ফিলিস্তিনি শিশুরা কি উয়েফা'র প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে?
-
ফিলিস্তিনি শিশুরা কি উয়েফা\'র প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে?
পার্সটুডে- ইতালিতে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইন এবং টটেনহ্যামের মধ্যে ২০২৫ সালের উয়েফা সুপার কাপ ফাইনালে স্বাভাবিকের চেয়ে ভিন্ন দৃশ্য দেখা গেছে।
মিডল ইস্ট আই সম্প্রতি একটি নিবন্ধে লিখেছে, ইতালির উডিনে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইন এবং টটেনহ্যামের মধ্যে ২০২৫ সালের উয়েফা সুপার কাপ ফাইনাল শুরু হওয়ার আগে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিশুরা মাঠে 'শিশু ও বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা বন্ধ করুন' স্লোগানসহ একটি বড় ব্যানার প্রদর্শন করেছিল। এই উদ্যোগ মিডিয়া এবং সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিতে ব্যাপক প্রচার হয়েছে।
পার্সটুডে-জানিয়েছে, প্রতিযোগিতার আয়োজক উয়েফা তার অফিসিয়াল পৃষ্ঠায় এই বার্তাটিকে 'স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন' হিসাবে বর্ণনা করেছে কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষেত্রে অনেকেই একমত হন নি।
মানবাধিকার কর্মী এবং ফুটবল ভক্তদের অভিযোগ, উয়েফা গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার জন্য সরাসরি ইসরায়েলের নাম উল্লেখ করতে অস্বীকার করে 'বিরুপ অঙ্গভঙ্গি' প্রদর্শন করে!
'অপরাধী ছাড়া অপরাধের নামকরণ কাপুরুষোচিত”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে উয়েফার পদক্ষেপকে 'কাপুরুষোচিত' বলে উল্লেখ করেছে। ফিলিস্তিনি মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক রোহান ট্যালবট এর জিজ্ঞাসা ,'এই বার্তাটি কাকে সম্বোধন করা হয়েছে? কে শিশুদের হত্যা করছে? কে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে'!
লেখক এবং বিশ্লেষক তারিক কেনিশাও এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে লিখেছেন, 'অস্পষ্ট এবং অর্থহীন স্লোগান ইসরায়েলকে শিশু এবং বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করার সময় শান্তির পক্ষে থাকার দাবি করার সুযোগ করে দেয়। তারা অন্তত যা করতে পারে তা হল স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের নামকরণ করা এবং উয়েফা প্রতিযোগিতা থেকে তাদের বহিষ্কার করা।'

ফিলিস্তিনি শিশুদের উপস্থিতি, একটি “প্রচারমূলক পদক্ষেপ'?
উয়েফা সভাপতি আলেকজান্ডার সেফেরিনের সাথে পদক অনুষ্ঠানে দুই ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিশুও উপস্থিত ছিল তবে সেটিও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল।
ক্রীড়া সাংবাদিক লেইলা হামেদ একটি নোটে লিখেছেন, 'এই শিশুরা শরণার্থী কারণ ইসরায়েল তাদের ভূমি দখল করে রেখেছে এবং ৭৭ বছর ধরে তাদের জনগণকে বাস্তুচ্যুত করেছে। তাদের আক্রমণকারীদের সমর্থন করে আপনি তাদের মঞ্চে আনতে পারবেন না।'
সমালোচকরা জোর দিয়ে বলেছেন যে, এই পদক্ষেপটি 'শোম্যানশিপ পদক্ষেপ' ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ ম্যাচের মাত্র একদিন পরে ইসরায়েলের ম্যাকাবি তেল আবিব ফুটবল দল ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলছিল। সাংবাদিক আহমেদ এলদিনও তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে লিখেছেন, 'আপনি ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রদর্শনের জন্য রাখতে পারবেন না এবং একই সাথে দখলদারদের প্রতীকী দলকে উয়েফার পতাকার নিচে খেলার অনুমতি দিতে পারবেন না।'

ইসরায়েল ও রাশিয়ার প্রতি উয়েফার দ্বিধাবিভক্তি
উয়েফার পরস্পরবিরোধী আচরণের জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা উল্লেখ করেছেন যে, ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়াকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিন্তু গাজায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সত্ত্বেও ইসরায়েলকে এখনও ইউরোপীয় অঙ্গনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

একজন টুইট ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আপনি দুই বছর ধরে গাজা ইস্যুতে টালবাহানা করে আসছেন এবং এখন আপনি কেবল অর্থহীন বার্তা প্রকাশ করছেন অন্যদিকে আপনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত এবং দৃঢ়ভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন।'
মোহাম্মদ সালাহ'র প্রভাব এবং জনসাধারণের চাপ
ম্যাচের কয়েকদিন আগে, লিভারপুলের মিশরীয় তারকা মোহাম্মদ সালাহ ফিলিস্তিনি ফুটবলার সুলেমান আল-ওবাইদকে সম্মান জানানোর জন্য উয়েফার সমালোচনা করেছিলেন। ইসরায়েলি হামলায় তিনি শহীদ হয়েছেন সেকথা উল্লেখ না করেই। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, গাজার শিশুদের সাহায্য করার জন্য বেশ কয়েকটি দাতব্য সংস্থার সাথে সহযোগিতা ঘোষণাসহ উয়েফার সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি এই প্রতিক্রিয়া এবং “সালাহ প্রভাব” এর চাপের ফলাফল।

ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪০০ ফুটবলার নিহত হয়েছে এবং স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে ক্লাব পর্যন্ত প্রায় ৩০০টি ক্রীড়া সুবিধা নষ্ট হয়ে গেছে।
সবশেষে
ইউরোপীয় সুপার কাপে 'শিশুদের হত্যা বন্ধ করুন' ব্যানার প্রদর্শন উয়েফার সহানুভূতি দেখানোর একটি প্রচেষ্টা হতে পারে কিন্তু অনেকের কাছে এটি একটি প্রচারণার স্টান্ট ছাড়া আর কিছুই ছিল না। জনমত এবং মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন যে, অস্পষ্ট স্লোগানের সময় শেষ এবং এখন 'প্রকৃত পদক্ষেপ' নেওয়ার সময় এসেছে। ইসরায়েলকে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত, যেমন রাশিয়ার ক্ষেত্রে হয়েছিল।#
পার্সটুডে/জিএআর/১৬