পাকিস্তানের দাবি তালেবানের প্রত্যাখ্যাত
সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে তালেবানের সাথে পাকিস্তান সরকারের উত্তেজনা বাড়ছে
তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তালেবানের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে।
পাকিস্তান সরকার সেদেশের স্বার্থ রক্ষা এবং বিরাজমান হুমকি রোধে আফগানিস্তান সরকারের দায়িত্ব রয়েছে বলে তালেবান সরকারকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দেয়ার পর তালেবান সেনাবাহিনীর প্রধান কারি ফাসিহউদ্দিন বলেছেন, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান গ্রুপ বা টিটিপি'র কোনো কার্যক্রম আফগানিস্তানে নেই এবং পাকিস্তান সরকারের উচিত নিজ দেশের ভেতরেই তাদের শত্রুর অনুসন্ধান করা।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তালেবান কর্তৃপক্ষের এমন প্রতিক্রিয়া পাকিস্তান সরকারের জন্য মোটেও সুখকর নয়, তারপরও তালেবানরা পাকিস্তান ভিত্তিক তেহরিক-ই-তালেবানকে গুরুত্ব সহকারে মোকাবেলা করবে এবং পাকিস্তানের লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করার জন্য আফগান মাটি ব্যবহার করা থেকে তাদেরকে বিরত রাখবে বলে ইসলামাবাদ আশা করে। ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোজতবা হায়দার এ ব্যাপারে বলেছেন, 'পাকিস্তান হয়তো এটা কখনো ভাবতে পারেনি, যে তালেবানকে বলা হয় পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসএর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাত এবং তালেবানকে তারাই সৃষ্টি করেছে একদিন সেই তালেবানই ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াবে এবং হুমকি দেবে-যা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য ভালো কোনো বার্তা নয়। কেননা তারা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিরুদ্ধে গত কয়েক দশক ধরে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। আর সেই পাকিস্তানকে নিজের হাতে সৃষ্ট তালেবান হুমকির ভাষায় কথা বলে।'
অবশ্য আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপস্থিতি অব্যাহত থাকায় শুধু যে পাকিস্তান উদ্বিগ্ন তা নয়, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদও সাম্প্রতিক বৈঠকে আফগানিস্তানে উগ্র দায়েশ বা আইএস জঙ্গি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এছাড়া, অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোও আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যকলাপের জন্য একটি নিরাপদ স্থান বলে মনে করে যারা কিনা প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রায়ই হামলা চালায়। তবে, তালেবানের দাবি, আফগানিস্তানের ভূমি প্রতিবেশী কোনো দেশের জন্য হুমকি নয় এবং আফগানিস্তান একটি নিরাপদ দেশ।
যাইহোক, পাকিস্তানসহ আফগানিস্তানের অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলো মনে করে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া তালেবান সরকারের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আকরাম আরেফি বলেছেন, 'তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান টিটিপি'র বিষয়ে তালেবান এবং পাকিস্তান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। তালেবানের দৃষ্টিতে টিটিপির সদস্যরা যখন আফগানিস্তানে অবস্থান করে তখন তারা মেহমান হিসাবে থাকে যা কিনা উপজাতিদের একটি প্রাচীন রেওয়াজ। কিন্তু পাক সরকারের দৃষ্টিতে টিটিপি একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং আফগানিস্তানে অবস্থান করে তারা পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে'।
যাইহোক, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর উপর সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় বহু সংখ্যক সেনা সদস্য হতাহত হওয়ার ঘটনায় তালেবানদের ব্যাপারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। যদিও পাকিস্তান সেনাবাহিনী এখনও তেহরিক-ই-তালেবানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আফগানিস্তানের মাটিতে হামলা চালানোর হুমকি বাস্তবায়ন করেনি কিন্তু তবে মনে হচ্ছে তালেবান এটাকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে আর সে কারণে তারা পাকিস্তানকে পাল্টা হুমকি দিয়ে রেখেছে। এ কারণে তালেবান ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে যা কিনা আগামীতে এ অঞ্চলকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।