আমেরিকায় অভিবাসী শিশুদের দুর্বিসহ জীবন
অভিবাসী শিশুরা ওয়াশিংটনের ভুল অভিবাসন নীতির নীরব শিকার
পার্সটুডে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশ করা অভিবাসী, যাদের একটি বড় অংশ শিশু, তাদের বেশিরভাগ আসে ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে। এসব অভিবাসী শিশু যুক্তরাষ্ট্রে যে ভয়াবহ দুর্বিসহ জীবন কাটাতে বাধ্য হয় তা ওয়াশিংটনের ভুল অভিবাসী নীতির মারাত্মক কুফল বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।
আমেরিকায় প্রবেশ করার পরপরই অভিবাসী শিশুদেরকে তাদের পিতামাতার কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। এরপর তাদেরকে বিভিন্ন ক্যাম্পে হাজার হাজার শিশুর মধ্যে গাদাগাদি করে রাখা হয়। এসব শিশু পুলিশি নির্যাতনের পাশাপাশি ভয়াবহ রকম যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বলে বিভিন্ন খবরে জানা যায়।
পার্সটুডে ফার্সি জানাচ্ছি, মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয় সম্প্রতি অভিভাবকহীন এসব শিশুকে নিপীড়নের অভিযোগে একটি বেসরকারি আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মার্কিন এটর্নি জেনারেলের সহকারী ক্রিস্টেন ক্লার্ক এক বিবৃতিতে স্বীকার করেছেন: “যেসব আশ্রয়কেন্দ্রে শিশুদের পূর্ণ নিরাপত্তা ও স্বস্তিতে থাকার কথা সেখানে তাদের ওপর যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনা অমানবিক, অপমানকর ও বেআইনি।”
মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা মামলায় ‘সাউথ ওয়েস্ট কি’ নামক কোম্পানির কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিবাসী শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিভাবকহীন শিশুদের থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় টেক্সাস ও ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে এই বেসরকারি কোম্পানির ২৯টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। অভিবাসী শিশুদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে এই কোম্পানি মার্কিন সরকারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা পায়।
আমেরিকার অভিবাসী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শিশু নির্যাতনের নেপথ্যে
মার্কিন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অভিবাসী শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনে ঘটনা নতুন না হলেও সাম্প্রতিক সময় ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে অভিবাসী আসার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি এতটা সঙ্গিন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, বহু শিশু নির্যাতনের ধকল সইতে না পেরে প্রাণ হারিয়েছে।
মার্কিন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে
মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়ের অভিযোগে বলা হয়েছে: আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে থাকা শিশুদের নগ্ন করে ছবি তোলা, তাদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়া, জড়িয়ে ধরা এবং চূড়ান্ত যৌন নির্যাতন করা এখন এসব কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মীদের দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে।
মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয় এই মামলা দায়ের না করলে অভিবাসী শিশুদের এই করুণ দশার কথা জনসমক্ষেই আসত না। অবশ্য আমেরিকায় এর আগেও শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। ২০২০ সালে এরকম একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৫ বছর বয়সি একটি কিশোরের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ পায়। এছাড়া, ২০২২ সালে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের এল পাসো শহরের একটি আশ্রয় কেন্দ্রের এক কর্মী পাঁচ বছর, আট বছর ও ১১ বছর বয়সি তিনটি মেয়ে শিশুরু ওপর ভয়াবহ যৌন নির্যাতন চালিয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়।
নির্যাতনের শিকার ৮ বছরের শিশুটি আদালতকে জানায়, নির্যাতনকারী ব্যক্তি তাকে হুমকি দিয়েছিল, সে যদি নির্যাতনের কথা প্রকাশ করে তাহলে তার পরিবারের সব সদস্যকে হত্যা করা হবে।
আমেরিকায় শিশুদের ওপর নির্যাতন একটি চলমান প্রক্রিয়া
আমেরিকার ভুল নীতির কারণে দেশটির অভ্যন্তরে যেমন শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয় তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকরা ওইসব দেশের শিশুদের ওপরও চালায় ভয়াবহ নির্যাতন। আমেরিকায় এমন সময় শিশুরা এমন অমানবিক নির্যাতনের শিকার যখন এই মার্কিন সরকার বিশ্বব্যাপী শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রবক্তা।#
পার্সটুডে/এমএমআই/জিএআর/২৭