এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ২১:০৬ Asia/Dhaka
  • কেনো আমেরিকা এবং পশ্চিমারা তাদের সমস্ত কৃতিত্ব ইসরাইলের জন্য উৎসর্গ করে?

ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থনের অন্যতম প্রধান কারণ হল পশ্চিম এশিয়ায় অধিকৃত ফিলিস্তিনের ভৌগোলিক অবস্থান কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হওয়ায়।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে এবং এখনো তেল আবিব শাসক গোষ্ঠী পশ্চিমা ও মার্কিনীদের অন্ধ সমর্থন নিয়ে গাজা এবং এর বাইরে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে।

ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে এটা দেখা যায় যে ১৯৪৮ সালে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইসরাইল রাষ্ট্র অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে আমেরিকার সমর্থন পেয়ে আসছে। এই সমর্থন বহুকাল ধরে অব্যাহত রয়েছে এবং এর জন্য বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এর ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৪৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরাইলকে দেয়া মোট মার্কিন সহায়তার পরিমান আনুমানিক ২৬০ বিলিয়ন ডলার।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ২০২১ অর্থবছরের (অক্টোবর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে) ইসরাইলের জন্য ৩.৩  বিলিয়ন ডলার বিদেশি সামরিক-আর্থিক সহায়তা (মোট বৈদেশিক সামরিক-আর্থিক সহায়তার ৫৯% এর সমতুল্য) অনুরোধ করেছিল। যার অর্থ এই দাড়ায় যে ইসরাইল অন্যান্য দেশ থেকে মোট যে পরিমাণ আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল মার্কিন সাহায্যের পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি ছিল।  

এছাড়াও, ওবামা প্রশাসনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে তৃতীয় মেয়াদে ১০ বছরের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিল যার অধীনে ওয়াশিংটন ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তেল আবিব সরকারকে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক-আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়  ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার মোহসেন রেজাই সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে আধিপত্যবাদী সরকারগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন।

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের সাবেক কমান্ডার মোহসেন রেজাই

রেজাই মনে করেন যে পশ্চিমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামের আদর্শকে মোকাবেলা করা যার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে স্বৈরাচারের বিরোধিতা করা এবং নিপীড়িতদের সমর্থন করা। এই বিষয়ে পশ্চিমের নীতি পদ্ধতিকে 'হাতুড়ি ও কামারের নেহাই ( কামারশালার যে লোহার ওপরে রেখে গরম লোহা পেটানো হর্য়)' হিসেবে তুলনা করেছেন। তিনি ইসরাইলকে হাতুড়ি হিসাবে এবং পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে পশ্চিমা অনুসারী সররকারগুলোকে নেহাই হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ঔপনিবেশবাদী পশ্চিমাদের লক্ষ্য এই দুটি উপায়ের মাধ্যমে এই অঞ্চলে ইসলামি জাতিগুলোর  প্রতিরোধকে নির্মূল করা। অতএব, প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল ইসলামকে প্রতিরোধ করা।

রেজাইয়ের মতে, পশ্চিমাদের দ্বিতীয় লক্ষ্য হল পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে তেল সম্পদের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। পাশ্চাত্যের নীতি হচ্ছে পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইল টিকিয়ে রেখে এই অঞ্চলকে চিরকাল অস্থিতিশীল ও অনিরাপদ করে রাখা যাতে আঞ্চলিক দেশগুলোর উন্নয়ন ও শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এ অঞ্চলের শিল্পের জন্য তেল ব্যবহার করতে সক্ষম না হওয়ার জন্য পাশ্চাত্যের লক্ষ্য হচ্ছে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে অনিরাপদ এবং অনুন্নত করে রাখা। কারণ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো শিল্পায়ন করলে এই অঞ্চল থেকে আর তেল রপ্তানি হবে না এবং সমস্ত তেল পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোই ব্যবহার করবে। উদাহরণ স্বরূপ, তেল রপ্তানিকারক হিসেবে ইরানের শিল্প সম্পূর্ণ স্বনির্ভর হয়ে গেলে দেশটিকে এক মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করতে হবে

ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর প্রতি পশ্চিমা সমর্থনের তৃতীয় উদ্দেশ্য হল পশ্চিম এশিয়ায় অধিকৃত ফিলিস্তিনের ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগানো এবং পূর্ব ও পশ্চিমের জন্য সেতু ও প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত রাখা। এই অঞ্চলটি চীন এবং রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি যোগাযোগ এবং অনুপ্রবেশ সেতু হিসাবে কাজ করে এবং পশ্চিমা স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য ইসরাইল এই অঞ্চলে পশ্চিমের জন্য একটি সামরিক ও অর্থনৈতিক ঘাঁটি হিসাবে কাজ করতে পারে।

রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের মন্তব্য

এই প্রসঙ্গে ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী "রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র"র মন্তব্যের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে তিনি ইসরাইলের প্রতি মার্কিন ও পশ্চিমা সমর্থনের আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিয়েছেন।

রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র

ভিডিওতে কেনেডি বলেছেন: "ইসরাইল আমাদের জন্য একটি প্রতিরোধী দেয়াল . এটি প্রায় মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের একটি বিমানবাহী রণতরী থাকার মতো। এটি আমাদের অনেক পুরনো মিত্র। যদি ইসরাইল না থাকে তা হলে রাশিয়া, চীন এবং ব্রিক্স দেশগুলো বিশ্বের তেলের বাজার ৯০% নিয়ন্ত্রণ করবে। আর এমনটি হলে এটি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য চরম বিপর্যয়কর হবে।"#

পার্সটুডে/এমবিএ/১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

ট্যাগ