ইউরোপের স্ন্যাপব্যাক উদ্যোগের বিরুদ্ধে ইরানকে সমর্থন জানিয়েছে ন্যাম: আরাকচি
-
কাম্পালায় জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সমন্বয় ব্যুরোর ১৯তম মধ্যবর্তী মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) সদস্য দেশগুলো জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের ইউরোপীয় উদ্যোগের বিরোধিতায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
আব্বাস আরাকচি উগান্ডার কাম্পালায় ইরানের জাতীয় সংবাদ সংস্থা আইআরআইবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। কাম্পালায় ১৫–১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সমন্বয় ব্যুরোর ১৯তম মধ্যবর্তী মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক।
যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স (একত্রে ই–থ্রি নামে পরিচিত) কর্তৃক চালুকৃত তথাকথিত স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার মাত্র এক মাসেরও কম সময় পরে এই মন্তব্য করা হয়, যার লক্ষ্য ছিল ২০১৫ সালের পরিত্যক্ত পরমাণু চুক্তির অধীনে পূর্বে তুলে নেওয়া ইরানের বিরুদ্ধে সকল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী, ইরানের বিরুদ্ধে সব পারমাণবিক-সম্পর্কিত বিধিনিষেধ স্থায়ীভাবে শেষ হবে আগামী ১৮ অক্টোবর।
আরাকচি বলেন, ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণায় একটি ধারা রয়েছে যা 'অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ'। আর তা হলো- "জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্ন্যাপব্যাক ইস্যুতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতি সমর্থনের ঘোষণা।"
তিনি যোগ করেন, “এতে বলা হয়েছে- জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের দৃষ্টিতে ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব এখনো কার্যকর রয়েছে এবং এর সব ধারা ও সময়সূচি মেনে চলতে হবে। প্রস্তাবটির ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটি নির্ধারিত ১৮ অক্টোবর তারিখে শেষ হওয়া উচিত।
আরাকচি আরও জানান, ইরান, রাশিয়া, চীনসহ নিরাপত্তা পরিষদের আরও কয়েকটি দেশ এ বিষয়ে একই অবস্থান নিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের স্ন্যাপব্যাক সক্রিয়করণের দাবির বিরোধিতা করছে। এটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জন্য সত্যিই একটি বড় অর্জন, কারণ একশোরও বেশি দেশ—এই অবস্থানকে সমর্থন করেছে।”
গত ২৮ আগস্ট ই–থ্রি (E3) দেশগুলো ৩০ দিনের স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়া সক্রিয় করে। তেহরান এই পদক্ষেপকে অবৈধ বলে প্রত্যাখ্যান করে, যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৮ সালে যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা (JCPOA) থেকে একতরফা প্রত্যাহার ও ইউরোপীয় তিন দেশের অবৈধ ইরানবিরোধী নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে সঙ্গত করার সিদ্ধান্তকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে।
২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো দাবি করে যে, ইরানবিরোধী জাতিসংঘ প্রস্তাব ও সংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়েছে এবং জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রকে এসব বিধিনিষেধ কার্যকর করার আহ্বান জানায়।
সাক্ষাৎকারে আরাকচি আরও বলেন, ন্যাম জুন মাসে ইসরায়েল-আমেরিকার ইরানবিরোধী আগ্রাসনকে 'জঘন্য' ও 'অগ্রহণযোগ্য' বলে নিন্দা জানায় এবং এই অবৈধ হামলার মুখে ইরানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে। ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালে অন্তত ১,০৬৪ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও বেসামরিক নাগরিকও ছিলেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ন্যাম ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইসরায়েলের আরেকটি হামলারও নিন্দা জানিয়েছিল। ওই ঘটনায় লেবাননে হিজবুল্লাহর সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হাজার হাজার পেজার একই সঙ্গে বিস্ফোরিত হয়, যার পরপরই ফাঁদ পাতা ওয়াকিটকিও বিস্ফোরিত হয়। ওই সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ৩৯ জন নিহত এবং ৩,৪০০-রও বেশি মানুষ আহত হন, যাদের মধ্যে শিশুসহ অনেক বেসামরিক নাগরিকও ছিলেন, যারা বিস্ফোরণের সময় ওই যন্ত্রগুলোর কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন।#
পার্সটুডে/এমএআর/১৬