পশ্চিমারা এরকম চীনকেই পছন্দ করে
চীনে প্রাচীনকাল থেকে আফিম একটি ঔষধি ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হতো
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চীনের সাথে বাণিজ্য করার সময় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে তারা রূপার পরিবর্তে সম্ভবত এই পদার্থটি চীনাদের দিতে সক্ষম হবে। কারণ প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহারের বাইরে আফিম চীনে অবৈধ ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চীনা সম্রাটকে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য না করতে স্বাধীন কোম্পানিগুলোকে আফিম ব্যবসার কাজে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যবহার করেছিল। এভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চীনে আফিম পাচারের দুর্নাম থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা চালিয়েছিল।
১৮২০ থেকে ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে চীনে প্রেরিত আফিমের পরিমাণ ৩ গুণ বৃদ্ধি পায়। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে এর পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৫০০ টনে পৌঁছায়।
আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের শুরুর বছরগুলোতে ব্রিটেন তামাক নামক আরেকটি ভেষজ মাদক ব্যবহার করেছিল। তারা তখন বুঝতে পেরেছিল যে চীনা জনগণকে আসক্ত করার মাধ্যমে বশীভূত করার হাতিয়ার হিসাবে পপি নামক আরেকটি উদ্ভিদ ব্যবহার করা যেতে পারে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৪ থেকে ১২ মিলিয়ন চীনা জনগণ আফিমে আসক্ত হয়ে পড়েছিল।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে চীনারা আফিম বাণিজ্যের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর ব্রিটেন ১৮৩৯ সালে চীনের সাথে যুদ্ধে নামে। কেননা আফিম ব্যবসায় ব্রিটেনের বৃহৎ স্বার্থ ছিল। সেই যুদ্ধটি প্রথম আফিম যুদ্ধ নামে পরিচিত। ওই যুদ্ধে ব্রিটেনের জয়ের ফলে চীনে আফিম আমদানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ব্রিটিশ সৈন্যরা চীনে শস্য আমদানির জন্য গ্রেট ক্যানেল বন্ধ করে দেয়। এর ফলে বেইজিং দুর্ভিক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয় এবং চীনের সম্রাট দাওগুয়াং ব্রিটেনের সাথে আপস করতে বাধ্য হয়। নানজিং এর পুনরুদ্ধার তার জন্য অপমানজনক ছিল কারণ চীনকে এর আগে বাজেয়াপ্ত করা আফিমের জন্য বিশাল ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল।
১৮৫৭ সালের ৩ মার্চ ব্রিটেন এবং ফ্রান্স চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধ শুরু হয়। ওই যুদ্ধ ১৮৬০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে এবং চীনের সামরিক পরাজয় ঘটে। এই যুদ্ধের সময় অন্যান্য বিশ্বশক্তিও ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের সঙ্গে যোগ দেয়।
দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধের চূড়ান্ত চুক্তি অনুসারে সামরিক শক্তিতে দুর্বল তৎকালীন চীনা সরকার তাদের সঙ্গে ব্রিটিশ আফিম ব্যবসাকে বৈধতা দিতে সম্মত হয়েছিল। যার ফলে চীনা জনগণের মাদকাসক্তির মাত্র আরও বেড়ে গিয়েছিল।
চুক্তি অনুসারে চীন সরকার তাদের বন্দরগুলোকে তৎকালীন পরাশক্তিগুলোর জন্য শুল্কমুক্তভাবে উন্মুক্ত করে দিতে বাধ্য হয়েছিল। "দক্ষ এবং সস্তা" চীনা শ্রমিকদের উত্তর আমেরিকায় (কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং ঔপনিবেশিক শক্তির অধিকারী দেশগুলোতে অভিবাসনে বাধা না দিতে সম্মত হতে বাধ্য হয়েছিল। বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের যুদ্ধজাহাজ চীনের বন্দরে প্রবেশাধিকার পেয়েছিল। সেইসঙ্গে খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তকদের কার্যকলাপকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না এবং যে কোনো চুক্তি ইংরেজিতে লেখা হবে।
ব্রিটিশ আফিম ব্যবসায়ী উইলিয়াম জার্ডিন সে সময় বলেছিলেন: আমি যতদূর জানি, আফিম ব্যবসা হল সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সম্মানজনক ব্যবসা। যে ব্যবসায় একজন ভদ্রলোক নিশ্চিন্তে জড়িত হতে পারে।"
নিম্নে এ বিষয়ক ছবিগুলো দ্রষ্টব্য:
পার্সটুডে/এনএম/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।