মধ্যএশিয়ায় ঘাঁটি স্থাপন করা থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেন বিরত থাকে: রাশিয়া
রাশিয়া আবারো মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ ককেশীয় অঞ্চলে পাশ্চাত্য বিশেষ করে ন্যাটো ও মার্কিন সেনা উপস্থিতির তীব্র বিরোধিতা করেছে। আফগানিস্তান বিষয়ক রুশ প্রেসিডেন্টের বিশেষ প্রতিনিধি জামির কাবুলোভ বলেছেন, এসব অঞ্চলে মার্কিন সেনা উপস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আরো বলেছেন, 'আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আবারও যেন তাদেরকে সেদেশে মোতায়েন করা না হয় এবং ইরানের প্রতিবেশী মধ্যএশিয়ার দেশগুলোতেও সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেন বিরত থাকে।'
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সন্ত্রাসবাদ দমন এবং আফগানিস্তানের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার অজুহাতে সামরিক হামলা চালিয়ে আফগানিস্তানে ব্যাপক সেনা সমাবেশ ঘটায় এবং দেশটি দখল করে নেয়। আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির ফলে যুদ্ধের বিস্তার ঘটে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে, দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অবকাঠামো গুলো ধ্বংস হয়ে যায়, নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয় এবং সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটে। আফগানিস্তান জবরদখলের ২০ বছর পর মার্কিন সরকার ঘোষণা করেছে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর নাগাদ সে দেশ থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হবে।
বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদ দমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলে মার্কিন সেনাবাহিনী আফগানিস্তানে ২০ বছর অবস্থান করলেও সে দেশে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় তারা কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি বরং আফগান জনগণের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন কর্মকর্তারা আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা সরিয়ে এনে মধ্যএশিয়ার কোনো দেশে মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, এ অঞ্চলের তিনটি প্রভাবশালী দেশের সরকার অর্থাৎ ইরান, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করছে। এ অবস্থায় এ দেশগুলো চায়না আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে তাদেরকে ইরানের প্রতিবেশী মধ্যএশিয়ার কোনো দেশে স্থানান্তর করা হোক। মার্কিন কর্মকর্তাদেরকে এটা প্রমাণ করতে হবে এ অঞ্চলে সেনা মোতায়েনের ফলে তেহরান, মস্কো ও বেইজিংয়ের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু এটা প্রমাণ করা মার্কিন কর্মকর্তাদের জন্য কঠিন হবে। কেননা গত এক দশকে এ অঞ্চলের দেশগুলোর কাছে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে ইরান, রাশিয়া ও চীনের বিপরীতে আমেরিকা তাদেরকে সহযোগিতা করতে খুব একটা প্রস্তুত নয়।
মার্কিন গবেষণা কেন্দ্রের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যএশিয়ার দেশগুলো মার্কিন ঘাঁটি স্থাপনের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নয়। সে কারণে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর যুক্তরাষ্ট্রকে ভিন্ন পথ দেখতে হবে।
মধ্যএশিয়ায় মার্কিন তৎপরতার বিষয়টি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কিরগিজিস্তান ও উজবেকিস্তানে তারা সবচেয়ে বেশি তৎপর রয়েছে। কিন্তু তারপরও যুক্তরাষ্ট্র ওই দুই দেশে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে পারবে কিনা তাতে এখনো সন্দেহ রয়ে গেছে। কেননা ওই দুই দেশের অর্থনীতির ৩০ভাগ রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু তারপরও যেহেতু মার্কিন সরকার ওই অঞ্চলে তাদের সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পায়তারা করছে সে কারণেই রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়েছে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।