কোরআনে আগুন: মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রশ্রয় দেয়ার নামে সুইডিশ সরকারের দ্বিমুুখী আচরণ
গত শনিবার সুইডিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী টোবিয়াস বিলস্ট্রোম তার টুইটার পেইজে এক বার্তায় স্টকহোমে পবিত্র কোরআন অবমাননার বিষয়ে বিভিন্ন দেশে সমালোচনার যে ঝড় উঠেছে সে সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বিলস্ট্রোম তার টুইট বার্তায় বলেছেন, ইসলাম বিরোধী উস্কানি একটি ভয়ঙ্কর বিষয়। তবে সুইডেন মতপ্রকাশের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে, তবে এর অর্থ এই নয় যে সুইডিশ সরকার বা আমি তাদের এসব প্রতিক্রিয়াগুলোকে অনুমোদন করি।" ফলে এটা বোঝা যাচ্ছে যে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় সুইডিশ সরকার দ্বিমুখী অবস্থান গ্রহণ করেছে।
শনিবার সুইডেনে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে ৪০ বছর বয়স্ক ‘রাসমুস পালুদান’ নামের এক চরম ডানপন্থী পবিত্র কোরআনের কপিতে আগুন ধরিয়ে দেন। রাসমাস পালুদান একজন ডেনিশ-সুইডিশ রাজনীতিবিদ এবং আইনজীবী এবং ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত অতি-ডান পন্থি গোষ্ঠী "হার্ড লাইন" এর নেতা। পালোদান ২০২০ সালে সুইডিশ নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। তিনি ইসলাম বিদ্বেষী এবং অভিবাসী বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত। আইন ভঙ্গ করার জন্য ডেনমার্কে এই ব্যক্তিকে বহুবার বিচার করা হয়েছে। এখন সে সুইডেনের বিভিন্ন শহরে কোরআন পোড়ানো শুরু করেছে।
তিনি প্রতিটি শহরে মুসলিম অভিবাসীদের পাড়ায় যান এবং কোরান পোড়ান। এর ফলে অভিবাসী মুসলমানদের বিক্ষোভ এবং তাদের সহিংস প্রতিক্রিয়ার ফলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের দিকে মোড় নিচ্ছে। পালুদান এর আগে "মুসলিমরা ডেনমার্ক ছাড়ো" এবং "ডেনমার্কে ইসলামের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হউক" স্লোগান দিয়ে ডেনমার্কের ২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কিন্তু তিনি পরাজিত হন। সে সময় তিনি বলেছিলেন যে সুইডেনের নাগরিকত্ব পাওয়ার পর তিনি সুইডেনে তার অনেক কার্যক্রম চালাতে পারবেন বলে আশা করছেন। ২০২০ সালে এই চরম ডানপন্থি কর্মী সুইডেনের মালমোতে পবিত্র কোরআনের একটি অনুলিপিতেও আগুন দিয়েছিল যা ব্যাপক সহিংস সংঘর্ষ এবং বিক্ষোভের দিকে পরিচালিত করেছিল।
সুইডেনে তুর্কি দূতাবাসের সামনে এই চরম ডানপন্থী কর্তৃক পবিত্র কোরআন পোড়ানোর পর ইসলামি দেশগুলো সম্মিলিতভাবে এই অবমাননাকর ও ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি ইউরোপীয় দেশগুলোতে পবিত্র কোরআনের অব্যাহত অবমাননার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, "দুর্ভাগ্যবশত, কিছু ইউরোপীয় দেশ অতীতের মতোই পবিত্র কোরআন অবমাননা করছে। বাকস্বাধীনতাকে সমর্থন করার মিথ্যা অজুহাতে কিছু দেশ চরমপন্থিদের নানাভাবে আসকারা দিচ্ছে।” তারা ইসলামের পবিত্রতা ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর পথকে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে এবং মানবাধিকারের সুন্দর স্লোগান সত্ত্বেও তারা তাদের সমাজে ইসলামবিরোধীতা ও ইসলামফোবিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া চেষ্টা করছে। .
এদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসউগ্লু কোরান পোড়ানোর অনুমতি দেওয়ার জন্য সুইডেনের সমালোচনা করে বলেছেন যে বর্ণবাদ এবং বিদ্বেষকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলে বিবেচনা করা যায় না। তিনি বলেন, আজ তারা অন্য বই পোড়ানোর অনুমতি দেয় না, কিন্তু যখন এটি ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরান এবং ইসলামের প্রতি শত্রুতার কথা আসে, তখন তারা এই বিষয়টিকে বাক স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলে চালিয়ে দিচ্ছে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করার বিষয় যে কেবল ইসলামিক দেশই নয় খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে রাশিয়াও এই আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক সংস্থায় রাশিয়ার প্রতিনিধি মিখাইল উলিয়ানভ স্টকহোমে তুর্কি দূতাবাসের সামনে কোরান পোড়ানোর সাম্প্রতিক ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
ইউরোপের দেশগুলোতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলাম বিরোধীতা ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রবণতা বাড়ছে। চরম ডানপন্থী আন্দোলন, দল ও ব্যক্তিবর্গের উত্থান ও ক্রমবর্ধমান ভূমিকা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
পার্সটুডে এমবিএ/ ২৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।