ক্রীড়াঙ্গন থেকে ইসরায়েলকে বহিষ্কারের আহ্বান: জোরদার হচ্ছে বিশ্ব জনমত
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151094-ক্রীড়াঙ্গন_থেকে_ইসরায়েলকে_বহিষ্কারের_আহ্বান_জোরদার_হচ্ছে_বিশ্ব_জনমত
পার্সটুডে- জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক “ফ্রান্সেস্কা আলবানজে”, ইহুদি ইসরায়েলের ক্রীড়া টিমগুলোকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছেন।
(last modified 2025-08-12T10:41:38+00:00 )
আগস্ট ১১, ২০২৫ ১৭:০৬ Asia/Dhaka
  • • জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেস্কা আলবানজে
    • জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেস্কা আলবানজে

পার্সটুডে- জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক “ফ্রান্সেস্কা আলবানজে”, ইহুদি ইসরায়েলের ক্রীড়া টিমগুলোকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছেন।

পার্সটুডে জানিয়েছে, ইসরায়েলে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেস্কা আলবানজে, ইসরায়েলি হামলায় একজন ফিলিস্তিনি ফুটবল খেলোয়াড়ের প্রাণহানীর ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, X সোশ্যাল নেটওয়ার্কে এক বার্তা প্রকাশ করেছেন, যেখানে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে “গণহত্যা” এবং “বর্ণবাদ” হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে ইসরায়েলি সমস্ত ক্রীড়া টিমকে বহিষ্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আলবানজে এর আগে বহুবার তার বার্তায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলায় ফিলিস্তিনিদের হত্যার নিন্দা জানিয়েছিলেন। তার সর্বশেষ বার্তায় তিনি লিখেছেন: "ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে এই বর্বর খুনিদের বহিষ্কার করার সময় এসেছে। আসুন খেলাধুলাকে বর্ণবাদ এবং গণহত্যা থেকে মুক্ত করি।"

সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ও সাবেক খেলোয়াড় "সুলেইমান আল-ওবাইদ" শহীদ হয়েছেন। ফিলিস্তিনি জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক এই তারকা, যিনি ৪১ বছর বয়সী ছিলেন, ৬ আগস্ট বুধবার দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় খাবার গ্রহণের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি সৈন্যদের হাতে শহীদ হন।

সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, ইসরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা পরিকল্পিত ত্রাণ বিতরনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের গাজা উপত্যকার নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বলে সেখানেই চারদিক থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের ওপর গুলি ও বোমাবর্ষণ করেছে। খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি স্নাইপার বা ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ত্রাণ কেন্দ্রে এই হামলার ঘটনাকে "মৃত্যুর ফাঁদ" হিসাবে বর্ণনা করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিশেষ করে গাজায় মানবিক সংকট তীব্র হওয়ার সাথে সাথে, তৃণমূল পর্যায়ের নানা সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা এবং এমনকি কিছু সরকার এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সমর্থনে ইসরায়েলের ক্রীড়াবিদদের বয়কটের জন্য বিশ্বব্যাপী আহ্বান জোরালো হয়েছে। এই বয়কটগুলো একটি বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ যা সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও পরিচালিত হচ্ছে।

২০২৪ সালের মে মাসে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন ইসরায়েলকে ফিফা থেকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছিল, কিন্তু এই অনুরোধের ব্যাপারে এখনও ফিফার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়া পায়নি। ইসরায়েলি খেলোয়াড় দলের বিরোধিতার কারণে ইন্দোনেশিয়াকে ২০২৩ সালের ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। ইন্দোনেশিয়ার এই পদক্ষেপ দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে এবং ফিলিস্তিনের সাথে সংহতির প্রতীক হয়ে ওঠে। অবশ্য, গত কয়েক দশকে, ১৯৭২ সালের মিউনিখ, ১৯৭৬ সালের মন্ট্রিল এবং ২০০০ সালের সিডনিসহ বেশ কয়েকটি অলিম্পিক গেমসে, কিছু দেশ ইসরায়েলি ক্রীড়াবিদদের বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিল।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্রীড়া বর্জনের প্রতি বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া খুবই বৈচিত্র্যময় এবং রাজনৈতিক কেননা এর সাথে ফিলিস্তিনের জনগণের দুর্দশার বিষয়টি জড়িয়ে আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিশ্বব্যাপী এই প্রতিক্রিয়াগুলো তীব্রতর হয়েছে, বিশেষ করে গাজায় মানবিক সংকট বৃদ্ধির পর। গাজায় মানবিক সংকটের ছবি প্রকাশের পর ইউরোপে ইসরায়েলি ক্রীড়াবিদদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠেছে।

ইউরোপীয় ফুটবল ক্লাবগুলো ইসরায়েলি খেলোয়াড়দের নিয়োগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে; উদাহরণস্বরূপ, জোনাথন কোহেনের পোলিশ দল লেগিয়া ওয়ারশতে নিয়োগের বিষয়টি ভক্তদের বিক্ষোভের কারণে বাতিল করা হয়েছিল। পশ্চিমা পার্লামেন্টগুলিতেও প্রতিবাদ হয়েছে, কিছু এমপিও ইসরায়েলের সাথে ক্রীড়া সম্পর্ক পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকা, যার ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং এমনকি ১৯৪৮ সালের জেনেভা গণহত্যা প্রতিরোধ সংক্রান্ত কনভেনশন লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তারা ইসরায়েলের ক্রীড়া বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। এই প্রসঙ্গে, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়াবিদ এবং নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলি বারবার আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলকে বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে।

এই প্রতিক্রিয়াগুলি থেকে বোঝা যায়, খেলাধুলা এখন কেবল প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নয় বরং রাজনৈতিক ও মানবিক প্রতিবাদ প্রকাশের একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

ইসরায়েলের ক্রীড়া বর্জনের জন্য বিভিন্ন কারণ তুলে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

- গাজায় যুদ্ধাপরাধ: ২৩ মাসের যুদ্ধে শত শত ক্রীড়াবিদসহ ৬১,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন এবং এই অঞ্চলের ৯৫ শতাংশ ক্রীড়া অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদদের শহীদ: "সুলেমান আল-ওবাইদ" সহ, ফিলিস্তিনি জাতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক, যিনি খাবার গ্রহণের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

- ইসরায়েলকে বৈধতা দেওয়ার ক্ষেত্রে খেলাধুলার ভূমিকা: অনেকেই বিশ্বাস করেন যে বিশ্বব্যাপী ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলের উপস্থিতি ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে বৈধতার দেওয়ার প্রমাণ এবং এটি বন্ধ করা উচিত।

অবশ্য, ইসরায়েলকে বয়কট করার আহ্বান সকল ক্ষেত্রেই বিদ্যমান এবং গত ২ বছরে গাজা যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের অপরাধ অব্যাহত থাকায় তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা ইসরায়েলকে বয়কটের আহ্বান জানিয়ে অনলাইন প্রচারণা এবং প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করেছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইসরায়েলের সাথে একাডেমিক সহযোগিতাও স্থগিত করেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে এই আন্দোলন খেলাধুলার বাইরেও বিস্তৃত হয়েছে।#

পার্সটুডে/এমআরএইচ/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।