বিপদে এগিয়ে আসায় ইরানের ভূঁয়সী প্রশংসা করলেন নিকোলাস মাদুরো
(last modified Sun, 12 Jun 2022 12:58:31 GMT )
জুন ১২, ২০২২ ১৮:৫৮ Asia/Dhaka

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, ইরান ও ভেনিজুয়েলার সফল অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে আমেরিকার ক্রমাগত চাপের বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে প্রতিরোধ করা।

শনিবার বিকেলে ইরান সফররত ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে এক বৈঠকে আমেরিকার ‘কঠিন চাপ ও হাইব্রিড যুদ্ধের’ মোকাবিলায় ইরান ও ভেনিজুয়েলার প্রতিরোধের প্রতি ইঙ্গিত করে সর্বোচ্চ নেতা  এ মন্তব্য করেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বিগত বছরগুলোতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে তার দেশের অভূতপূর্ব উন্নতির কথা উল্লেখ করে বলেন, এমন এক সময় এ উন্নতি সম্ভব হয়েছে যখন ইরানের ওপর আমেরিকার সবচেয়ে কঠিন নিষেধাজ্ঞা ও প্রচণ্ডতম চাপ বহাল রয়েছে। তিনি বলেন, মার্কিনীরা নিজেরাই এই চাপের নাম দিয়েছে ‘সর্বোচ্চ চাপ’। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, ইরানি জনগণের প্রতিরোধের কারণে আমেরিকার ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের’ নীতি ব্যর্থ হয়েছে; এমনকি আমেরিকার একজন রাজনৈতিক নেতা সম্প্রতি আমেরিকার এই ব্যর্থতাকে ‘অপমানজনক ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করেছেন।

সাম্প্রতিক কয়েক দশক ধরে ইরান এবং ভেনিজুয়েলার বলদর্পীতা বিরোধী নীতি এবং মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধের রুখে দাড়ানার কারণে দেশদুটি সবসময় একতরফা এবং মার্কিন দ্বিপাক্ষিক নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়ে আসছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের শাসনামলে  ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পর তেহরানে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে গুপ্তচর আটকের পর ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু হয়। ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির অজুহাতে ২০০০ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞাগুলো কার্যকর হয়। যাইহোক ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ এবং নজীরবিহীন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়ার অংশ হিসেবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকাকে প্রত্যাহার করে নেন। এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের লক্ষ্য ছিল আমেরিকার অন্যায় এবং অবৈধ দাবির কাছে তেহরানকে নত স্বীকারে বাধ্য করা। তবে তেহরানের ওপর আমেরিকার সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি আমেরিকার রাজনীতিবিদ এবং কর্মকর্তারা এ বিষয়টি স্বীকার করছেন। ডেমোক্রেট সিনেটর ক্রিস মারফি স্বীকার করেছেন যে ইরানের উপর মার্কিন সর্বোচ্চ  চাপ ওয়াশিংটনের জন্য কোনো অর্জন বয়ে আনে নি এবং এটি নিস্ফল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে মারফি এক টুইটার বার্তায় লেখেন যে ইরানের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি থেকে আমেরিকা কিছুই পায় নি। ২০২২ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান স্বীকার করেছিলেন যে পরমাণু সমঝোতা বিষয়ে ট্রাম্পের বিপর্যয়কর ভুলের জন্য ওয়াশিংটনকে এখন মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এন্তোনি ব্লিংকেনও সুলিভানের মতো স্বীকার করেছেন যে পরমাণু সমঝোতা থেকে বের হয়ে যাওয়া আমেরিকার কৌশলগত ভুল। 

ভেনিজুয়েলার ক্ষেত্রে দেশটির প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হোগো শাভেজ ক্ষমতায় অভিষেক হওয়ার পর থেকে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে আমেরিকা কারাকাসের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে ভেনিজুয়েলা তার মিত্রদেশগুলো বিশেষ করে ইরানের সহযোগিতায় মার্কিন ধ্বংসাত্বক কর্মকাণ্ড ব্যর্থ করে দেয়ার পাশাপাশি কারাকাসকে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার ওয়াশিংটনের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে নিকোলাস মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভেনিজুয়েলা জাতির কঠিন সংগ্রামে ইরানের সমর্থনের প্রশংসা করে বলেছেন: "আপনারা আমাদের সাহায্যে এসেছিলেন যখন ভেনিজুয়েলার পরিস্থিতি খুব কঠিন ছিল এবং কোনো দেশ আমাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছিল না এবং আপনি আমাদেরকে সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছিলেন।  

পরিশেষে ইরানে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সফরের মধ্য দিয়ে মার্কিন ষড়যন্ত্র এবং চাপ মোকাবেলায়  দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিত  এবং সম্পর্কের নতুন জানালা উন্মোচিত হয়েছে বলে বিষেশজ্ঞরা মনে করছেন।  

পার্সটুড/ বাবুল আখতার/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।