আজ কারবালার তরুণ বীর হযরত কাসিম ইবনে হাসানের পবিত্র জন্ম-বার্ষিকী
(last modified Sat, 14 May 2016 15:25:23 GMT )
মে ১৪, ২০১৬ ২১:২৫ Asia/Dhaka
  • আজ কারবালার তরুণ বীর হযরত কাসিম ইবনে হাসানের পবিত্র জন্ম-বার্ষিকী

আজ হতে ১৩৯০ চন্দ্র-বছর আগে ৪৭ হিজরির এই দিনে জন্ম গ্রহণ করেন কাসিম ইবনে ইমাম হাসান মুজতাবা (আ)। তাঁর জন্ম হয়েছিল ইমাম হাসান (আ)’র স্ত্রী উম্মে ফারওয়ার গর্ভে।

তিনি শাহাদত বরণ করেছিলেন কারবালার হৃদয়-বিদারক ট্র্যাজেডিতে। সে সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪। তাঁর বয়স কম হওয়ায় চাচা ইমাম হুসাইন (আ) তাঁকে যুদ্ধে অংশ নেয়ার অনুমতি দিতে চাননি। কিন্তু ভাতিজার বার বার একান্ত অনুরোধের মুখে তিনি শেষ পর্যন্ত এই প্রিয় ভাতিজাকে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার অনুমতি দেন।

তরুণ হওয়া সত্ত্বেও সুদর্শন ও নুরানি চেহারার অধিকারী কাসিম ইয়াজিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ পারদর্শিতা দেখিয়ে খোদাদ্রোহী ইয়াজিদ বাহিনীর বেশ কয়েক সদস্যকে জাহান্নামে পাঠান। এদের মধ্যে প্রখ্যাত সিরিয় পাহলোয়ান আজরাক আশ শামি ছিল অন্যতম।

কাপুরুষ ইয়াজিদ বাহিনী পেছন থেকে কাসিমের ওপর আঘাত হানে। ফলে তিনি পড়ে যান ঘোড়া থেকে। এ সময় তিনি ‘চাচাজান’ বলে ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রিয় চাচা ইমাম হুসাইন (আ) তাঁর কাছে আসার আগেই তিনি শাহাদতের অমিয় সুধা পান করেন বলে কোনো কোনো বর্ণনায় বলা হয়েছে। তরুণ ভাতিজার জন্য বিদীর্ণ হয়ে যায় ইমামের হৃদয়। 

কারবালার শহীদদের স্মরণ করার সময় নবী পরিবারের তরুণ সদস্য হিসেবে তাঁকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন শোকার্ত মুসলমানরা।

আগের দিন রাতে ইমাম যখন তাঁর সঙ্গীদের জানিয়ে দিয়েছিলেন যে আগামীকাল আমরা সবাই শহীদ হব, তখন এই তরুণ ভাতিজাও শাহাদতের প্রেমে বিভোর হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, চাচাজান আমিও কি শহীদ হব? তখন ইমাম পাল্টা প্রশ্ন করেন, শাহাদত তোমার কাছে কেমন মনে হয়? তিনি বলেছিলেন, সত্যের পথে শাহাদত মধুর চেয়েও মিষ্টি! খুশি হয়ে ইমাম জানান, হ্যাঁ, তুমিও আগামীকাল শাহাদত বরণ করবে।

বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল মহররম কবিতায় এই তরুণ বীরকে স্মরণ করেছেন  এভাবে:

...সকীনার শ্বেতবাস দেবো মাতা কন্যায়,

কাসিমের মত দেবো জান রুধি’ অন্যায় !

শহীদ কাসিম (আ) সম্পর্কে ইয়াজিদ বাহিনীর নরাধম হুমাইদের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায় : এক তরুণ যেন আকাশের চাঁদের টুকরো তাদের দিকে তথা ইয়াজিদ বাহিনীর দিকে চলে আসছে। তার হাতে তলোয়ার, গায়ে জামা, পরনে ইজার ছিল। জুতার বাম পাশের ফিতা ছেঁড়া ছিল। নরাধমআমর ইবনু সাআদ তার ওপর হামলা চালায়। তলোয়ারের আঘাতে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় তরুণ। বিলাপ করে ডাকে: হায় চাচাজান! এ ডাক শুনে হুসাইন শিকারি বাজ পাখির মত ছুটে আসেন আক্রমণ প্রতিহত করতে। তিনি নরাধম আমরকে বগল পর্যন্ত হাত কেটে আলাদা করে ফেলেন। তখন আমর চিৎকার করে ওঠে। ইয়াজিদের অশ্ববাহিনী হুসাইনের হাত থেকে তাকে বাঁচানোর জন্য ছুটে আসে। ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা যায় ওই নরাধম। ধূলাবালি পরিষ্কার হলে দেখা গেল ইমাম হুসাইন (আ) বালক কাসেমের মস্তক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন। আর বালক কাসিম মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ইমাম হুসাইন বলছিলেন: ধিক্কার এমন লোকের প্রতি যারা তোমাকে হত্যা করেছে যাদের প্রতিপক্ষ হবেন কিয়ামতের দিন তোমার দাদা। এরপর তিনি বলেন, আল্লাহর কসম, তোমার চাচার জন্য এমন কোনোও ওজর ছিল না যে তুমি তাকে ডাকবে তিনি জবাব দেবেন না! বা জবাব দেবেন কিন্তু শব্দ তোমার কোনোও উপকারে আসবে না। আল্লাহর কসম তোমার চাচার রক্ত ঝরানোর লোক অনেক। আর তার সাহায্যকারী কম। (তাবারি, খণ্ড-৫, পৃ-২০৭)

এরপর ইমাম তার লাশ বহন করে আনলেন। প্রত্যক্ষদর্শী বলেন: আমি যেন দেখতে পাচ্ছি বালকের পা দুটি মাটিতে রেখাপাত করে যাচ্ছে। আর ইমাম হুসাইন (আ) তার বুকের সাথে বালকের বুক চেপে ধরে আছেন। ভাবলাম লাশ নিয়ে তিনি কী করবেন? তিনি লাশটি নিয়ে এলেন। আর তাঁর ছেলে আলী ইবনে হুসাইনের লাশের পাশে রেখে দিলেন। তাঁর পরিবারের অন্যান্য লাশও আলী আকবারের লাশের পাশে রাখা হয়েছিল। আমি জানতে চাইলাম: বালকটি কে? তখন আমাকে বলা হল: কাসিম ইবনে হাসান ইবনে আলী ইবনে আবিতালিব। (ফুরাত কুলে ইমাম হুসাইন, পৃ-১৯৬)

 ইমাম হাসান (আ)'র অন্য পুত্র কাসিমের বড় ভাই হযরত আবদুল্লাহও  (আ) তরুণ বয়সে কারবালায় যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিলেন।  #

মু. আ. হুসাইন/১৪