ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭ ২০:১৭ Asia/Dhaka

আমরা ইতোপূর্বে বলেছিলাম যে আর্দেবিল প্রদেশে অবস্থিত সাবালন পর্বতের বুকের ভেতর ঘুমিয়ে আছে ভয়াবহ আগ্নেয়গিরি। এই আগ্নেয়গিরির কারণেই এখানকার আশেপাশের বহু এলাকায় গরম জলের ফোয়ারা বা ধারার সৃষ্টি হয়েছে। এই ফোয়ারাগুলোর খ্যাতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে এবং এগুলোর চিকিৎসাগুণের কথা জানাজানি হয়ে যাবার ফলে সারা বছর ধরে  হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে ছুটে আসে এখানে।

খনিজ গরম জলের এইসব ধারা আল্লাহর দেওয়া এক বিরাট সম্পদ। এই জল এখন বহু রকমের রোগের প্রতিকারের জন্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে ট্যুরিস্টরাও ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট হয়ে বেড়ানোর জন্যে ছুটে আসছেন এখানে। এর ফলে দেশের জিডিপি’ও যে বেড়ে যায় তা তো আর বলারই অপেক্ষা রাখে না। যেহেতু এই খনিজ জলের ধারা এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেজন্যে আমরা আজকের আলোচনার শুরুতেই নজর দেবো এই জলের ফোয়ারাগুলোর দিকে।

আর্দেবিল প্রদেশের সাবালন আগ্নেয়গিরি পর্বতের উপস্থিতি এখানকার বিভিন্ন স্থানে জন্ম দিয়েছে গরম জলের অসংখ্য ধারার। এই ফোয়ারাগুলোর খ্যাতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে এবং এগুলোর চিকিৎসাগুণের কথা জানাজানি হয়ে যাবার ফলে সারা বছর ধরে  হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে ছুটে আসে এখানে। পর্যটকদের আনাগোণায় এখানকার তিনটি এলাকা সবসময়ই প্রায় মুখরিত থাকে। এলাকা তিনটি হলো ‘সারআইন’, ‘ভিলা দার্ক্‌’ বা ভিলা দাররে এবং ‘ভাকিল আবাদ’। জলের ফোয়ারা থাকার কারণে এই অঞ্চল তিনটির আবহাওয়া খুবই উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। এমনিতেই পুরো এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেশ আকর্ষণীয়। কিন্তু এই তিনটি এলাকা খনিজ জলের ধারার জন্যে বিশেষভাবে পরিচিতি পেয়েছে। চলুন এই ফোয়ারাগুলোর সাথে সংক্ষেপে পরিচিত হই।

সারআইনের গরম পানির কুপ

 

সার আইন শহরটির আয়তন চার শ হেক্টরের মতো। আর্দেবিল শহর থেকে এই শহরটির দূরত্ব আটাশ কিলোমিটার। সার আইন আর্দেবিলের দক্ষিণ পশ্চিমে পড়েছে। সাবালন পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত এই শহরটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ষোলো শ পঞ্চাশ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। সার আইন শহরে খনিজ জলের সর্বমোট বারোটি ফোয়ারা বা ধারা রয়েছে। এগুলোর কারণে শহরটি আলাদা একটা মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে। এ কারণে আর্দেবিল শহরের ট্যুরিস্ট আকর্ষণীয় শহরের তালিকায় সার আইনেরও অন্তর্ভুক্তি রয়েছে। প্রকৃতির চমৎকার এই লীলা বৈচিত্রের কারণে এখানে যে কেবল ইরানের ভ্রমণ রসিকেরাই বেড়াতে আসেন তেমনটি কিন্তু নয়, বরং এখানে দেশের বাইরে থেকেও বহু পর্যটক বেড়াতে আসেন। তাঁদের পদচারণায় ধন্য এবং মুখরিত হয়ে ওঠে এখানকার পরিবেশ।

ভিলা দাররে,সারআইন

সার আইনের গরম জলের ধারাগুলো বেশিরভাই গোসল করার কাজে কিংবা রোগ-ব্যাধি নিরাময়ের কাজে ব্যবহার করা হয়। এখানকার গরম জলের ধারাগুলোর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারাটি হলো ‘গভমিশে গুলি’। এই ধারাটিতে প্রচুর পরিমাণ পাণি আসে। তবে জলের এই ধারাটি সহনীয় পর্যায়ের গরম। সেজন্যে গোসল করতে মোটেই অসুবিধা হয় না। সার আইন শহরের মধ্যেই গভমিশে গুলি ফোয়ারাটি অবস্থিত। এর উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে ১৯৪০ মিটার। প্রতি সেকেন্ডে এই ঝর্ণাধারা থেকে ১৪০ লিটার পানি পড়ে। এ অঞ্চলের ঝর্ণাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ পানির উৎস এই ‘গভমিশে গুলি’। এই ঝর্ণাটির জলপতন অবিরাম ধারায় চলে আসলে যুগ যুগ ধরে। পানির উষ্ণতা ছেচল্লিশ সেন্টিগ্রেডের মতো। পানির স্বাদ কিছুটা টক। এ পানির কোনো রঙ নেই তবে সামান্য গন্ধ আছে। ক্লোরো বাইকার্বোনেট সোডিয়াম এবং ক্যালসিয়াম শ্রেণীর জলের শ্রেণীভুক্ত গভমিশে গুলি’র জল।

এখানকার গরম জলের প্রবাহের মাঝে ছোটো বড়ো কয়েকটি হাউজ বা জলাধার তৈরি করা হয়েছে গোসল করার সুবিধার্থে। এই গভমিশে গুলি’র জলের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞগণ ফ্রান্সের ‘বুরবুন দুলানসি’ ঝর্ণার জলের মতো বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। রোগের প্রতিকারমূলক বৈশিষ্ট্যের দৃষ্টিকোণ থেকে গরম জলের ঝর্ণা ‘গভমিশে গুলি’র বেশ কিছু গুণের কথা বলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি ক্ষমতা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে রিউম্যাটিজম বা বাতজ্বর প্রতিকারেরও অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য। একইভাবে হৃদরোগ নিরাময়েও এই ‘গভমিশে গুলি’ ঝর্ণার জল যথেষ্ট কার্যকরী বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ। সাবালনের এই সার আইনের ঔষধি জলের ধারা দিয়ে একটা কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়েছে। ঐ কমপ্লেক্সটি সমগ্র ইরানের জন্যে তো বটেই এমনকি পুরো মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে পরিগণিত।

পুরো কমপ্লেক্সটির ফাউন্ডেশান তৈরি করা হয়েছে সাত হাজার দুই শ বর্গ মিটারের ওপর। কমপ্লেক্সটি দোতলা। নারী পুরুষ উভয়ের জন্যে আলাদা আলাদাভাবে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। কমপ্লেক্সের ভেতরে তিনটি পুকুর রয়েছে। পুকুরগুলোর উপরে ছাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে চারটি ড্রাই স্টিম বাথ যাকে ফার্সি ভাষায় বলা হয় সোনয়ে খোশ্‌ক্। দুটি বাষ্পীয় সোনা’ও রয়েছে । দুটোর মাঝে পার্থক্যটা হলো সোনয়ে খোশকে বাষ্প খুব একটা থাকে না তবে উষ্ণতা থাকে আর বাষ্পীয় সোনাতে যে বাষ্পই বেশি থাকে তা তো নাম থেকেই বোঝা যায়। তবে এতেও উষ্ণতা থাকে। এগুলোর বাইরেও এখানে আরো রয়েছে ঠাণ্ডা পানির চৌবাচ্চা। অবশ্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়টি ছিল তাহলো ফিজিও থেরাপির সকল সরঞ্জাম এখানে ছিল।

সার আইন থেকে চার কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে ‘ভিলা দাররে’ নামে একটি গ্রাম ছিল। এখানে অনেক ফোয়ারা বা প্রাকৃতিক জলের উৎস রয়েছে। এর অধিকাংশই গ্যাসযুক্ত। তবে কোনোটা গরম জলের আবার কোনো কোনোটা ঠাণ্ডা কিংবা হালকা উষ্ণ। সার আইনের কাছাকাছি অবস্থানের কারণে এবং সেইসাথে খনিজ জলের ধারাগুলোর কারণে একটা চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। এই গ্রামেও পাঁচটি ফোয়ারা বা খনিজ জলের উৎসমুখ রয়েছে। এগুলো বর্ণনা শুনে কল্পনাই করা যাবে। তবে প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে বাস্তবে দেখার কোনো বিকল্প নেই।*

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/টি-৫৫/অ-৫৫/ই-৫৫