এপ্রিল ২২, ২০২৪ ১৪:০৯ Asia/Dhaka
  • আমেরিকার সমালোচনাকারী গণমাধ্যমগুলোকে অচল করার মার্কিন নয়া পরিকল্পনা
    আমেরিকার সমালোচনাকারী গণমাধ্যমগুলোকে অচল করার মার্কিন নয়া পরিকল্পনা

হতে পারে আপনি গুগল ক্রোমের মাধ্যমে কোনো সংবাদ বা রাজনৈতিক বিষয়ক সাইটে প্রবেশ করেছেন এবং নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে গুগল ক্রোম আপনাকে ব্লক করেছে। এই পরিস্থিতির আগামীতে আরো অবনতি হবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট সংক্ষেপে ইউএস এইড একটি নথি উপস্থাপন করেছে যার লক্ষ্য হচ্ছে, গণমাধ্যমগুলোর ওপর সেন্সরশিপ বাড়ানো এবং দেশের সরকারের স্বার্থের পরিপন্থী তথ্য প্রকাশ করা প্রতিরোধ করা।

যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএস এইড উত্থাপিত নথিতে বোঝা যায় কীভাবে সরকার প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম, মিডিয়া সংস্থা এবং বিজ্ঞাপনদাতাদেরকে উৎসাহিত করছে যাতে তারা একে অপরের সহযোগিতায় ইন্টারনেটের একটি বড় অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও সেন্সরশীপ আরোপ করতে পারে।

ধারণা করা হচ্ছে, ইউএস এইড-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা মার্কিন সরকারের নীতির জন্য বিরাট চ্যালঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করে মার্কিন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে, তারা যাতে অনলাইন থেকে কোনো ধরণের তথ্য সংগ্রহ করতে না পারে সেজন্য চেষ্টা করা।  

নথিতে ভিডিও গেম এবং অনলাইন মেসেজিং এর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে বলা হয়েছে, যাতে মার্কিন নীতির বিরোধী গণমাধ্যমের কর্মীদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়। পরিকল্পনা অনুসারে, অন্য দেশের সরকারগুলোকে অবশ্যই বিজ্ঞাপনদাতাদের সাথে সহযোগিতা করতে হবে যাতে যেসব সংস্থা মার্কিন সরকারের অনুগত নয় তাদেরকে তথ্যশূন্য ও অচল করে দেয়া যায়। মোটকথা, তারা বেলিংক্যাট, গ্রাফিকা ও আটলান্টিক কাউন্সিলের মতো সরকারের পৃষ্ঠপোষক সংস্থাগুলোকে তাদের ভাষায় ভুল ও মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অগ্রনায়ক হিসাবে তুলে ধরতে চায়।

নথিতে অনলাইন গেমার এবং ভিডিও গেমগুলোর দিকেও নজর দেয়া হয়েছে এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর মতোই তাদের উপরও নজরদারি করার কথা বলেছে। কেননা ইউএস এইডের নথির সমর্থকরা মনে করেন সমালোচকরা টুইচের মতো গেমিং প্ল্যাটফর্মেও ভুল তথ্য ছড়াতে পারে। গেম সরাসরি সম্প্রচার বা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের জন্য পরিচিত টুইচ প্ল্যাটফর্ম। এটি গেমারদের জন্য পরিচিত সাইট হলেও টুইচে পারফরম্যান্স রেকর্ড করে শেয়ারের সুযোগ রয়েছে। গেম বাদে অন্যান্য ভিডিও আপলোড করারও সুযোগ রয়েছে এখানে। এটি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম প্ল্যাটফর্ম এবং যদিও সূচনালগ্ন থেকে এটি ভিডিও গেম এবং গেমারদেই কেবল গুরুত্ব দিত, কিন্তু কালক্রমে এটি সঙ্গীত, খেলাধুলা, জীবনধারা, বিপণন ইত্যাদির মতো অন্যান্য সেক্টরের উপরও জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছে এবং তথ্য সরবরাহে এর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া, খুবই সীমিত সংখ্যক মানুষকে এই প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকায় এর প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।

 গুগল ক্রোম এবং গুগল সার্চ ইঞ্জিন আমেরিকার বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক বক্তব্য কম দৃশ্যমান হতে ভূমিকা পালন করে

ভুল তথ্য নাকি তিক্ত বাস্তবতা?

যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএস এইড দাবি করেছে যে তারা 'ভুল তথ্য' ছাড়ানো প্রতিহত করা ছাড়াও ক্ষতিকর তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায়। ক্ষতিকারক তথ্য এমন একটি বিষয় যা সত্য হলেও তা যদি মার্কিন নীতি ও স্বার্থের বিরোধী হয় তাবে তা প্রতিহত করা হবে। তাই অনেক তথ্য সত্য হলেও আমেরিকা সেসবকে সেন্সর করতে চায়। ইউএস এইড সংস্থাটি মনে করে যে, স্বাধীন মিডিয়া এবং মুক্ত সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোর দেয়া বিভিন্ন তথ্য, মতামত এবং ভারসাম্যপূর্ণ ঘটনাবিলীর বর্ণনা অনেক সময় মার্কিন সরকারের প্রতি সমালোচার মাত্রাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা 'ইউএস এইড' সংস্থাটির প্রতিবেদনে, রেডিট (Reddit), ডিসকোর্ট (Discord) এবং চ্যান ফোর (Chan4)-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে আমেরিকার বিরুদ্ধে 'ষড়যন্ত্রমূলক ওয়েবসাইট' হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে যা তাদের দৃষ্টিতে এই সাইটগুলো যারা মার্কিন শাসন ও নীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তাদেরকে সাহায্য করতে পারে। তাই গেম ওয়েবসাইটগুলোর মতো এইসব প্ল্যাটফর্মগুলোকেও অবশ্যই মোকাবেলো করা উচিত।

গত এক দশক ধরে, মার্কিন সরকারি সংস্থাগুলো তাদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে এমন ভিন্ন মতাদর্শের মিডিয়ার কার্যক্রম প্রতিহত করার জন্য সিলিকন ভ্যালি কোম্পানিগুলোর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে যা ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রমাণ।

বিরোধী পক্ষকে সম্মানহানী করা 

স্বাধীন মিডিয়াকে দমন করার জন্য 'ইউএস এইড'-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগুলোর মধ্যে একটি হল প্রোপাগান্ডার লক্ষ্যে নিজস্ব গণমাধ্যমগুলো ও প্রচারকারীদেরকে সর্বাত্মক সাহায্য সমর্থন করা এবং মার্কিন নীতির বিরোধী এমন গণমাধ্যমগুলোর আর্ধিক যোগানের সমস্ত পথ বন্ধ করে দেয়া। এই সংগঠনের আরেকটি পদ্ধতি বা কৌশল হল প্রতিপক্ষের কৃতিত্ব ও সুনামকে অসম্মানিত করা এবং তাদের কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাতে মার্কিন সরকার বিরোধী ওই মিডিয়াগুলোর তথ্য প্রচার রোধ করা যায়।

গুগল, ফেসবুক এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আমেরিকার প্রতি 'সমালোচনামূলক' বিষয়বস্তু বা বিভিন্ন তথ্য ও বিশ্লেষণসমূহ যাতে মানুষের কাছে বেশি পৌঁছতে না পারে সেজন্য তাদের অ্যালগরিদম পরিবর্তন করেছে এবং নিজেদের সরবরাহ করা তথ্য কিংবা বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা যাতে সহজে সবার কাছে পৌঁছে যায় সে ব্যবস্থা করেছে। এরফলে, মানসম্পন্ন সমালোচনামূলক সংবাদের সাইটগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে, মানুষের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য পৌঁছাচ্ছে না কিন্তু সিএনএন ও এনবিসি নিউজের মতো মিডিয়াগুলো যারা কিনা এক সময় অনলাইনে নিজেদের তুলে ধরতেও ব্যর্থ হয়েছিল তারা এখন শীর্ষে অবস্থান করছে।

স্বাধীন মিডিয়াকে দমন করার জন্য ইউএস এইডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগুলোর মধ্যে একটি হল নিজেদের ভিতরের মিডিয়াকে শক্তিশালী করা।

অভ্যুত্থান ঘটাতে অ্যাপ ব্যবহার এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়া

মার্কিন স্বার্থকে এগিয়ে নিতে ভুল তথ্য প্রচারে ইউএস এইডের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং চরম সেন্সরশিপের জন্য তারা সবার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০২১ সালে কিউবায় সরকার বিরোধী আমেরিকানপন্থীদের 'রঙিন বিদ্রোহের' প্রচেষ্টার পেছনে ইউএস এইডের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। এই সংস্থা বা সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে কিউবার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে আসছে এবং দেশটির সরকারবিরোধী অসংখ্য ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার সাথে জড়িত।

১১ বছর আগে ইউএস এইড গোপনে 'জুনজুনিও' নামে কিউবায় সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের জন্য বিশেষ এক ধরনের অ্যাপ তৈরি করেছিল। এই অ্যাপটির হাজার হাজার ব্যবহারকারীর মধ্যে কেউই জানতেন না যে এই অ্যাপ তৈরি, ডিজাইন ও বাজারজাত করণের পেছনে মার্কিন সরকারের গোপন হাত রয়েছে। আমেরিকার এই গোপন পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল এই বৃহৎ পরিসেবা দেয়ার মাধ্যমে কিউবায় এমন এক পরিবেশ তৈরি করা যাতে জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তোলা যায়, ধীরে ধীরে কিউবা সরকারের পতন ঘটানো যায় এবং ওই দেশটিতে মার্কিনপন্থী কাউকে ক্ষমতায় বসানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএস এইড ভেনেজুয়েলায় ২০০২ সালের অভ্যুত্থানেও জড়িত ছিল। অভ্যুত্থানের ফলে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজকে অস্থায়ীভাবে উৎখাত করা হয় এবং তার স্থলাভিষিক্ত হয় মার্কিন-পন্থী একনায়ক শাসক। তারপর থেকে, ইউএস এইড ক্রমাগত বিভিন্ন উপায়ে ভেনিজুয়েলার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে, যার মধ্যে স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট জুয়ান গুয়াইদোকে আর্থিকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

ট্যাগ