এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ১৩:৪৯ Asia/Dhaka

আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির মাঝে গত কয়েক মাসে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, ইরান বিশ্বের একটা বড় নৌ শক্তিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। এটা পশ্চিমা আধিপত্যবাদী দেশগুলো কখনো চায়নি এবং এমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সে লক্ষ্যে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।। তবে বড় নৌ শক্তি হিসেবে ইরানের উত্থান বিশ্বের স্বাধীনচেতা দেশগুলোর জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো নিশ্চিত ভাবে উপকৃত হবে। 

পশ্চিম এশিয়ায় গত কয়েক মাস ধরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের 'আল-আকসা তুফান' অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার পরপরই গাজাবাসী তথা সব ফিলিস্তিনির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে দখলদার ইসরাইল।  গাজা যুদ্ধ গত ছয় মাসের মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে এবং এর ফলে এক লাখের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ, আহত ও নিখোঁজ হয়েছে।

গাজার বাইরের প্রতিরোধ সংগঠনগুলোও দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে এবং সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইহুদিবাদীরা দামেস্কে ইরানি দূতাবাসের কনস্যুলেট বিভাগে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পর ইরান ঘোষণা দিয়ে দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে। ১৪ এপ্রিল ইরান যে অভিযান চালিয়েছে তার নাম হচ্ছে 'সত্য প্রতিশ্রুতি'। এই অভিযানে ইরান থেকে দখলদার ইসরাইল লক্ষ্য করে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়।

অনেক বিশ্লেষক এই অভিযানকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ড্রোন অভিযান বলে অভিহিত করেছেন। এই অভিযানে ইসরাইলের বহু কৌশলগত ক্ষতি হয়েছে। এই হামলায় ইরানের নৌ শক্তি ব্যবহার করা হয়নি। তবে ইরানের নৌ শক্তির উন্নয়ন ও অগ্রগতি স্বাধীনচেতা জাতিগুলোর জন্য বড় এক সুসংবাদ হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেক বিশ্লেষক।

ইরানের নৌ শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং আরও দুই-তিনটি উপনিবেশবাদী দেশের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৌশলগত হরমুজ প্রণালীতে উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। জ্বালানি পরিবহনের ক্ষেত্রে এই প্রণালীটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথ এবং বিশ্বের ৬০ শতাংশের বেশি জ্বালানি আমদানি-রপ্তানিতে এই প্রণালী ব্যবহার হয়।

এছাড়া, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আঞ্চলিক উত্তেজনার মাঝে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ, বাব আল-মান্দেব প্রণালীর ওপর বড় ধরণের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।

বাব আল মান্দেব প্রণালীটি দখলদার ইসরাইল এবং পশ্চিম ইউরোপীয় শক্তিগুলোর জন্য একটি কৌশলগত প্রণালী এবং বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের ১২ শতাংশের বেশি কন্টেইনারবাহী জাহাজ এই প্রণালী ব্যবহার করে থাকে। অর্থাৎ পণ্য বাণিজ্যের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পথ।

এ অবস্থায় কৌশলগত প্রণালীগুলোর ওপর ইরান এবং তার মিত্রদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার শক্তি মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা আধিপত্যবাদী ফ্রন্টের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ প্রকৃতপক্ষে ইরানের হাতে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক পর্যায়ের ট্রাম্প কার্ডের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যা কোনোভাবেই আধিপত্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষা করবে না। তবে ইরান এবং ইরানের মিত্রদের নৌ শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় আধিপত্যবাদের শিকার দেশগুলো বিশেষকরে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর জন্য বড় ধরণের সুসংবাদ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।#

পার্সটুডে/এসএ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

 

ট্যাগ