ইসরায়েল কেন মিশর-তুরস্কের যৌথ নৌমহড়া নিয়ে আতঙ্কিত?
-
মিশর-তুরস্কের যৌথ নৌমহড়া
পার্সটুডে: সিনাই উপদ্বীপে ব্যাপক মিশরীয় সেনা মোতায়েন এবং তুরস্ক ও মিশরের মধ্যে যৌথ সামরিক মহড়া পুনরায় শুরু হওয়ায় ইহুদিবাদী ইসরায়েল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
পার্সটুডে জানিয়েছে, গত ১৩ বছরে এবারই প্রথম তুরস্ক ও মিশর যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করছে। পশ্চিম এশিয়ার অস্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কার মধ্যেই এ ঘটনা ঘটেছে।
ইহুদিবাদী ইসরায়েলের হিব্রু ভাষার সংবাদপত্র 'মা'রিভ' লিখেছে, মিশর ও তুরস্কের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আঞ্চলিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী। পত্রিকাটির মতে, সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে তুরস্ক ও এরদোগানের মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে বহুমুখী প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছে।
'মা'রিভ' আরও জানায়, মিশরও আঞ্চলিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণে দ্বিধা করছে না। দেশটি সম্প্রতি সিনাই উপদ্বীপে বড় আকারের সেনা মোতায়েন করেছে।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় বলা হয়েছে, যৌথ নৌমহড়ার নাম রাখা হয়েছে আরবিতে 'বাহর আল-সাদাকা' বা 'মৈত্রীর সাগর', যা ২২–২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পূর্ব ভূমধ্যসাগরে চলবে।
মিশরের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গারিব আব্দুল হাফিজ জানিয়েছেন, মিশরের নৌবাহিনী 'মৈত্রীর সাগর ২০২৫' মহড়ায় অংশ নিতে তুরস্কে পৌঁছেছে। যৌথ মহড়াটি সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে দুই দেশের নৌবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে।
এ প্রসঙ্গে আরবী দৈনিক 'রাই আল-ইয়াওম' লিখেছে, মহড়ার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো নতুন আঞ্চলিক জোট। দোহায় ইসরায়েলের বিমান হামলা এবং তাতে মার্কিন সমর্থন প্রকাশ পাওয়ার পর শুধু সৌদি আরবই নয়, ইসরায়েলি আগ্রাসন থেকে বাঁচতে মিশর ও তুরস্কও ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। ফলে 'মৈত্রীর সাগর' নৌমহড়া নতুন করে শুরু হলো।
গণমাধ্যমটি আরও বলেছে, পশ্চিম এশিয়ার এই দুই মুসলিম শক্তি- মিশর ও তুরস্ক এখন একসঙ্গে দাঁড়িয়েছে। তারা আর একে অপরের বিরুদ্ধে প্রচারণায় নয়, বরং সহযোগিতার পথে। আর এটিই ইসরায়েলকে আতঙ্কিত করছে।
কেন ইসরায়েল উদ্বিগ্ন?
কয়েকটি কৌশলগত ও নিরাপত্তামূলক কারণে ইসরায়েল তুরস্ক ও মিশরের যৌথ নৌ-মহড়া নিয়ে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন:
১. আঞ্চলিক সামরিক সহযোগিতা শক্তিশালীকরণ: তুরস্ক ও মিশর পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী দেশ। এই দুটি দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ইসরাইলের মতো সাধারণ হুমকির বিরুদ্ধে তাদের সামরিক ও কৌশলগত শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। এই দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা তাদের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে পারে এবং ইসরাইলের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জে পরিণত হতে পারে। পশ্চিম এশিয়ায় আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিভিন্ন জোটের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে এটি বিশেষভাবে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
২. নতুন সামরিক সামর্থ্য: তুরস্ক ও মিশর উভয়ই শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর অধিকারী। অত্যাধুনিক ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান সক্ষমতার মাধ্যমে তুরস্ক এবং বিশাল ও অভিজ্ঞ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে মিশর ইহুদিবাদী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ ও প্রতিরোধমূলক শক্তি হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। এই সামরিক শক্তি বৃদ্ধি একইসাথে ইসরাইলের জন্য সরাসরি হুমকিতে পরিণত হতে পারে।
৩. ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা: ইসরায়েল এই ভেবে শঙ্কিত যে, মিশর ও তুরস্কের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা এর কৌশলগত অবস্থানকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। বিশেষ করে সমুদ্র ও আকাশসীমায়, এই ধরনের সহযোগিতা ইসরায়েল যে অঞ্চলগুলোতে প্রবেশাধিকার রাখে সেখানে তুরস্ক ও মিশরের প্রভাব বৃদ্ধি করতে পারে।
৪. নিরাপত্তাগত উদ্বেগ ও প্রত্যক্ষ হুমকি: তুরস্ক ও মিশর বর্তমানে ইসরাইলের সাথে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ইহুদিবাদী ইসরাইলের দাবি অনুযায়ী, কায়রো ও আঙ্কারার মধ্যে যেকোনো নতুন সামরিক সহযোগিতা বিশেষ করে সিরিয়া, গাজা বা এমনকি সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত ইস্যুতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের পক্ষ থেকে সরাসরি হুমকির সৃষ্টি করতে পারে।
সার্বিকভাবে, এই দুই দেশের যৌথ সামরিক সামর্থ্য, এর ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত পরিণতি এবং সম্ভাব্য প্রত্যক্ষ হুমকির কারণে ইসরায়েল এই যৌথ নৌ-মহড়া নিয়ে শঙ্কিত।#
পার্সটুডে/এমএআর/২৫