আর্থিক ক্ষতিপূরণের সৌদি প্রস্তাব নাকচ করল জাউফের গোত্র-প্রধানরা
ইয়েমেনে অব্যাহত সৌদি নৃশংসতা রিয়াদের পরাজয়কেই কি এগিয়ে আনছে?
-
সৌদি জোটের নির্বিচার হামলায় নিহত হচ্ছে নারী ও শিশুসহ ইয়েমেনের বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক
ইয়েমেনের আল-জাউফ এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠানে সৌদি জোটের নির্বিচার বিমান হামলায় বনি নাওফ গোত্রের অন্তত ২৫ জন নিরপরাধ নারী ও শিশু নিহত হয়েছে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
আল-জাউফ প্রদেশটি গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বার বার সৌদি জোটের বিমান হামলার শিকার হয়েছে।
ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর আল-জাউফ প্রদেশটি দখল করে সৌদি জোট। গত পয়লা মার্চ ইয়েমেনের জনপ্রিয় আনাসারুল্লাহ জোট এই প্রদেশটির কেন্দ্রীয় শহর আলহায্ম এবং প্রদেশটির পশ্চিমাঞ্চলের আরও অনেক এলাকা মুক্ত করতে সক্ষম হয়। আর বড় ধরনের এ পরাজয়ের শোধ নেয়া ও এসব অঞ্চল পুনর্দখল করাসহ আরও কয়েকটি কারণে বার বার হামলা চালাচ্ছে সৌদি জোট।
রাজধানী সান্আ সংলগ্ন আল-জাউফ প্রদেশটি ইয়েমেনের চলমান যুদ্ধে কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি মুক্ত রাখা সম্ভব হলে আশপাশের সা'দা, মা'রিব, ওমরান ও হাদরামাউত অঞ্চল মুক্ত করাও সহজ হবে। রবিউল খালি নামক প্রান্তরটিও আল-জাউফ-সংলগ্ন হওয়ায় আনসারুল্লাহর সেনারা খুব সহজেই এ প্রান্তর দিয়ে সৌদি ভূখণ্ডে ঢুকতে পারবে এবং এতে করে ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত আলমাহ্রে প্রদেশের সৌদি বিরোধী গোত্রগুলোর সঙ্গেও সহযোগিতার পথ খুলে যাবে। অন্য কথায় আলহায্ম নিয়ন্ত্রণে রাখা মানে সৌদি ভূখণ্ডের খুব কাছে চলে যাওয়া!
আর এ জন্যই আলজাজিরা টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আনসারুল্লাহ আলহায্ম মুক্ত করায় সৌদি আরব এখন ইয়েমেনিদের হামলার নাগালে চলে এসেছে। তাই এখন ইয়েমেনের ভূখণ্ড নিয়ে নয় বরং সৌদি ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নিয়েই আলোচনায় বসা উচিত রিয়াদের।
সৌদি আরবের সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় আলজাউফ প্রদেশটি চোরাই পথে সৌদি আরবে প্রবেশ ও পণ্য চোরাচালানের রুট হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এখন আনসারুল্লাহ এ প্রদেশটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করলে সৌদি অনুচরদের অবৈধ অর্থ আয়ের এইসব পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
আলজাউফ প্রদেশটির বড় বড় বহু গোত্র আনসারুল্লাহর মিত্র হওয়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে সৌদি জোটের হামলার কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে। এ ঘটনার আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়ার সৌদি প্রস্তাব তারা নাকচ করে দিয়েছে। সৌদি জোট এর আগেও আলজাউফ প্রদেশের বেসামরিক জনগণের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। তাই ইয়েমেনিরা জবাব হিসেবে এ প্রদেশটির প্রায় পুরো অংশ সৌদি অনুচরদের হাত থেকে দখলমুক্ত করেছে। মনে করা হচ্ছে গত বুধবারের এই নতুন হত্যাযজ্ঞের জবাবে ইয়েমেনিরা শিগগিরই মা'আরিব প্রদেশও সৌদি জোটের হাত থেকে মুক্ত করবে।
ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসনে ১৬ হাজার ৬৭২ বেসামরিক ইয়েমেনি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে তিন হাজার ৭৪২ শিশু ও দুই হাজার ৩৬৪ জন নারী।
সৌদি জোটের নির্বিচার বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে ইয়েমেনের প্রায় ৮০ শতাংশ জরুরি বেসামরিক অবকাঠামো যার মধ্যে রয়েছে সড়ক, কোনো কোনো বিমানবন্দর, আবাসিক বাড়ী-ঘর, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, কল-কারখানা, খাদ্য-গুদাম, বাজার, মসজিদ, বিদ্যুৎ ও পানি-সরবরাহ কেন্দ্রের মত জরুরি নানা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। আগ্রাসন ও অবরোধের শিকার ইয়েমেনে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ, মহামারি, ক্ষুধা ও অপুষ্টির মত নানা প্রাণঘাতী সংকট।
ত্রিশ লাখেরও বেশি ইয়েমেনি শিশু স্কুল ও পড়াশুনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে অব্যাহত সৌদি আগ্রাসনের কারণে।
জাতিসংঘসহ নানা সংস্থার হিসাবমতে প্রায় প্রতি মিনিটে মারা যাচ্ছে অপুষ্টি ও কলেরা রোগসহ নানা রোগের শিকার একটি করে শিশু।বাড়ি-ঘরহারা আশ্রয়হীন শরণার্থীর সংখ্যাও হবে অন্তত অর্ধ-কোটি। অন্যায়-অবরোধের শিকার দরিদ্র এই দেশটির প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মানুষ নিয়মিত খাদ্য ও জরুরি ওষুধ পাচ্ছে না।
ইয়েমেনিদের প্রতিরোধ হামলায় নিহত হয়েছে সৌদি জোটের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সেনা-কর্মকর্তাসহ হাজার হাজার সেনা ও তাদের ভাড়াটে অনুচর। ইয়েমেনিদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা সৌদি জোটের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় হয়ে দেখা দিয়েছে। সৌদি জোট চূড়ান্ত পরাজয় ও চরম অসম্মান এড়াতে চাইলে এখনই ইয়েমেনের চোরাবালি থেকে তার বেরিয়ে যাওয়া উচিত বলে সামরিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এর আগে গত শতকের ৭০,৮০ও ৯০’র দশকেও ইয়েমেনের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে পরাজিত হয়েছিল সৌদি আরব ও মিশরসহ বাইরের শক্তিগুলো।
ইয়েমেনে সৌদি আরবের আগ্রাসনে সর্বাত্মক মদদ যোগাচ্ছে দখলদার ইহুদিবাদীইসরাইল,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। সৌদি আরবকে সামরিক,লজিস্টিক, রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা তথ্যসহ সর্বাত্মক সমর্থন, সাহায্য ও সহযোগিতা করছে নব্য-উপনিবেশবাদী এই সরকারগুলো। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।