‘বলকানের কসাই’ কারাদিচের ৪০ বছর কারাদণ্ড
https://parstoday.ir/bn/news/world-i5218-বলক_ন_র_কস_ই’_ক_র_দ_চ_র_৪০_বছর_ক_র_দণ_ড
২৫ মার্চ (রেডিও তেহরান): বসনিয়ায় গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাবেক সার্বীয় নেতা রাদোভান কারাদিচের ৪০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে সংঘটিত বসনিয়া যুদ্ধে প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার হেগের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ‘বলকানের কসাই’ হিসেবে পরিচিত এই সার্ব নেতার বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণা করে।
(last modified 2025-11-28T10:09:50+00:00 )
মার্চ ২৫, ২০১৬ ০২:২৬ Asia/Dhaka
  • সাবেক সার্বীয় নেতা রাদোভান কারাদিচ
    সাবেক সার্বীয় নেতা রাদোভান কারাদিচ

২৫ মার্চ (রেডিও তেহরান): বসনিয়ায় গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাবেক সার্বীয় নেতা রাদোভান কারাদিচের ৪০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে সংঘটিত বসনিয়া যুদ্ধে প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার হেগের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ‘বলকানের কসাই’ হিসেবে পরিচিত এই সার্ব নেতার বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণা করে।

৭০ বছর বয়সী কারদিচের বিরুদ্ধে সেব্রেনিৎসা গণহত্যাসহ কয়েকটি অপরাধে জড়িত থাকায় মোট ১১টি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ১০টিই দোষী সাব্যস্ত হন সাবেক সার্বীয় এই নেতা।

কারাদিচ অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। তার দাবি, ওই সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের দায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপরই বর্তায়। কেননা তার কমান্ড তখন কার্যকর ছিল না। তবে, কারাদিচের মদদ ছাড়া এই যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হতো না বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান বিচারক ও-গোন কোন।

ইয়োগোস্লাভিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির পতন ঘটে ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে। এ সময় দেশটিতে রাজনৈতিক বিভেদ জোরদার হয়। ১৯৯১ সালের ২৫ জুন ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভেনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ইয়োগোস্লাভিয়ার মুসলমান ও ক্রোয়াটরা সার্বদের কর্তৃত্বকে পছন্দ করত না। তাই মুসলিম ও ক্রোয়াট সংসদ সদস্যরা স্বাধীনতার দাবি জানাচ্ছিলেন। কিন্তু এই দাবির বৈধতা অর্জনের পথে বাধা দিতে থাকে ইউরোপিয় ও মার্কিন সরকার। তারা গণভোটের শর্ত জুড়ে দেয়। বসনিয় সার্বরা গণভোট বর্জন করে। বরং তারা বসনিয়ায় সার্বদের নেতৃত্বে একটি রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানায়। কিন্তু বসনিয়ার সরকার পূর্ব-সমঝোতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী গণভোট দেয়। বিদেশী পর্যবেক্ষকদের নজরদারিতে অনুষ্ঠিত এই গণভোটে দেশটির ৬৪ শতাংশ নাগরিক একটি অবিভক্ত ও স্বাধীন বসনিয়া গড়ার পক্ষে রায় দেন। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর দিনই তথা ১৯৯২ সালের ৭ এপ্রিল বসনিয়া হার্জেগোভিনা সার্বদের আগ্রাসনের শিকার হয়। এই আগ্রাসনে সমর্থন জানান মুসলিম প্রধান বসনিয়ার সার্ব রাজনৈতিক নেতা কারাদিচ। তখন রাজধানী সারায়েভোসহ অন্যান্য শহর ও গ্রাম দখল করতে গিয়ে কারাদিচ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছেন বলে রায়ে বলা হয়।

ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারক বলেন, “বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো দখলে রাখার সময়ে সার্ব বাহিনীর হাতে যেসব মুসলিম ও ক্রোট নিহত হয়, তা কারাদিচের সমর্থন ছাড়া ঘটতে পারত না।”

বিচারক ও-গোন কোন বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় যেন চুক্তিবদ্ধ ছিলেন কারাদিচ।”

সার্বরা ১৯৯৫ সালের জুন মাসে জাতিসংঘের রক্ষীদের কোনো বাধা বা প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সেব্রেনিৎসা ও জেপা শহরটি দখল করে নেয়। জাতিসংঘের ৮১৯ নম্বর প্রস্তাবে অনুযায়ী সেব্রেনিৎসা শহরটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সার্বরা শহরটি দখল করে সেখানকার হাজার হাজার বেসামরিক মুসলমানকে হত্যা করে ও হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ করে। নিহতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সেব্রেনিকা শহরের সংঘটিত এই গণহত্যাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ‘ইউরোপের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এছাড়া কারাদিচ বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো অবরোধ করে সেখানকার অধিবাসীদের ওপর সার্ব সেনাদের লেলিয়ে দিয়েছিলেন। বর্বর সার্ব সেনারা অবরুদ্ধ সারায়েভোবাসীর ওপর ৪৪ মাস ধরে ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ চালায় এবং ওই শহরে নিহত হওয়া ১০ হাজারেরও বেশী মুসলমান। হেগের জাতিসংঘের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে কারাদিচকে দোষী সাব্যস্ত করে। রাদোভান কারাদিচ যেসব হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল সেগুলোকে 'মানব ইতিহাসের অন্ধকারতম পৃষ্ঠা যা নরকের দৃশ্যাবলীতে পরিপূর্ণ' বলে বর্ণনা দিয়েছিল ওই ট্রাইবুনাল।

১৯৯৭ সালে কারাদিচ গা ঢাকা দেন এবং তাকে খুঁজে বের করতে ইউরোপের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হিমশিম খেয়েছে। অবশেষে দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০০৮ সালে তাকে বেলগ্রেডের শহরতলী থেকে গ্রেফতার করা হয়।#

রেডিও তেহরান/আশরাফুর রহমান/২৫