ফিলিস্তিনি বন্দি বীর গাজানফারের মুক্তি যেসব বার্তা তুলে ধরছে
(last modified Fri, 09 Jul 2021 13:17:09 GMT )
জুলাই ০৯, ২০২১ ১৯:১৭ Asia/Dhaka

গাজানফার আবু আতওয়ান নামের একজন ফিলিস্তিনি যুবক বন্দি ৬৫ দিন ধরে অনশন ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ায় অবশেষে দখলদার ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছে।

ইসরাইলি হানাদার বাহিনী তাকে বিনা কারণে ও বিনা উস্কানিতে গ্রেফতার করে কথিত  বিচার বা তদন্তের মুখোমুখি করা ছাড়াই বার বার তার বন্দিত্বের মেয়াদ কথিত প্রশাসনিক নির্দেশে নবায়ন করছিল। আর এরই প্রতিবাদে মজলুম এই ফিলিস্তিনি অনশন ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

দখলদার ইসরাইলি সেনাদের হাতে গণহারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বেশিরভাগই কোনো কারণ ছাড়াই বন্দি হয়ে আছেন। তাদের ব্যাপারে কোনো সাজানো বা মিথ্যা অভিযোগও দায়ের করতে না পেরে ইসরাইল এইসব বন্দিকে প্রশাসনিক কারণে বন্দি বা প্রশাসনিক বন্দি বলে থাকে! এমন শ্রেণীর বন্দিদের মধ্য থেকে গাজানফার নামের সংগ্রামী ফিলিস্তিনি বন্দি ৬৫ দিন অনশন জিহাদ চালিয়ে গতরাতে (বৃহস্পতিবার) মুক্তি পেয়েছেন।  

বর্ণবাদী হানাদার ইসরাইলি সেনারা গত বছরের অক্টোবর মাসে ২৮ বছর বয়স্ক নিরপরাধ গাজানফারকে আটক করেছিল। তার বন্দিত্বের মেয়াদ দুই পর্যায়ে ছয় মাস করে মোট এক বছর পর্যন্ত নবায়নের নির্দেশ দিয়েছিল জালিম ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। আর এরই প্রতিবাদে গত মে মাস থেকে কারাগারে খাদ্য বর্জন তথা অনশন চালিয়ে আসছিলেন গাজানফার।  

গাজানফারের এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় অন্যায়ের মোকাবেলায় সংগ্রামের পথ কখনও বৃথা যায় না, বরং তা শেষ পর্যন্ত মুক্তি নিয়ে আসে। 

ইসরাইল যে বিনা উস্কানিতে ও বিনা বিচারে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনিকে বন্দি করছে। গাজানফারের এই সংগ্রাম থেকে ইসরাইলের এই মানবতা-বিরোধী নৃশংস চরিত্রও বিশ্ববাসীর কাছে আরও স্পষ্ট হল। 

উল্লেখ্য গাজানফারের প্রতিবাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে দু'টি  ইসরাইলি কারাগারের সব ফিলিস্তিনি বন্দি গতকাল অনশন ধর্মঘট পালন করে যা ফিলিস্তিনিদের সামাজিকতা এবং ঐক্য ও সংহতিও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় আতঙ্কিত ইসরাইলি জেল-জুলুম-কর্তৃপক্ষ গাজানফারকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ফিলিস্তিনিদের ঐক্যের কাছে ইসরাইল যে নতজানু হতে বাধ্য তা আবারও স্পষ্ট হল। 

গাজানফারের এই ঘটনা ফিলিস্তিনি বন্দিদের ব্যাপারে বিশ্ব সমাজের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তার লজ্জাজনক কলঙ্কও তুলে ধরেছে। গাজানফারের আগেও অনেক নিরপরাধ ফিলিস্তিনি বন্দি অনশন ধর্মঘট করেছিল। কিন্তু বিশ্ব সমাজ এসব বন্দির মুক্তি দিতে ইসরাইলের ওপর কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি করেনি। ইসরাইলি কারাগার-নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাতে বিশ্ব সমাজের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি।

ইসরাইলি কারাগারগুলোতে ৪০ জন নারী ও আড়াইশ শিশুসহ প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন বর্তমানে। এদের মধ্যে প্রায় ৫২০ জন কথিত প্রশাসনিক বন্দি তথা বিনা বিচারে বন্দি। ইসরাইলি কারাগারে তাদের মানবেতর অবস্থায় রাখা হয়েছে। বন্দিদের অনেককেই কয়েকবার করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রেখেছে দখলদার ইসরাইল। ৫৪০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি এক বা একাধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শিকার। 

১৯৬৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২২৫ ফিলিস্তিনি ইসরাইলি কারাগারে শহীদ হয়েছেন। তাদের অনেককেই পরিকল্পিতভাবে ও অনেকে চিকিৎসার অভাবে শহীদ হয়েছেন। ফিলিস্তিনি বন্দিদের অনেকেই করোনার শিকার হওয়া সত্ত্বেও ইসরাইল তাদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে না।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/৯