যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের বিরোধিতা সত্ত্বেও একতরফা নিষেধাজ্ঞা বন্ধে জেনেভায় প্রস্তাব পাস
জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৪৬তম বৈঠকে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে যেখানে একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির জন্য এ ধরনের নিষেধাজ্ঞাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারেরও নিন্দা জানানো হয়েছে ওই প্রস্তাবে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের এ প্রস্তাবে একতরফা বিদ্বেষমূলক পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সংস্থার সদস্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, 'এ ধরণের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রভাব সবার ওপর পড়ে। তাই এ ধরনের এক তরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ বন্ধ করা উচিত কেননা বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের যে ঘোষণা জাতিসংঘের ইশতেহারে রয়েছে এটা তার লঙ্ঘন।' একতরফা ও বিদ্বেষমূলক নিষেধাজ্ঞার শিকার দেশগুলোকে সহায়তার জন্য জাতিসংঘের কাঠামো পরিবর্তনের জন্য স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে জেনেভা প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, জবাবদিহিতা ও ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আইনে সংশোধন আনা উচিত।
চীন ও রাশিয়াসহ ৩০টি দেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের এ প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। অন্যদিকে ব্রিটেন ও ইউক্রেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য বেশ কয়েকটি দেশসহ মোট ১৫টি দেশ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। তবে আর্মেনিয়া ও মেক্সিকো ভোটদানে বিরত থাকে।
ধারনা করা হচ্ছে, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে পাশ হওয়া এ প্রস্তাব পাশের মূল টার্গেট ছিল পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এ কারণেই হয়তো পাশ্চাত্যের দেশগুলো এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। রাজনৈতিক কারণে অন্য দেশের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। আর ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্ররা বিশেষ করে ব্রিটেন এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। নানান মিথ্যা অজুহাতে শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এসব নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতেও ওয়াশিংটন শত্রু দেশগুলোর ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনও একই নীতি অনুসরণ করে চলেছেন। মার্কিন সরকার নজিরবিহীন ও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে চীন, রাশিয়া, ভেনিজুয়েলা, কিউবা, সিরিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোর ওপরও একতরফা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার রাজনৈতিক, বাণিজ্য, নিরাপত্তা এমনকি মানবাধিকারের মতো নানা অজুহাতে শত্রু ভাবাপন্ন দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মূলত নিজের একক স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টায় মত্ত। রুশ জ্বালানি মন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক বলেছেন, মার্কিন একতরফা নিষেধাজ্ঞার কারণে সারা বিশ্ব আজ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে জাতিসংঘও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে। অন্তত চিকিৎসার জন্য হলেও নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার আহ্বান জানালেও যুক্তরাষ্ট্র এতে কর্ণপাত করেনি। এ অবস্থায় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের একতরফা নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশ্বের দেশগুলোর উচিত ঐক্যবদ্ধ হওয়া যাতে পাশ্চাত্য তাদের নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৭