বাগদাদ-আঙ্কারা পানি চুক্তি: ইরাক কি তুরস্কের কাছে আটকে গেল?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i153734-বাগদাদ_আঙ্কারা_পানি_চুক্তি_ইরাক_কি_তুরস্কের_কাছে_আটকে_গেল
পার্সটুডে- বাগদাদ ও আঙ্কারার মধ্যে দজলা (টাইগ্রিস) ও ফুরাত (ইউফ্রেটিস)  নদীর পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে ইরাকি পরিবেশবিদ ও অর্থনীতিবিদরা এটিকে সংকটের সমাপ্তি নয়, বরং “নতুন নির্ভরতার সূচনা” হিসেবে দেখছেন।
(last modified 2025-11-28T10:09:50+00:00 )
নভেম্বর ০৫, ২০২৫ ১৯:৫১ Asia/Dhaka
  • হাকান ফিদান ও ফুয়াদ হোসেইন চুক্তি সই করছেন
    হাকান ফিদান ও ফুয়াদ হোসেইন চুক্তি সই করছেন

পার্সটুডে- বাগদাদ ও আঙ্কারার মধ্যে দজলা (টাইগ্রিস) ও ফুরাত (ইউফ্রেটিস)  নদীর পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে ইরাকি পরিবেশবিদ ও অর্থনীতিবিদরা এটিকে সংকটের সমাপ্তি নয়, বরং “নতুন নির্ভরতার সূচনা” হিসেবে দেখছেন।

রোববার ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইন ও তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বাগদাদে পানিসম্পদ সহযোগিতা বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিটি ইরাকে পানি-সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে যৌথ পানি প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর কেন্দ্রীভূত। গত বছরের এপ্রিলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের ইরাক সফরের পর দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে এবং এরপরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এসেছে।

পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি ইরাকের জন্য সংকটের অবসান নয়, বরং এমন এক নির্ভরতার যুগের সূচনা, যা তুরস্ককে ইরাকের পানি নীতিতে প্রভাবশালী ও নিয়ন্ত্রক অবস্থানে নিয়ে যাবে। সীমিত পরিমাণে পানি ছাড়ার প্রতিশ্রুতি ও যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে তুরস্ক কার্যত বাগদাদের ওপর নতুন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার হাতিয়ার পেয়েছে।

কিছু আঞ্চলিক বিশ্লেষক এই চুক্তিকে “তেলের বিনিময়ে পানি” চুক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাদের মতে, তুরস্ক ইরাকের পানি সংকটকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবেশী দেশে নিজের অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব বাড়াচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, ইরাকের তেল বিক্রির একটি অংশ তুরস্কের কোম্পানিগুলোকে প্রদান করা হবে, যারা ইরাকের ভেতরে পানি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে।

চুক্তির প্রথম ধাপে তিনটি পানি সংরক্ষণকারী বাঁধ এবং তিনটি কৃষি পুনরুদ্ধার প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তুরস্ক থেকে ইরাকে ঠিক কতটা পানি প্রবাহিত হবে, তার কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ বা বণ্টনের তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নদীপথ কনভেনশনের সদস্য হিসেবে ইরাক দজলা (টাইগ্রিস) নদীকে যৌথ নদী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ন্যায্য বণ্টনের দাবি জানায়। কিন্তু তুরস্ক এই কনভেনশন স্বাক্ষর করেনি এবং দজলাকে নিজের জাতীয় নদী হিসেবে বিবেচনা করে, যা সীমান্ত অতিক্রম করে ইরাকে প্রবেশ করেছে।

ইরাকি সংসদ সদস্য জুহাইর আল-ফাতলাভি তুরস্কের পানি নীতির সমালোচনা করে বলেন, ইরাককে স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান নিতে হবে, কারণ নীরবতা ইরাকের পানি ও অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি “আল-মাআলুমা” সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “তুরস্ক ইরাকের জাতীয় সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে এবং দজলা ও ফুরাতের প্রবাহ বন্ধ করে পানিসম্পদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। সরকারকে দৃঢ় রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করতে হবে এবং ইরাকের অধিকার রক্ষায় কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সব পথ ব্যবহার করতে হবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, উপসাগরীয় কিছু আরব দেশ তুরস্কের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে, যাতে ইরাকের পানির প্রবাহ হ্রাস পায় ও অর্থনীতি দুর্বল হয়। তিনি বলেন, “এই পরিকল্পনা একটি মার্কিন-আরব প্রকল্পের অংশ, যার উদ্দেশ্য ইরাকের কৃষি, শিল্প ও পশুপালন খাতে অগ্রগতি রোধ করা। তুরস্কের প্রকৃতপক্ষে অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই, কারণ দেশটি পর্বতময় ও বৃষ্টিপ্রবণ।”

এছাড়া, ইরাকের আল-আনবার জোটের সিনিয়র সদস্য মোহাম্মদ আদ্দারি সতর্ক করে বলেছেন, “পানির বিনিময়ে তেল চুক্তিটি ইরাকের সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করবে। তিনি জানান, “এই চুক্তি অনুযায়ী তুরস্ক ইরাকের পানিসম্পদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাবে, আর সব বাঁধ নির্মাণ ও পুনর্গঠন করবে তুর্কি কোম্পানিগুলো—কেন্দ্রীয় সরকার কেবল নামমাত্র তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে থাকবে।”

তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির সরকার ইরাকের পানিসম্পদ কার্যত তুরস্কের হাতে তুলে দিয়েছে। এটি ইরাকের ইতিহাসে পানিবিষয়ক সবচেয়ে বিপজ্জনক চুক্তিগুলোর একটি, যা পুরো পানিনীতির নিয়ন্ত্রণ আঙ্কারার হাতে সমর্পন করেছে।”#

পার্সটুডে/এসএ/৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।