ইউরো ২০২০: ইংল্যান্ডের স্বপ্ন চূর্ণ করে চ্যাম্পিয়ন ইতালি
স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ৫৩ বছর পর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ঘরে তুলেছে ইতালি। ইতালি এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ইউরোর শিরোপা ঘরে তুলল। এর আগে ১৯৬৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ৬০ হাজার দর্শকের সামনে ইউরোর ফাইনালে মুখোমুখি হয় ইউরোপিয়ান ফুটবলের দুই পরাশক্তি। রোমাঞ্চকর এই ফাইনালে নির্ধারিত ৯০ মিনিট ও যোগ করা সময়ের খেলা ১-১ গোলে সমতা বিরাজ করায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
সেখানেও সমতা থেকে যায়। ফলে খেলার ফলাফল নির্ধারিত হয় টাইব্রেকারে। যেখানে ৩-২ গোলে জিতে শিরোপা জিতে নেয় ইতালি।
পেনাল্টি শুটআউটে ইতালির নায়ক গোলরক্ষক দোনারুমা। দুটি শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন তিনি।
পেনাল্টি শুট-আউটে প্রথমে গোল করেন ইতালির বেরারদি। এরপর গোল করেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন। কিন্তু বেলোত্তির শট বাঁচিয়ে দেন ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিকফোর্ড। এরপর গোল করে ইংল্যান্ডের হ্যারি ম্যাগুইর। ইতালির বোনুচ্চিও পান জালের দেখা। কিন্তু ইংল্যান্ডের রাশফোর্ডের শট পোস্টে প্রতিহত হয়। এরপর গোল করেন ইতালির বার্নারদেসচি। কিন্তু ইংল্যান্ডের সাঞ্চোর শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান দোনারুমা। অন্যদিকে ইতালির জর্জিনহোর শটও ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড। এরপর সাকার শট ঠেকিয়ে ইতালির জয় নিশ্চিত করেন দোনারুমা।

ওয়েম্বলিতে ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগ্যাটের ফর্মেশন চমক দেয় সবাইকে। খেলা শুরুর আগে এমন চমকে হতবাক হয়ে যায় প্রতিপক্ষ ইতালি। পুরো আসর জুড়ে ৪-২-৩-১ এবং ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেললেও, এদিন ৩-৪-২-১ ফর্মেশনে মাঠে নামে থ্রি লায়নরা। তবে প্রথাগত ফর্মেশন থেকে বের হননি মানচিনি।। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে কর্নার কিক পায় ইতালি। কর্নার থেকে ভেসে আসা বল ক্লিয়ারই করা নয় শুধু নিজেদের নিয়ন্ত্রণেও ধরে রাখে ইংল্যান্ড। উঠে যায় কাউন্টার অ্যাটাকে। ইতালির বক্সের ডান পাশ থেকে বাম পাশে লম্বা পাস দেন কিয়েরান ট্রিপিয়ার। দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসা লুক শ ডান পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন তাতে। মুহূর্তেই বলটি জড়িয়ে গেল ইতালির জালে।
নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক গোলের দেখা ইউরোর ফাইনালে এসে পেলেন লুক শ। ইউরো কাপের ইতিহাসে একটি রেকর্ডও গড়লেন তিনি। ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে করা তার গোলটিই ইউরোর ফাইনাল ম্যাচে করা দ্রুততম গোল। ১৯৬৪ সালে পেরেদা ৬ মিনিটের মাথায় গোল করেছিলেন।
গোল হজম করার ৬ মিনিট পরেই সমতায় ফেরার সুযোগ পায় ইতালি। কিন্তু ইংল্যান্ডের পোস্ট লক্ষ্য করে শট নেওয়া ইনসাইনের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর ১৭তম মিনিটে এমারসন অফসাইডের আওতায় পড়লে ভেস্তে যায় ইতালির আক্রমণ। ২৮তম মিনিটে ইতালির ইনসাইনের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। ৩৫তম মিনিটে সিয়েসা সহজ সুযোগ নষ্ট করলে ব্যবধান কমাতে পারেনি ইতালি। যোগ করা সময়ে ভেরাত্তির আক্রমণ প্রতিহত করেন ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড। ফলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইংল্যান্ড।

দ্বিতীয়ার্ধেও জারি থাকে ইতালিয়দের আক্রমণের ধারা। ৫১ মিনিটের মাথায় ইনসাইনের আক্রমণ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৫৩তম মিনিটে ফের আক্রমণে ওঠে ইতালি। এবারও ইনসাইনের শট টার্গেটে ছিল না। দুই মিনিট পর ইংল্যান্ডের হ্যারি মাগুইর আক্রমণ শানান ইতালির বক্সে। কিন্তু তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ৫৭তম মিনিটে ইনসাইন শট নেন ইংল্যান্ডের পোস্ট লক্ষ্য করে। আক্রমণ প্রতিহত হয় পিকফোর্ডের দক্ষতায়। ৬২তম মিনিটে ফের ইংল্যান্ডের পতন রোধ করেন পিকফোর্ড। একটু পর সিয়েসার আক্রমণও প্রতিহত করেন তিনি।
অবশেষে ৬৭তম মিনিটে প্রতিপক্ষের রক্ষণের জটলা থেকে গোল করেন বোনুচ্চি। ইনসিনিয়ের কর্নারে বল কাছের পোস্টে পড়লে ভেরাত্তি গোলমুখে হেড নেন। শুরুতে সেই হেড ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড। কিন্তু তাকে পরাস্ত করে বল জালে জড়িয়ে দেন বোনুচ্চি। সেই সঙ্গে ইউরোর ফাইনালে সবথেকে বেশি বয়সে গোল করার রেকর্ডও গড়েন ইতালিয়ান ডিফেন্ডার ৩৪ বছর ৭১ দিন বয়সে ইউরোয় লড়াইয়ে গোল করার রেকর্ড গড়লেন তিনি। ১৯৭৬ সালে পশ্চিম জার্মানির হয়ে হলজেনবেইন ৩০ বছর বয়সে গোল করেছিলেন।
বোনুচ্চির গোলের পর আদতে দুই দলই তেমন ভালো কোনো আক্রমণ শানাতে না পারলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের একদম শেষদিকে ইংল্যান্ডের ফিলিপসের আক্রমণ ব্যর্থ হয়। ১০৭ মিনিটের মাথায় বার্নারদেসচির আক্রমণ প্রতিহত করেন পিকফোর্ড। যোগ করা সময়ে ক্রিস্তান্তের শট লক্ষভ্রষ্ট হয়। ফলে এখানেও দুই অর্ধই থাকে গোলশূন্য। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
পুরো ম্যাচে ৬৬ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের উদ্দেশে ১৯টি শট নেয় ইতালি, যার ছয়টি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে অধিকাংশ সময় খোলসবন্দী হয়ে থাকা ইংল্যান্ড শট নেয় মাত্র ৬টি, যার দুটি লক্ষ্যে।#