'এ সফর দুই দেশের বন্ধুত্বকে আগের চেয়েও জোরদার করবে'
রাশিয়া ও ভারতের ঘনিষ্ঠতায় ওয়াশিংটনের আতঙ্ক
রাশিয়ার সাথে ভারতের বন্ধুত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এই বিষয়ে ওয়াশিংটন এমন এক সময়ে বার্তা দিলো, যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মস্কো সফরে গিয়েছেন।
দুইদিনের সফরে এখন রাশিয়ায় অবস্থান করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম মস্কো সফর করছেন মোদি। ইতোমধ্যে (গতকাল সোমবার) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ডিনার করেছেন মোদি, সেইসঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়েছে এই দুই নেতার মধ্যে। এমন ঘনিষ্ঠতা ও মাখামাখিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
মোদির রাশিয়া সফর নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, 'রাশিয়া সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কী বক্তব্য রাখছেন, সেই বিষয়ে আমরা নজর রাখব। তবে আমরা জানাতে চাই, ভারতের সাথে রাশিয়ার বন্ধুত্বের বিষয়ে ওয়াশিংটন ইতিমধ্যেই নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে দিল্লির কাছে।'
পাশাপাশি মিলার বলেন, 'আমেরিকা আশা করে, ভারত বা যেকোনো দেশ যখন রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখছে, তখন তারা মস্কোকে জাতিসঙ্ঘ সনদ মেনে চলার কথা ও ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়টি মনে করিয়ে দেবে।'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার প্রতি হুমকি সৃষ্টির লক্ষ্যে পূর্ব দিকে ন্যাটো জোটের বিস্তার ঘটানোর প্রধান সমর্থক ও ইউক্রেন যুদ্ধে কিয়েভের প্রধান সহযোগী। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এরপর বিগত ২ বছর ধরেই রাশিয়ার সাথে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে দিল্লির ওপর চাপ বাড়িয়ে চলেছে ওয়াশিংটন। তবে আমেরিকার চাপের কাছে ভারত মাথা নত করেনি। উল্টা রাশিয়ার থেকে এই দুই বছর ধরে কম দামে জ্বালানি তেল কিনে চলেছে ভারত। সেই তেল আবার ভারতে শোধন করে আমেরিকা এবং ইউরোপে রফতানি করে মোটা টাকা মুনাফা করছে ভারত।
রাশিয়ার সাথে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে মার্কিন হস্তক্ষেপে আপত্তি জানিয়েছে দিল্লি। এরই সাথে জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেয়া থেকে বিরত থেকেছে ভারত। তবে বার বারই আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানও জানিয়ে এসেছে দিল্লি। এই সবের মাঝেই তিন বছর পর ফের রাশিয়া সফরে গিয়েছেন মোদি। পুতিনের সাথে সাক্ষাতের পরে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে সেই ছবি পোস্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদি পুতিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন বলে জানিয়ে লিখেছেন: মস্কোয় সফর ও রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক এই দুই দেশের বন্ধুত্বকে আগের চেয়েও জোরদার করবে।
আজ মঙ্গলবার দুই দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আলোচনায় জ্বালানী, বাণিজ্য, রাসায়নিক সার উৎপাদন ও সরবরাহের বিষয়গুলোসহ অর্থনৈতিক নানা সহযোগিতার বিষয় গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার ওপর পাশ্চাত্যের ও বিশেষ করে মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে দিল্লি ও মস্কোর সহযোগিতা জোরদার রাশিয়ার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মোকাবেলায় মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করা এখন রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। শীতল যুদ্ধের সময় নয়াদিল্লি ও ক্রেমলিনের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং মস্কো বেশ দীর্ঘকাল ধরে ছিল ভারতের অস্ত্র চাহিদার প্রধান যোগানদাতা। ভারত এখন রাশিয়ার তেলের অন্যতম প্রধান ক্রেতা এবং দেশটি পরোক্ষভাবে রাশিয়ার সাবেক প্রথাগত ক্রেতাদের জ্বালানী চাহিদা মেটাচ্ছে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/০৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।