ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলা পরিকল্পনা নিয়ে তার দলের মধ্যেই লেজেগোবরে অবস্থা
-
ট্রাম্প
পার্সটুডে- মার্কিন সাময়িকী পলিটিকো ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলা পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানদের মধ্যে গভীর বিভাজনের খবর দিয়েছে।
মার্কিন সাময়িকী তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা আবারও রিপাবলিকান পার্টির ভেতরের মতভেদকে প্রকাশ করেছে; একদিকে ভিন্ন দেশে হস্তক্ষেপের পক্ষে থাকা কট্টরপন্থীরা, অন্যদিকে রয়েছে হস্তক্ষেপের বিরোধীরা। পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিভাজন থেকে এটা স্পষ্ট পররাষ্ট্রনীতি ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসন অস্থিরতায় আক্রান্ত।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সামরিক হুমকি লিন্ডসি গ্রাহাম ও মাইক পেন্সের মতো ঐতিহ্যগত ও হস্তক্ষেপপন্থী রাজনীতিকদের সমর্থন পেয়েছে। গ্রাহাম ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে হামলা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন এবং পেন্স আরও এক ধাপ এগিয়ে মাদুরোকে অপসারণের প্রস্তাব দিয়েছেন। এর আগেও তারা ট্রাম্পের হস্তক্ষেপকামী নীতিকে সমর্থন করেছিলেন—জুন মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি বিমান হামলার সিদ্ধান্তের প্রতিও তারা সমর্থন দিয়েছিলেন।
এছাড়া, দক্ষিণ ফ্লোরিডার কিছু রিপাবলিকান রাজনীতিক—যেমন মারিয়া এলভিরা সালাজার, মারিও দিয়াজ-বালার্ট ও কার্লোস হিমেনেজ—খোলাখুলিভাবে মাদুরোকে অপসারণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
অন্যদিকে, স্টিভ ব্যানন ও টাকার কার্লসনের মতো জাতীয়তাবাদীরা এবং র্যান্ড পলের মতো হস্তক্ষেপবিরোধী উদারপন্থীরা এই দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করছেন। তাদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকে ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনের জন্য ব্যয়বহুল এক যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারে—যে আশঙ্কা তারা ইরানে হামলার ক্ষেত্রেও প্রকাশ করেছিলেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এবার বিরোধী ও সমর্থকদের বিন্যাস আগের চেয়ে ভিন্ন। ইরানে হামলার পক্ষে থাকা কিছু ব্যক্তি এখন ভেনেজুয়েলায় হস্তক্ষেপের বিরোধীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, লরা লুমার—যিনি আগে ইরান ইস্যুতে কার্লসনের সঙ্গে মতবিরোধে ছিলেন—এবার তার সুরে সুর মিলিয়ে এই বলে সতর্ক করেছেন যে, মাদুরোকে অপসারণ করলে দেশ পুনর্গঠনের খরচ মার্কিন করদাতাদের ওপর পড়বে এবং এতে চীনের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি হবে।
ট্রাম্পের বিশেষ দূত রিচার্ড গ্রেনেলও বিরোধীদের দলে যোগ দিয়েছেন। তিনি অতীতে ইরানে হামলার পক্ষে ছিলেন, কিন্তু ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছেন। যদিও মার্কিন সরকার কারাকাসের সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ করেছে, তারপরও গ্রেনেল এখনও শান্তিপূর্ণ সমঝোতার সম্ভাবনার ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছেন।
হস্তক্ষেপবিরোধী শিবির কিছু অভিবাসনবিরোধী কর্মীর সমর্থনও পেয়েছে। তাদের আশঙ্কা, ভেনেজুয়েলার সংকট তীব্র হলে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নতুন অভিবাসন ঢল নামতে পারে, যা সরকারের কঠোর অভিবাসন নীতিকে দুর্বল করবে। সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের পরিচালক মার্ক ক্রিকোরিয়ান সতর্ক করে বলেছেন, যেকোনো সামরিক দুঃসাহসিকতা সাধারণত অভিবাসনের ঢেউ সৃষ্টি করে—এ বিষয়টি সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ্যে বলছে, তাদের লক্ষ্য “মাদক পাচারকারীদের” বিরুদ্ধে লড়াই, মাদুরোকে অপসারণ করা নয়। কিন্তু একইসঙ্গে তারা ঐ অঞ্চলে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে এবং আড়ালে মাদুরো-পরবর্তী ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছে।
এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানরা এখনও এ বিষয়ে অস্থিরতা ও অনিশ্চিয়তার মধ্যে রয়েছে।#
পার্সটুডে/এসএ/১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।