ্ছে সংকট সমাধান করা সংকট তৈরি করা নয়। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৭