মিশরের রাজনৈতিক ভাষ্যকার আব্দুল্লাহ আস-সানাওয়ি:
সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা আরব বিশ্বে ইরানকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে
পার্সটুডে- মিশরের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার আব্দুল্লাহ আস-সানাওয়ি বলেছে: পশ্চিমা নানামুখী চাপ উপেক্ষা করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান স্বাধীনভাবে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা আরব বিশ্বে এই দেশটির মর্যাদা সমুন্নত করেছে।
তিনি মিশরের একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন: ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে বিশেষ করে গাজা উপত্যকার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে থাকা আরব জনগণের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
পার্সটুডে ফার্সি জানাচ্ছে, আস-সানাওয়ি মনে করেন: গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সম্পূর্ণ স্বাধীনচেতা নীতি গ্রহণ করে আরব বিশ্বে বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। এর কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র ইরান তার সিদ্ধান্ত নেয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে পেরেছে যা অন্য কোনো দেশ পারেনি।
মিশরের এই বিশ্লেষক বলেন: নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইরান দু’টি পদ্ধতি অনুসরণ করে। এর একটি আমেরিকা ও ইসরাইলের বিরোধিতা করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে ফিলিস্তিনি জাতির প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন। এই দুই নীতির একটিও কোনো আরব শাসকের মধ্যে পাওয়া যায় না।
আব্দুল্লাহ আস-সানাওয়ি এ সম্পর্কে আরো বলেন: আমার ধারণা, চলমান গাজা যুদ্ধে হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিজয়ী হোক তা কোনো একটি আরব দেশও চায় না।
সাক্ষাৎকারে তেহরানের সঙ্গে কায়রোর সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন সানাওয়ি। তিনি বলেন: মিশর, তুরস্ক ও ইরান এ অঞ্চলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। কাজেই আমরা চাই বা না চাই, আঞ্চলিক ঘটনাপ্রবাহে এই তিন দেশের কোনো একটি অপর দু’টি দেশকে উপেক্ষো করতে পারে না। এর অর্থ এই নয় যে, এসব দেশের মধ্যে মতপার্থক্য বা মতবিরোধ থাকবে না বরং মতপার্থক্যগুলো কীভাবে নিরসন করা যায় কিংবা অন্তত আপাতদৃষ্টি উপেক্ষা করা যায় এসব দেশের সে চেষ্টা থাকা উচিত।
ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসির শাসনামলে তেহরান ও কায়রোর সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান এই মিশরীয় লেখক। তিনি বলেন: ইরান ও মিশরের সম্পর্ককে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সময় হয়েছে।
ইহুদিবাদী ইসরাইল পশ্চিমা দেশগুলোর সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরের নিরস্ত্র ও অসহায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ গণহত্যা শুরু করেছে।
অন্যদিকে গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পাশাপাশি লেবানন, ইরাক, ইয়েমেন ও সিরিয়ার প্রতিরোধ সংগঠনগুলো দখলদার ইসরাইলের এসব অপরাধযজ্ঞের প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছে।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের চলমান গণহত্যায় এ পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ ও অপর ৯২ হাজারের বেশি গাজাবাসী আহত হয়েছেন।
১৯১৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন দেশ থেকে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইহুদিদের অভিবাসনের মাধ্যমে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৯৪৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অবৈধ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে হত্যা এবং তাদের গোটা ভূখণ্ড দখল করার জন্য বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য গণহত্যা চালিয়েছে ইসরাইল।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বিশ্বের বহু দেশ ইহুদিবাদী ইসরাইলের পতন কামনা করে। এসব দেশ মনে করে, ইসরাইলে উড়ে এসে জুড়ে বসা ইহুদিবাদীদের উচিত এই অবৈধ ঔপনিবেশিক শাসন ত্যাগ করে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়া। #
পার্সটুডে/এমএমআই/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।