ঔপনিবেশিকতার জন্ম: পশ্চিমা সভ্যতা ও মূল্যবোধ ব্যবস্থার প্রকৃত সন্তান ইসরাইল
মার্কিন প্রেসিডেন্ট দফতর হোয়াইট হাউস ক্রমাগতভাবে বলে আসছে যে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে আমাদের সময় দেওয়া উচিত এবং তাদের বিচার করার ক্ষেত্রে খুব তাড়াহুড়া করা ঠিক হবে না। আর যদি খারাপ কিছু ঘটেই তবে ইসরাইলের উচিত তদন্ত করে জবাব দেওয়া। এভাবে একজন গুপ্তঘাতককে সময় দেয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকা এক ভয়ানক কৌশল অবলম্বন করছে।
একটি ছেলে বা মেয়ের পোড়া দেহ ধ্বংসাবশেষ থেকে টেনে বের করে আনা হচ্ছে এবং এখনও জ্বলছে। গাজা এবং ফিলিস্তিনে বহুবার এই ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি হয়েছে। ২০০৮ সালে ইহুদিবাদী ইসরাইলের যুদ্ধবিষয়ক উপমন্ত্রী মাতান ভিলনাই গাজাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সম্ভবত এটিই বৃহত্তর হলোকাস্ট।
অন্য একটি দৃশ্যে একটি ক্ষতবিক্ষত গাধা বালিতে লুটিয়ে পড়ছে এবং গাজার একটি পরিবারের গাড়ি টানার চেষ্টা করছে। তাকে দেখতে শিশুর মতো রোগা, তৃষ্ণার্ত, ক্ষুধার্ত মনে হচ্ছিল।
এই সময় অবশ্যই গাধার বোঝা হালকা ছিল সম্ভবত ইহুদিবাদী ইসরাইলের হামলায় তার মালিকের স্ত্রী বা সন্তানের নিহত হওয়ার কারণে। একই পরিবার আবার একটি 'নিরাপদ' এলাকা থেকে ইসরাইল কর্তৃক মনোনীত অন্য একটি 'নিরাপদ' এলাকায় চলে যাবে। আসলে নিরাপদ এলাকা যা কেবল মুখেই প্রতিশ্রুতি ছিল কিন্তু বাস্তবে সেই কথিত নিরাপদ এলাকা ছিল একটি কসাইখানা!
চার পায়ের প্রাণীটি হাঁটতে নারাজ। এমনকি গাধাও বুঝতে পেরেছিল যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যে গাজায় কোনও নিরাপদ জায়গা নেই!!!
যাইহোক ক্ষুধার্ত গাধাটি জো বাইডেন, ইমানুয়েল ম্যাক্রন, ঋষি সুনাক, জাস্টিন ট্রুডো এবং ওলাফ স্কোলজের চেয়ে বেশি আবেগপ্রবণ ছিল। কারণ গাধাকে পশ্চিমা সভ্যতার কথিত 'মূল্যবোধ' দিয়ে বড় করা হয়নি। এটি জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের মতো পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে ফেলার জন্য ২০০০ পাউন্ডের বোমা তৈরি করে না এবং ইসরাইলের জন্য একটি গণহত্যার কারখানা তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানোর মানসিক ক্ষমতা নেই।
সবচেয়ে বড় কথা আমেরিকান কর্মকর্তারা সাধারণত একজন ইসরাইলি হত্যার নিন্দা করতে দ্বিধাবোধ করেন না, কিন্তু রাফাহতে ইসরাইলি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে একটি প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার শিশুদের পুড়িয়ে ফেলাকে ন্যায্যতা দিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিউনিকেশনস অ্যাডভাইজার জন কিরবি বিরক্ত হয়েছিলেন যখন একজন সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'আর কত পোড়া লাশ দেখতে হবে?'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট দফতর হোয়াইট হাউস ক্রমাগতভাবে বলে আসছে যে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে আমাদের সময় দেওয়া উচিত এবং তাদের বিচার করার ক্ষেত্রে খুব তাড়াহুড়া করা ঠিক হবে না। আর যদি খারাপ কিছু ঘটেই তবে ইসরাইলের উচিত তদন্ত করে জবাব দেওয়া। এভাবে একজন গুপ্তঘাতককে সময় দেয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকা এক ভয়ানক কৌশল অবলম্বন করছে।
বাইডেন এবং পশ্চিমা নেতারাও রাফাহ সম্পর্কে বলেছেন যে ইসরাইল এখনও রেড লাইন অতিক্রম করেনি।অথচ ইসরাইলি ট্যাঙ্কগুলো রাফাহর কেন্দ্রে পৌঁছেছে, ইউএনআরডব্লিউএ এবং ওয়ার্ল্ড কিচেন সেন্টার বা (ডব্লিউকেসি)'কে তাদের খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য করেছে এবং সেখানে ফিলিস্তিনি বেসামরিক লোকদের পোড়া মৃতদেহ জমা হচ্ছে। তার পরও ইসরাইল বাইডেনের রেডলাইনগুলোকে লঙ্ঘন করেনি। অবশ্যই, ইসরাইলিরা ডাব্লিউকেসি কর্মীদের মতো পূর্ববর্তী হত্যাকাণ্ডগুলোর মতো পরীক্ষা করেছে এবং দাবি করেছে যে এটি ইচ্ছাকৃত ছিল না।
ইসরাইলের সেনাবাহিনীর বাহিনীর চিফ অফ দ্য জেনারেল স্টাফ হার্জল হালেভি এটিকে "বড় ভুল" বলে বর্ণনা করেছেন। নেতানিয়াহুও রাফাহতে শেষ গণহত্যাকে একইভাবে বর্ণনা করেছেন এবং এটিকে একটি 'দুঃখজনক ঘটনা' বলেছেন।
বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক (১৪০ জন) নিহত হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা করে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন যে সাংবাদিকদের কখনই ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয় না। কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা ও আহত করার বিষয়ে ইসরাইল দাবি করে যে এগুলো অনিচ্ছাকৃত হতাহতের ঘটনা কারণ তারা বেসামরিকদের ওপর আঘাত কমানোর জন্য প্রতিটি সম্ভাব্য অপারেশনাল প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করে।
গত ৮ মাসে ইসরাইল তার নিজের ভাষায় 'ভুলবশত' ২২৫ টিরও বেশি সাহায্য ও ত্রাণকর্মীকে হত্যা করেছে। এছাড়াও, গাজার স্কয়ারে 700 জনেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী এবং খাদ্য সরবরাহের ট্রাকের জন্য অপেক্ষারত শত শত ক্ষুধার্ত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
এই সমস্ত ক্ষেত্রে ইসরাইল দায় অস্বীকার করেছে এবং নিহতরাই তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে ইসরাইল ঘোষণা দিচ্ছে! যদিও পশ্চিমারা এক দিকে ইসরাইলকে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাণঘাতী বোমা সরবরাহ করছে এবং অন্যদিকে তারা বৈশ্বিক চাপ কমাতে গাজায় খাদ্য সরবরাহ পাঠাচ্ছে: এটা তাদের প্রতারণা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়।
পরিশেষে সবার জানা উচিত যে আজ গাজা শুধু ক্ষুধার্ত শিশুদেরই নয় পশ্চিমা সভ্যতার মূল্যবোধেরও কবরস্থানে পরিণত হয়েছে।#
পার্সটুডে/বাবুল আখতার/৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।