ইসরাইলে দূতাবাস স্থাপন করল আমিরাত: কৌশলী অবস্থান নিয়েছে সৌদি আরব
সংযুক্ত আরব আমিরাত আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল দখলদার ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে তাদের দূতাবাস উদ্বোধন করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রথম আরব দেশ যে কিনা ২৬ বছর পর ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করল। এর আগে ১৯৯৬ সালে জর্দান 'ওয়াদি চুক্তি'র আওতায় ইসরাইলের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। এরপর গত ২৬ বছরে কোন আরব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করেনি যদিও তাদের অনেকে গোপনে বা পরোক্ষভাবে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
গত প্রায় আট মাস ধরে দখলদার ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলে আসছিল। দু'দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আসা যাওয়া চলছিল। চলতি বছরের ১ মার্চ আমিরাতের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ খাজাকে তেল আবিবে পাঠানো হয়েছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাত এমন সময় তেল আবিবে দূতাবাস উদ্বোধন করলো যখন সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিশেষ করে গাজা যুদ্ধের পর এ অঞ্চলে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে।
সম্প্রতি গাজায় ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে দখলদার ইসরাইলের ১২ দিন ধরে তুমুল যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে ইসরাইল এত বেশি যুদ্ধাপরাধ করেছে যে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছে। ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরাইল ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ করলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত টু শব্দটিও করেননি বরং যুদ্ধ বিরতির আট দিন পর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে তেলআবিবে দূতাবাস উদ্বোধন করল। আমিরাতের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আল খাজা ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালে ইসরাইল থেকে আমিরাতে ফিরে এসেছিলেন কিন্তু যুদ্ধ বিরতির পর আবারও তিনি তেলআবিব ফিরে গেছেন এবং ইসরাইলের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের মাত্রা এত বেশি ছিল যে সৌদি আরবসহ আরো কয়েকটি আরব দেশ ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এমনকি ইসরাইলের সাথে রিয়াদের গোপন সম্পর্ক বজায় থাকলেও এ মুহূর্তে এ সম্পর্ক আরো উন্নয়নের বিষয়টিকে প্রকাশ্যে আনা থেকেও সৌদি আরব বিরত থাকে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে আমিরাত এমন সময় ইসরাইলে দূতাবাস খুলেছে যখন ইসরাইলে ক্ষমতার পালা বদল ঘটতে যাচ্ছে। খুব শিগগিরই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে। অর্থাৎ ইসরাইলে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকাণ্ড থেকে প্রমাণিত হয় এ দেশটি ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্য আরব দেশগুলোর তুলনায় অগ্রগামী এমনকি তারা আরব পরিচিতিকেও আমলে নিচ্ছে না। এর ফলে দেশটির সরকার অভ্যন্তরীণভাবে যেমন ব্যাপক চাপের মুখে পড়বে তেমনি আরব বিশ্বেও তাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে।#
পার্সটুডে/এমআরএইচ/৩১