সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে প্রাণহানির বিষয়ে পেন্টাগনের দাবি মিথ্যা: ব্রিটিশ সংস্থা
'এয়ার ওয়ার্স' নামে ব্রিটেনের একটি বেসরকারি সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে প্রাণহানির ব্যাপারে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই সংস্থাটি ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব অভিযানে বেসরকারি মানুষের প্রাণহানির ব্যাপারে পেন্টাগনের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
পেন্টাগন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে ২০২০ সালে বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত মার্কিন অভিযানে মাত্র ২৩ বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে এবং আহত হয়েছে ১০ জন। নিহতদের মধ্যে ২০ জন আফগান নাগরিক। এছাড়া সোমালিয়ার একজন এবং ইরাকের একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। তবে ২৩তম ব্যক্তি কোথায় নিহত হয়েছে সে ব্যাপারে পেন্টাগন কিছু উল্লেখ করেনি।
এ সংক্রান্ত পেন্টাগনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে 'এয়ার ওয়ার্স' নামে ব্রিটেনের এ বেসরকারি সংস্থা জানিয়েছে, পেন্টাগন তাদের অভিযানে বেসামরিক মানুষের মৃতের সংখ্যা গোপন করেছে এবং প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ১০২ জন। ব্রিটেনভিত্তিক এ সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, আফগানিস্তানে অবস্থিত জাতিসংঘের দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, গতবছর আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের অভিযানে অন্তত ৮৯ জন বেসামরিক মানুষ নিহত এবং ৩১ জন আহত হয়েছে। এমনকি পেন্টাগন এসব অভিযানে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য ৩০ লাখ ডলার বরাদ্দ করলেও ক্ষতিগ্রস্তরা এক কানাকড়ি অর্থও পায়নি।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিভিন্ন দেশে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে বেসরকারি মানুষজন নিহত হওয়ার ব্যাপারে পেন্টাগনের মিথ্যাচার প্রকাশিত হওয়া হয়ে পড়া থেকে মার্কিন সেনাদের অমানবিক আচরণের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। কেননা এটা কারোরই অজানা নয় যে মার্কিন বিমান হামলায় এ পর্যন্ত বহু বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। পেন্টাগনের এ মিথ্যাচার ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনা করেছে। পেন্টাগনের মিথ্যাচারের আরো উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশ বা আইএস বিরোধী মার্কিন নেতৃত্বাধীন তথাকথিত সামরিক অভিযানের দুই বছর পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০১৬ সালের অক্টোবরে একটি প্রতিবেদনে জানায় ওইসব অভিযানে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঠেকানোর বিষয়টিকে আমলে নেয়নি মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। এমনকি এসব অভিযানে বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হলেও যুক্তরাষ্ট্র এটাকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা চালিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছেন ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সিরিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বে পরিচালিত সামরিক অভিযানে প্রায় ৩০০ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। ইরাকেও মার্কিন বিমান ও ড্রোন হামলায় বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।
বর্তমানেও মার্কিন সেনাবাহিনী বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের অজুহাতে বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানিয়েছে এসব হামলায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আড়াল করার চেষ্টা করছে পেন্টাগন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মৃতের সংখ্যা কম দেখানোর মাধ্যমে পেন্টাগন আসলে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ায় সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় তাদের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৪