ডিসেম্বর ১৮, ২০২১ ১৭:০৫ Asia/Dhaka

আজ আমরা শিশু-কিশোরদের মন-মানসিকতার ওপর সঙ্গীতের প্রভাব সম্পর্কে কথা বলব। সুরেলা বাক্য তথা সুর-লহরী মানুষের স্নায়ুকে কখনও করে বিষাদগ্রস্ত ও কখনও করে প্রফুল্ল।

সঙ্গীতের বক্তব্য ও সুরের ওঠা-নামা মানুষের আবেগকে উসকে দেয় এবং নানা ধরনের অনুভূতিকে করে উজ্জীবিত বা স্তিমিত। নবজাতক শিশুও শব্দ শেখার আগেই সঙ্গীতের সুরকে বুঝতে পারে এবং এমনকি তারা সঙ্গীতের সূরের অনুকরণও করতে পারে। মৃদু শব্দের সুর নবজাতকদের দেয় প্রশান্তি, বিশেষ করে ঘুমের সময় এ ধরনের সঙ্গীত তাদের সহজেই করে প্রশান্ত। ঘুম-পাড়ানি গানের বাক্যগুলো ছোট ছোট এবং সহজ-সরল হওয়া উচিত। এসব সঙ্গীত হওয়া উচিত কোমল ও কিছুটা দীর্ঘ। নবজাতকদের জামা কাপড় পরানোর সময় বা গোসল করানোর সময়ও ছোট ছোট কবিতা বা ছড়া-গান শোনাতে পারেন। শিশুর বুদ্ধি, অনুভূতি ও শরীরের ওপর সঙ্গীতের রয়েছে ব্যাপক প্রভাব।

গবেষণায় দেখা গেছে যেসব শিশু সঙ্গীত শুনে বড় হয় তাদের বুদ্ধির বিকাশে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। বাচ্চাদের প্রফুল্ল ও শান্ত রাখার কাজেও মিউজিক বা সঙ্গীতের ব্যবহার দেখা যায়। এটা তাদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় বিনোদন। বাদ্যযন্ত্রের সুর কখনও কখনও শিশুদেরকে টেলিভিশন দেখার কথাও ভুলিয়ে দেয়। শিশুদেরকে মিউজিকের অনুশীলন করালে তারা প্রশান্ত হয় এবং তাদের উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তাও দূর হয়ে যায়। শিশুর স্কুল-জীবন বা ছাত্র জীবনেও সঙ্গীতের নানা ধরনের ইতিবাচক প্রভাব থেকে যায়। পরীক্ষার সময় ও নানা ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময়ও সঙ্গীত প্রশান্তি বয়ে আনে।

তবে কোনো কোনো সঙ্গীত শিশু-কিশোরদেরকে মন্দ কাজের দিকে আগ্রহী করে। ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের সঙ্গীত শোনা সব বয়সের মুসলমানের জন্যই নিষিদ্ধ।

কোনো কোনো সঙ্গীত বা বীরত্ব-গাঁথা মানুষের মধ্যে বীরত্ব, সাহসিকতা, দেশপ্রেম, ধার্মিকতা, ন্যায়বিচারবোধ, মজলুমের প্রতি সহানুভূতি ও জালিমের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ সংগ্রামের চেতনা জাগিয়ে তোলে। এ ধরনের সঙ্গীত শিশু-কিশোরদের জন্য খুবই জরুরি। অন্যদিকে এক ধরনের সঙ্গীত মানুষের নীতি-নৈতিকতার জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং তা কেবল ক্ষতিকর উন্মাদনা, উচ্ছৃঙ্খল বা মাতলামি সৃষ্টি করে মাত্র। ইসলাম এ ধরনের সঙ্গীত শোনাকে বড় ধরনের পাপ হিসেবে বর্জন করতে বলে।

যেসব শিশু মানসিক বা শারীরিক ক্ষেত্রে দুর্বল তথা শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী এ ধরনের শিশুকে সুস্থ করে তোলার জন্য ও তাদের আচরণকে সুন্দর করতে সঙ্গীতের ব্যবহার দেখা যায়। এ ধরনের সঙ্গীত তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সহায়তা করে।  একই কাজে সেতার ও তবলাসহ নানা ধরনের সহজ-সরল বাদ্যযন্ত্রও ব্যবহার করা হয়। সঙ্গীত অন্ধদের ওপর বিস্ময়কর প্রভাব রাখে এবং এটি তাদের শ্রবণশক্তিও বাড়িয়ে দেয়।

ক্ষতিকর সঙ্গীত যে কেবল শিশু-কিশোরদের জন্য ক্ষতিকর তা নয়, এ ধরনের সঙ্গীত পরিবার ও সমাজ এবং সংস্কৃতির জন্যও ক্ষতিকর। এ ধরনের সঙ্গীত বা গান শিশুদেরকে হিংস্র ও ঝগড়াটে করে তোলে।

আধুনিক যুগের পশ্চিমা মডেলের নানা সঙ্গীত ও বিশেষ করে বেশিরভাগ পপ গানে শিশু-কিশোরদের জন্য শিক্ষণীয় কিছুই থাকে না। এ ধরনের সঙ্গীত তাদের সৃষ্টিশীলতা, মনোযোগ ও যথাযথ হওয়ার প্রবণতা বাড়াতেও কোনো ভূমিকা রাখে না। তাই শিশু-কিশোরদেরকে অনুপযোগী গান বা সঙ্গীত থেকে দূরে রাখতে হবে। ক্লাসিক বা ধ্রুপদী সঙ্গীত ও প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী লোকগীতি তাদের জন্য ইতিবাচক বা বেশি উপযোগী। পপ, র‍্যাপ ও রক মিউজিকে থাকে অসংলগ্ন তথা সম্পর্কহীন শব্দ বা ধ্বনি, একই ধ্বনির অতিরিক্ত পুনরাবৃত্তি ও অতি উচ্চ মাত্রার শব্দ বা গর্জন। আর তাই এসব সঙ্গীত মানুষের মনোযোগকে করে দেয় এলোমেলো এবং বয়ে আনে মানসিক ও অনুভূতিগত বিকৃতি ও অযৌক্তিক টেনশন ।  সঙ্গীত শেখাতে গেলেও শিশু-কিশোরদের ক্লাসিক সঙ্গীতই শেখানো উচিত।

সঙ্গীতের ভালো সুর ও কথা মানুষকে যোগায় পবিত্র আনন্দ। ক্লাসিক মিউজিক শোনার পাশাপাশি পবিত্র কুরআনের মধুর সুরের তিলাওয়াত ও অর্থ শোনাও মুসলিম শিশু-কিশোরদের জন্য খুবই জরুরি, বরং এই সঙ্গীত অন্য সব সঙ্গীতের চেয়ে বেশি কল্যাণকর। কুরআনের শব্দ গঠন ও বাক্য-বিন্যাস এমনই যে তার তিলাওয়াতে সবচেয়ে সুন্দর ও ছন্দময় মধুর সুরধ্বনি সৃষ্টি হয়। কুরআন তিলাওয়াত আত্মার সবচেয়ে ভালো খাদ্য। পবিত্র কুরআনের সুর মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তোলে পবিত্র ও কোমল নানা অনুভূতি। এর ফলে তাদের বিবেক-বুদ্ধি হয় প্রখর, প্রোজ্জ্বল ও আধ্যাত্মিক সুরভিতে ভরপুর। পবিত্র কুরআনের গভীর ও প্রত্যক্ষ প্রভাবের বিষয়ে মহানবী (সা) বলেছেন, 'সব কিছুরই রয়েছে অলঙ্কার বা সাজ-সজ্জা। পবিত্র কুরআনের সুন্দর সাজ হল এর সুন্দর ধ্বনি।'

শেষ কথা হল প্রশান্তি অর্জনের ও বিনোদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল সঙ্গীত। খাবার যেমন পরিমিত মাত্রায় ও বাছাই করে খেতে হয় তেমনি সঙ্গীতও শুনতে হবে পরিমিত মাত্রায় ও কেবল ভালো সঙ্গীতই শুনতে হবে। কখনও কখনও নীরবতাই মানুষের মধ্যে বয়ে আনে প্রশান্তি। কখনও কখনও সব ধরনের বাদ্য যন্ত্র থেকে দূরে সরে শুনতে হবে পাতার মর্মর ধ্বনি, পাখিদের কলতান, ঝর্ণার গান, নদীর স্রোত ও সমুদ্র স্রোতের কল্লোল, সামুদ্রিক পাখিদের মিষ্টি ডাক ও বৃষ্টির মনোরম রিমঝিম রিমঝিম মিষ্টি তালের সুর। আপনার শিশু-কিশোরদের মাঝেমধ্যেই প্রকৃতির এইসব অকৃত্রিম সঙ্গীত শোনাতে কখনও ভুলেন না।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ