রিয়াদ ও আবুধাবির মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব ইয়েমেনকে কতটা প্রভাবিত করবে?
-
• ডানে: সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, বামে: আবুধাবির শাসক মোহাম্মদ বিন জায়েদ
পার্সটুডে- ইয়েমেনে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনুগত বাহিনীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে, যা দক্ষিণ ইয়েমেনের এডেনে অবস্থিত সরকারের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
পার্সটুডে জানিয়েছে, ইয়েমেনের দক্ষিণ ও পূর্বে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনুগত বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ কয়েক সপ্তাহ আগে শুরু হয় যা সাম্প্রতিক দিনগুলিতে তা প্রকাশ্যে তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণের অন্তবর্তী পরিষদ নামে পরিচিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনুগত ভাড়াটেদের সামরিক বাহিনী, বিশেষ করে হাদরামাউত প্রদেশে, সৌদি আরবের অনুগত এডেনে অবস্থিত সরকারের উপর তীব্র কূটনৈতিক, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে।
সংঘর্ষের তীব্রতা বৃদ্ধির পর, সৌদি আরবের অনুগত ইয়েমেনি প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল নামে পরিচিত সংস্থার প্রধান রাশাদ আল-আলিমি এবং তার কাউন্সিলের সদস্যরা সৌদি রাজধানী রিয়াদে যান এবং আমিরাতের ভাড়াটে সেনাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। রাশাদ আল-আলিমি হাদরামাউত এবং আল-মাহরায় অবস্থিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনুগত ভাড়াটে সেনাদেরকে তার সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হিসাবে বর্ণনা করেন এবং তাদের বাহিনী অবিলম্বে সেখান থেকে প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
সৌদি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষের একাধিক কারণ রয়েছে; সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল এডেন-ভিত্তিক সৌদি সমর্থিত সরকার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত ভাড়াটে সেনাদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের সংঘাত। এই সংঘাত পূর্ববর্তী বছরগুলিতেও বিদ্যমান ছিল, এমনকি সৌদি চাপে প্রতিষ্ঠিত যুদ্ধবিরতিও ক্ষমতার লড়াই থামাতে পারেনি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইয়েমেনে প্রভাব বিস্তার এবং দক্ষিণ ইয়েমেনের আরও অঞ্চল দখল করার প্রতিযোগিতা সৌদি আরবের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ।
২০১৫ সালে ইয়েমেনি যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মাস পরেই ইয়েমেনে প্রভাব বিস্তার নিয়ে সৌদি আরবের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয় এবং সময়ের সাথে সাথে তা তীব্রতর হয়। দক্ষিণ ইয়েমেনে প্রভাব বিস্তারের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনের দক্ষিণ ও পূর্ব অঞ্চলে ইসরায়েলের জন্য ঘাঁটি খুলে দিয়েছে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ইয়েমেনের দক্ষিণ ও পূর্ব অঞ্চলের ভৌগোলিক গুরুত্বের কারণে।
হাদরামাউত এবং আল-মাহরা প্রদেশে বিশাল তেল ও গ্যাসের মজুদ রয়েছে। এছাড়াও, এই দুটি প্রদেশ নিয়ন্ত্রণের অর্থ আরব সাগর ও বাব আল-মান্দাবে প্রবেশাধিকারও পাবে। এই বিষয়ে, ইয়েমেন প্রেস লিখেছে যে এই সংঘাতগুলো কেবল একটি আঞ্চলিক সংঘাত নয় বরং লোহিত সাগর, জ্বালানি রুট, কৌশলগত বন্দর এবং পূর্ব ইয়েমেনের প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বৃহত্তর প্রতিযোগিতার অংশ, যেখানে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলিও ভূমিকা পালন করে।
এই সংঘাতগুলি একদিকে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের জন্য দক্ষিণ ইয়েমেনে তার প্রভাব বৃদ্ধির এবং অন্যদিকে ফিলিস্তিন, লেবানন এবং এমনকি সানা ভিত্তিক ইয়েমেনি সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আক্রমণ ও অপরাধ শুরু করার সুযোগ তৈরি করতে পারে।
অবশেষে বলা যায়, ইয়েমেনে সৌদি ও আমিরাতের ভাড়াটে সৈন্যদের মধ্যে সংঘাতের ফলে রিয়াদ ও আবুধাবির মধ্যে সংঘাত বেড়েছে এবং পূর্ববর্তী বছরগুলির মতো জোটবদ্ধতারও কোনও লক্ষণ নেই। ইয়েমেন এখন এমন একটি দৃশ্য যেখানে দুটি প্রাক্তন অংশীদার, সম্পূর্ণ ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে, প্রক্সি বাহিনীর মাধ্যমে একে অপরের সাথে লড়াই করছে এবং এই সংঘাত অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।#
পার্সটুডে/এমআরএইচ/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।