কারবালার মেয়র হত্যাকারীদের গ্রেফতার
গভীর সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা: তবে কী ইরাক ফের বিপদের সম্মুখীন?
ইরাকের পবিত্র কারবালা নগরির প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই শহরের মেয়র আবির সালিম হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। দু'জন সঙ্গী নিয়ে কারবালার মেয়র গত মঙ্গলবার আল মোয়াল্লেমচি এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত পরিচয় সশস্ত্র ব্যক্তিদের গুলিতে আহত হন। এরপর তাকে দ্রুত ইমাম হোসেন(আ.) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু রক্তক্ষরণের ফলে তিনি মারা যান। কারবালা শহরের মেয়র হত্যাকাণ্ডের পর সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বিভিন্ন খবরে জানা গেছে ইরাকে সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলা ও গুপ্তহত্যার ঘটনা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে কিছু বিষয়কে সামনে রেখে ইরাককে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা চলছে। যেমন, ইরাকের রাজধানী বাগদাদে খুব শিগগিরি সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরত, কাতার, মিশর ও জর্দানের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এই সম্মেলনে আঞ্চলিক যৌথ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে। এ ছাড়া ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনও বাগদাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেন বলে কোনো কোনো খবরে বলা হচ্ছে।
এ ছাড়া, ইরাক থেকে মার্কিন সেনা বহিস্কারের বিষয়টি সম্প্রতি সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের কুদস ব্রিগেডের প্রধান জেনারেল সোলাইমানি শহীদ হওয়ার পর ইরাকের সংসদে সর্বসম্মতভাবে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয় যাতে সেদেশ থেকে মার্কিন সেনাদের চলে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই আইন বাস্তবায়িত হয়নি। ইরাকের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সংসদে পাশ হওয়া ওই প্রস্তাব বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে।
অন্যদিকে, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল কাজেমি সম্প্রতি ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। ওই সাক্ষাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের দায়িত্ব সমাপ্তির কথা জানিয়ে বলেছেন, চলতি বছর শেষ নাগাদ ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। তবে ইরাকি সেনাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য কিছু সামরিক উপদেষ্টা ও মার্কিন ঠিকাদাররা ইরাকে থেকে যাবে বলে বাইডেন জানান। তার এ বক্তব্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন সরকার এখনো ইরাকে তাদের উপস্থিতি ধরে রাখার চেষ্টা করছে। এসব কারণে সম্প্রতি ইরাকে ফের সহিংসতা ও যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সেগুলোকে পুজি করে ইরাকে মার্কিন সেনা উপস্থিতি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া আগামী ১০ অক্টোবর ইরাকে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ কারণে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, ইরাকে যতই নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে ততই সহিংসতার মাত্রা বাড়তে পারে। কেননা ইরাকের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলো একদিকে সংসদে পাশ হওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী সেদেশ থেকে মার্কিন সেনা বহিস্কারের দাবি জানাচ্ছে অন্যদিকে মার্কিন সরকারও সহিংসতার মতো কোনো না কোনো অজুহাতে ইরাক সরকারকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করছে যে ইরাকে তাদের উপস্থিতির প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া মার্কিন মদদপুষ্ট কোনো কোনো মহল জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে উস্কানি দিয়ে তাদের লক্ষ্য হাসিলে চেষ্টা করছে। ঠিক এমনই এক অবস্থায় কারবালা শহরের প্রধান মেয়র হত্যাকারীদের গ্রেফতারের খবর দিলেন। এ অবস্থায় আগামী দিনগুলোতে ইরাকের পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটাই এখন দেখার বিষয়। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১২