ব্রিকসে ফিলিস্তিন: ঔপনিবেশিক শৃংখল মুক্তির পথে একটি নয়া পদক্ষেপ
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152966-ব্রিকসে_ফিলিস্তিন_ঔপনিবেশিক_শৃংখল_মুক্তির_পথে_একটি_নয়া_পদক্ষেপ
পার্সটুডে-ব্রিকস গ্রুপে ফিলিস্তিনের প্রবেশ যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি কেবল একটি কূটনৈতিক ঘটনা নয় বরং বিশ্বব্যাপী উপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির পথে একটি নতুন মোড়।
(last modified 2025-10-14T07:15:31+00:00 )
অক্টোবর ১৩, ২০২৫ ১৮:১৪ Asia/Dhaka
  • ব্রিকসে ফিলিস্তিন; উপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির পথে একটি নয়া পদক্ষেপ
    ব্রিকসে ফিলিস্তিন; উপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির পথে একটি নয়া পদক্ষেপ

পার্সটুডে-ব্রিকস গ্রুপে ফিলিস্তিনের প্রবেশ যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি কেবল একটি কূটনৈতিক ঘটনা নয় বরং বিশ্বব্যাপী উপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির পথে একটি নতুন মোড়।

“মিডল ইস্ট মনিটর” সম্প্রতি একটি নিবন্ধে লিখেছে: ব্রিকস, যা প্রাথমিকভাবে উদীয়মান দেশগুলোর একটি অর্থনৈতিক জোট হিসেবে পরিচিত ছিল, সেটি এখন একটি ব্লকে পরিণত হয়েছে। যে ব্লকটি কেবল বিশ্বব্যাপী আর্থিক কাঠামোকেই চ্যালেঞ্জ করছে না বরং রাজনৈতিক, নৈতিক এবং ঐতিহাসিক আখ্যানকেও পুনর্নির্ধারণ করছে। পার্সটুডে আরও জানায়, বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের মাঝে, ফিলিস্তিন এমন একটি সংগ্রামের প্রতীক যাদের সংগ্রাম এখনও শেষ হয় নি। আফ্রিকা এবং এশীয় অনেক দেশ নিজেদেরকে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে কিন্তু ফিলিস্তিন এখনও সামরিক দখল, অর্থনৈতিক অবরোধের মধ্যে রয়েছে।

ব্রিকসে ফিলিস্তিনের যোগদান কেবল একটি ঐতিহাসিক অন্যায়ের প্রতিকারই নয় বরং উপনিবেশবাদের কবল থেকে মুক্তির পথে একটি নতুন পর্যায়ের ঘোষণাও। যে পর্যায়ে কেবলমাত্র প্রতিরোধ একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা নির্মাণে সক্রিয় অংশগ্রহণের পথ তৈরি করারও ইঙ্গিত দেয়।

১৯৫৫ সালে বান্দুং সম্মেলন ছিল নতুন স্বাধীনতা লাভকারী দেশগুলোর জন্য ক্ষমতার দুই মেরু থেকে মুক্ত একটি বিশ্ব গড়ে তোলার প্রথম প্রচেষ্টা। তারা ঘোষণা করেছিল যে তারা আর শীতল যুদ্ধের বলি হতে চায় না বরং তারা ভবিষ্যৎ বিশ্ব গঠনে ভূমিকা রাখতে চায়। আজ ব্রিকস সেই প্রত্যাশিত আদর্শেরই আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী, তবে আরও বেশি কার্যকর হাতিয়ার সহ:

পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত একটি উন্নয়ন ব্যাংক

ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর কৌশল

দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা

এবং, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিশ্বের ৪০% শতাংশেরও বেশি জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্বকারী একটি রাজনৈতিক ব্লক।

এমন প্রেক্ষাপটে, ফিলিস্তিন আর পরিচালনা করার জন্য "সমস্যা" নয় বরং ভবিষ্যৎ গঠনে ভূমিকা পালন করার মতো একটি "অংশীদার"। এই পরিবর্তন কেবল নীতিগত স্তরেই নয় বর্ণনামূলক স্তরেও রূপান্তরকামী। পশ্চিমা মিডিয়াতে প্রায়ই অস্থিরতার উৎস হিসেবে চিত্রিত ফিলিস্তিনকে ব্রিকসে মর্যাদা এবং প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

 

লোক দেখানো স্বীকৃতির উর্ধ্বে সহানুভূতি এবং জোটের মধ্যে পার্থক্য

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু ইউরোপীয় দেশ ফিলিস্তিনকে লোক দেখানো স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু এই স্বীকৃতি প্রায়ই বাস্তব ফলাফল ছাড়াই হয়েছে। যেসব দেশ একই সাথে ইসরাইলের সাথে অস্ত্র ব্যবসা করে, স্পাইওয়্যার কেনে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে কূটনৈতিক সহায়তা প্রদান করে, তারা ফিলিস্তিনের সাথে প্রকৃত সংহতি দাবি করতে পারে না।

অপরদিকে, ব্রিকস আরও কিছু প্রদান করে, তা হলো: কাঠামোগত সহায়তা, বিনিয়োগ থেকে শুরু করে উন্নয়ন ব্যাংক এবং রাজনৈতিক সংহতি। এটিই সূক্ষ্ম কথা এবং বাস্তব কর্মের মধ্যে পার্থক্য। ব্রিকসে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ ইউরোপীয় অহংকারের কারণে তাদের কৌশলগত বিচ্যুতিই প্রমাণ করে; ফিলিস্তিন আর প্রতীকী স্বীকৃতি চায় না বরং বিশ্বের রাজনৈতিক অর্থনীতি গঠনে প্রকৃত অংশগ্রহণ চায়।

ব্রিকসে ফিলিস্তিনের উপস্থিতি পবিত্র এই ভূমিকে একটি নতুন নৈতিক বৈধতা দেয়। বহু বছর ধরে পশ্চিমারা ব্রিকসকে কেবল একটি অর্থনৈতিক জোট হিসেবে দেখে এসেছে। কিন্তু ফিলিস্তিনের যোগদানের সাথে সাথে ব্রিকসকে একটি ন্যায়বিচার-ভিত্তিক এবং উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলন হিসেবেও দেখা হবে। এর অর্থ হল বহুমেরুত্ব কেবল ক্ষমতা ভাগাভাগি সম্পর্কে নয় বরং মানব মর্যাদা পুনর্বণ্টন সম্পর্কেও।

এই রূপান্তরের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রকৃত বহুমেরুত্বের পরিণতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে; এমন একটি বিশ্ব যেখানে উন্নয়ন শর্তসাপেক্ষ ঋণের কাছে জিম্মি নয়, বাণিজ্য মানে নির্ভরতার সম্পর্কে নয় এবং সার্বভৌমত্ব নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চূর্ণবিচূর্ণ হয় না।

ফিলিস্তিন বছরের পর বছর ধরে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় একা এবং নির্বাক ছিল, এখন চীন, ভারত, ব্রাজিল, ইরান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এর অর্থ হল ফিলিস্তিনকে আর উপেক্ষা করা যাবে না। ইসরাইল এবং তার মিত্ররা বিশ্বব্যাপী এখন বিশ্ব সমর্থনপুষ্ট ফিলিস্তিনের মুখোমুখি হতে বাধ্য হবে। এই পরিবর্তন কূটনৈতিক হিসেব-নিকেষ বদলে দেবে।#

পার্সটুডে/এনএম/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।