‘রুদবর’ শহরটিও গিলানের মধ্যে একটি সবুজ শ্যামল এলাকা। যেইতুন গাছ বা অলিভ গাছের সবুজে ঘেরা এই শহরটি। আর খনিজ জলের ধারাও রয়েছে প্রচুর। এখানে আরো রয়েছে ঐতিহাসিক মারলিক টিলাগুচ্ছ। এই টিলাগুলো রুদবর শহরটির মর্যাদা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের ভেতর থেকে এবং দেশের বাইরে থেকেও বহু মানুষ এই শহরটি দেখতে আসে।

গিলান প্রদেশের কেন্দ্রিয় শহর রাশত থেকে পঞ্চান্ন কিলোমিটার দূরে, কিংবা বলা যায় ফুমান শহর পেরুবার পর আরো পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এগিয়ে গেলে সবুজ গাছ গাছালি আর বন বনানীতে ঢাকা অপূর্ব এক পার্বত্য প্রকৃতির সৌন্দর্যময় এলাকাটিই হলো মসূলেহ। 

ইরানের শুমলে অবস্থিত বন্দরগুলোর মধ্যে বান্দার আনযালি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর তিনদিকে রয়েছে সমুদ্র এবং জলাভূমি আর একদিকে রয়েছে স্থলভূমি। বন্দরটির আয়তন চল্লিশ বর্গ কিলোমিটারের মতো। কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলে পড়েছে বন্দরটি। গিলান প্রদেশের কেন্দ্রিয় শহর রাশত থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে আর তেহরান থেকে ৩৮০ কিলোমিটার দূরে পড়েছে বান্দারে আনযালি।

গিলান হচ্ছে বৃষ্টি বাদলের প্রদেশ, গাছগাছালি আর বন জঙ্গলময় প্রদেশ, ধান আর রেশমের প্রদেশ, বহতা নদী আর বাসন্তী রঙের বুনোফুল, নীল শাপলা ফুল, হাঁস এবং হাস জাতীয় পাখিদের প্রদেশ। বর্ণনা থেকেই বোঝা যায় যে বেশ বিচিত্র এই প্রদেশটি। প্রকৃতির এই অনিন্দ্যসুন্দর লীলাবৈচিত্রের বাইরেও এখানে রয়েছে শহরকেন্দ্রিক সৌন্দর্যের অনেক নিদর্শন।

রাশত শহরের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মাঝে ‘মির্যা কুচাক খান জাঙালি’র কবর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা। এই কবর স্থাপনাটি ‘সোলায়মান দারাব’নামক গোরস্তানে অবস্থিত। এই গোরস্তানটি এতো বিখ্যাত হবার কারণ হলো উপনিবেশবাদীদের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ইরানকে রক্ষা করার জন্যে স্বাধীনতাকামী জনতার আন্দোলন সংগ্রামের কথা স্মরণ করিয়ে এটি। স্থাপনাটির নকশা ও পরিকল্পনা ইসলামের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর আদলে করা হয়েছে।

আজ গিলানের হস্তশিল্প সামগ্রীর মধ্য থেকে মৃৎ শিল্প নিয়ে কথা বলা যাক। ইংরেজিতে এই শিল্পকে পটারি বলে অভিহিত করা হয়। বেশিরভাগ গবেষক এবং পুরাতত্ত্ব বিশ্লেষকদের মতে এই পটারি বা মৃৎশিল্পের সূতিকাগার হলো ইরান। তার মানে হলো মৃৎশিল্পের প্রচলন ইরান থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিস্তৃতি লাভ করেছে বলে তারা বিশ্বাস করেন।

গিলান নামটি এসেছে ‘গিল’ থেকে। অবশ্য গিলান প্রদেশের নামকরণ নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। কোনো কোনো গবেষকের মতে এই এলাকায় ‘গেলায়ি’ নামের একটি গোত্রের বসবাস ছিল। কেউ কেউ আবার এই গিলায়ি’কে বলছেন ‘গেল্‌’ গোত্র। তো গিলায়ি কিংবা গেল্‌ যা-ই হোক না কেন এই গোত্রের নামের সাথে মিল রেখেই এলাকাটির নাম হয়ে গেছে গিলান।

আজ আমরা অন্য কোনো প্রদেশে যাবো বলে আপনাদের কথা দিয়েছিলাম। আপনারা ইরানের শোমলের কথা নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন। শোমল ফার্সি শব্দ। মানে হলো উত্তর। শোমলে ইরান মানে হলো ইরানের উত্তরাঞ্চল। এই শোমলে রয়েছে তিনটি প্রদেশ। গিলান, মযান্দারন এবং গোলেস্তন। আজ যাওয়া যাক গিলান প্রদেশের দিকে।

আমরা ইতোপূর্বে বলেছিলাম যে আর্দেবিল প্রদেশে অবস্থিত সাবালন পর্বতের বুকের ভেতর ঘুমিয়ে আছে ভয়াবহ আগ্নেয়গিরি। এই আগ্নেয়গিরির কারণেই এখানকার আশেপাশের বহু এলাকায় গরম জলের ফোয়ারা বা ধারার সৃষ্টি হয়েছে। এই ফোয়ারাগুলোর খ্যাতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে এবং এগুলোর চিকিৎসাগুণের কথা জানাজানি হয়ে যাবার ফলে সারা বছর ধরে  হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে ছুটে আসে এখানে।

আমরা ইরানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ আর্দেবিলের কেন্দ্রিয় শহর আর্দেবিলের বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন ঘুরে ঘুরে দেখে বেড়িয়েছিলাম। বেড়াতে বেড়াতে আমরা দেখেছিলাম এখানকার এখানকার প্রাচীন বাজার কমপ্লেক্স, জুমা মসজিদ এবং কবরস্থানসহ আরো অনেক স্থাপনা। আজকের আসরে আমরা যাবো এই প্রদেশের একটি উপশহর “মিশকিন শাহরে”। সেখানকার দর্শনীয় বিভিন্ন স্থান ও কীর্তির সাথে পরিচিত হবার চেষ্টা করবো।