জুন ২৫, ২০২৩ ১৯:৫২ Asia/Dhaka
  • মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের বিষয়ে তালেবান সরকারের টালবাহানার নেপথ্যে

আফগানিস্তানে ষষ্ঠ শ্রেণীর উপরে মেয়েদের শিক্ষা স্থগিত করা এবং তাদের স্কুল বন্ধের কারণ জানিয়েছেন তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ।

তিনি বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যপুস্তকে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে তাই তাদের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। জবিউল্লাহ মুজাহিদ আরো বলেছেন, এর আগের শিক্ষা কার্যক্রম পশ্চিমা দেশ  থেকে এসেছে এবং পশ্চিমারা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।

যদিও মুজাহিদের বক্তব্যকে ষষ্ঠ শ্রেণির উপরে মেয়েদের শিক্ষা বন্ধ করার জন্য তালেবানের সরকারি যুক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তবে আফগান সমাজের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলও এটি গ্রহণ করবে বলে মনে হয় না। কারণ আগের সরকারের পাঠ্যপুস্তকগুলোও সরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ানো হতো এবং আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী সমাজেই সেগুলো পড়ানো হতো। আর এসব পাঠ্যপুস্তকে আফগান সরকারের জন্য স্পর্ষকাতর এবং ধর্ম বিরোধী বিষয়গুলো পড়ানো হতো বলে মনে হয় না। যদি এমনটি হতো তাহলে আফগানিস্তানের আলেম সমাজ এবং মুসলিম ব্যক্তিত্বরা তাতে আপত্তি জানাতেন।

 এ বিষয়ে  রাজনৈতিক বিষয়ের বিশেষজ্ঞ মলভী মাফলে বলেছেন, অবশ্যই মেয়েদের পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে তালেবানদের  সংবেদনশী আচরণ এবং তাদের চিন্তা চেতনা আফগান সমাজে একটি সুস্থ ধারার প্রজন্ম তৈরিতে মেয়েদের শিক্ষার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে তালেবান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কি গত গ্রীষ্মের দীর্ঘকালীন ছুটিতে মেয়েদের জন্য একটি উপযুক্ত সিলেবাস পুনর্মুদ্রণ এবং সংশোধন করতে পারে নি? তালেবান মুখপাত্রের বক্তব্য এমন যে আমরা বলিনি যে মেয়েদের শিক্ষা নিষিদ্ধ বা আমরা তাদের পড়াশোনা করতে দিচ্ছি না। আসলে তালেবান সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কমানোর লক্ষ্যে জবিউল্লাহ মুজাহিদ এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলা হয়েছে যে যতক্ষণ না তালেবান সরকার নারীদের অধিকারকে সম্মান না করবে  ততক্ষণ পর্যন্ত আফগানিস্তানের উপর তালেবান সরকারের সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পাবে না। মনে করা হচ্ছে যে নিরাপত্তা পরিষদে এই অবস্থান তালেবানের জন্য একটি আঘাত।

কারণ আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্বের ওপর স্বীকৃতি পেতে তালেবান সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। যদিও তালেবানরা এর আগে মেয়েদের শিক্ষা স্থগিত করার বিষয়টিকে তাদের আদালত বা আইনের বিষয় বলে দাবি করেছিল। এখানে উল্লেখ করা খুবই প্রয়োজন যে ইসলাম ধর্ম মেয়েদের শিক্ষা অর্জনের অধিকারকে তো কখনোই অস্বীকার করে নি বরং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে নারীদের অংশ গ্রহণ এবং পারিবারিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে তাদের ভূমিকার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এই কারণে, ইসলামিক পণ্ডিতদের মধ্যে কেউই মেয়েদের শিক্ষা অর্জনের বিষয়ে তালেবানের দৃষ্টিভঙ্গি অনুমোদন করেননি।

আফগানিস্তানের রাজনৈতিক বিষয়ের বিশেষজ্ঞ আসাদুল্লাহ জাইরি বলেছেন, "প্রগতি ও উন্নয়নের বর্তমান যুগে কেউ এমনকি আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী সমাজও মেয়েদের শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞাকে মেনে নেবে না। কারণ আফগানিস্তানের চিকিৎসা ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন তো আছেই। এছাড়া শিক্ষিত নারীরা সন্তান লালন-পালনে এবং আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত ও উন্নয়নশীল প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে তারা খুবই কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে পারে।

পার্সটুডে/বাবুল আখতার/২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ