জানুয়ারি ২৭, ২০২২ ১৫:২৮ Asia/Dhaka
  • আফগানিস্তানের উগ্র ওয়াহাবি সালাফি
    আফগানিস্তানের উগ্র ওয়াহাবি সালাফি

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফগানিস্তানের ঘটনাবলী বিশেষ করে তালেবান গোষ্ঠী ওই দেশটির ক্ষমতা নেয়ার পর উগ্র তাফকিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের একের পর এক হামলায় শুধু যে শত শত নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে তাই নয় একইসঙ্গে দেশটির সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোও হুমকির মুখে রয়েছে এবং তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

আজকের আলোচনায় আমরা আফগানিস্তানে উগ্র সালাফি ও তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের প্রভাব বিস্তারের কারণ  সম্পর্কে কথা বলবো। আলোচনার শুরুতেই আজ আমরা আফগানিস্তানে উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস'র অবস্থান নিয়ে আলোচনা করব।

গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের তালেবান কোনো বাধা ছাড়াই রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করে। তাদের কাবুল প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে মার্কিন সেনারাও আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায়। আমেরিকা ও ন্যাটো জোটের সব সেনারা আফগানিস্তান ত্যাগ করায় দেশটির তালেবান এবং এমনকি সাধারণ মানুষও ব্যাপক খুশী হয়। সবাই ভেবেছিল আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটতে চলেছে এবং দেশে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ তখন বলেছিলেন, আমেরিকা বহু বছর আফগানিস্তানে অবস্থান করেছিল এবং দেশটির সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতো এ অবস্থায় মার্কিন সেনারা চলে গেলেও দায়েশ বা আইএসসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হুমকি রয়ে গেছে। তারা দেশকে ফের অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

ইরাক ও সিরিয়ায় আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের অন্যদেশের সামরিক নীতির আলোকে অনেক আগেই এটা ধারণা করা হচ্ছিল তারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবে এবং ওই দেশটিতে এখন আর তাদের কোনো কাজ নেই। ফলে অনেকে মনে মনে খুশীও হয়েছিল। কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আফগানিস্তানে বিদেশি ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকার বিষয়ে সেদেশের নতুন সরকার ও জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। দেখা গেছে তালেবান ক্ষমতা নেয়ার পর কিছু দিন যেতে না যেতেই দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশের জালালাবাদ শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে এবং দায়েশ বা আইএস সন্ত্রাসীরা এ ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

অথচ তালেবান ঘোষণা করেছিল আফগানিস্তানে দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের আর কোনো অস্তিত্ব নেই এবং এ বিশ্বাস থেকে তারা দায়েশের ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে পড়েছিল। আইএস জঙ্গিরা প্রথমে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে তালেবান সদস্য ও তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে ছোটোখাটো হামলা চালাতো। ফলে তালেবানও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার কিংবা হত্যা করতো।

আফগানিস্তানে মসজিদে আইএস বা সালাফি জঙ্গিদের হামলা

কিন্তু দায়েশ ও তালেবানের মধ্যকার এ সংঘাত কেবল দেশটির পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি।

নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়ার জন্য আইএস জঙ্গিরা প্রথমে কুন্দুজ প্রদেশের সাইদাবাদ শহরে শিয়া মসজিদে ভয়াবহ হামলা চালায়। এতে বহু মুসল্লি হতাহত হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই একই প্রদেশের ফাতেমিয়া  মসজিদেও তারা আরেকটি নৃশংস হামলা চালায়। সেখানেও বহু মানুষ নিহত হয়। এ অবস্থায় দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের হামলা কেন দেশটির পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানী কাবুলের দিকে বিস্তার লাভ করেছে এবং এরপর উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের দিকেও হামলার ঘটনা ঘটছে সেটাই এখন প্রশ্ন।

তালেবান রাজধানী কাবুলসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করার পরপরই বিভিন্ন জেলখানায় আটক বন্দিদেরকে মুক্তি দেয়। এর আগের সরকারগুলোর আমলে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কারণে তাদেরকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। এসব বন্দীদের অনেকেই দায়েশ বা আইএস জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য এবং তারা বহু ভয়ানক অপরাধযজ্ঞে জড়িত ছিল। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর কাবুলের পুল চারখি কারাগার ও কাবুলের কাছেই অবস্থিত বাগরাম জেলখানা থেকে হাজার হাজার বন্দীকে ছেড়ে দিয়েছিল।

মুক্তি পাওয়া এসব বন্দীর অনেকে ছিল আইএস জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য এবং আগের সরকারগুলোর আমলে বিচার করে তাদেরকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। অনেক বিশেষজ্ঞ কোনো যাচাই বাছাই না করেই এসব বন্দীদের মুক্তি দেয়ার তালেবানি পদক্ষেপকে অনেক বড় ভুল বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তালেবান দাবি করছে তারা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আগেই এসব জঙ্গিরা জেলখানা থেকে পালিয়েছিল।

বাগরাম জেলখানা একসময় মার্কিন সেনারা নিয়ন্ত্রণ করত। এরপর তাদের অনুগত আফগান সরকারি সেনারা এই জেলখানার দায়িত্ব নিয়েছিল। এ অবস্থায় মার্কিনীদের মাধ্যমে আইএস জঙ্গিরা জেলখানা থেকে পালিয়েছে বলে তালেবান যে দাবি করছে তা বিবেচনার দাবি রাখে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, তালেবান যখন রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করছিল তখন আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল কাছেই বাগরাম জেলখানায় প্রায় ২০০ আইএস জঙ্গি আটক রয়েছে তাদেরকে যেন ছেড়ে দেয়া না হয় এবং তাদেরকে যেন প্রতিবেশী একটি দেশের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু আমরা জেলখানায় গিয়ে দেখি সেখানে কোনো বন্দী নেই এবং সবাই পালিয়ে গেছে অথবা তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাই কেউ কেউ মনে করেন জেলখানা থেকে যেসব জঙ্গি পালিয়ে গেছে তারাই কাবুল, কুন্দুজ ও কান্দাহারে সাম্প্রতিক এসব নৃশংস হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

বর্তমানে দায়েশ বা আইএস জঙ্গি গোষ্ঠী আফগানিস্তানের নিরাপত্তার জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে শিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকাণ্ড তালেবানকে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। এ পরিস্থিতি শুধু যে তালেবানকে সংকটে ফেলেছে তাই নয় একইসঙ্গে প্রতিবেশীসহ এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও চিন্তিত। কেননা আফগানিস্তানে জঙ্গি হামলা ও নিরাপত্তাহীনতা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আবারো শরণার্থীদের ঢল নামবে অন্যদিকে আফগানিস্তানেও দরিদ্রতা বাড়বে এবং উগ্র সন্ত্রাসবাদের আরো বিস্তার ঘটবে। এর আগে এই জঙ্গিরাই ইরাক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়ে ইসলামের দুর্নাম রটিয়েছিল। 

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পশ্চিম এশিয়ার পর আইএস জঙ্গিরা এখন আফগানিস্তানেও তাণ্ডব  শুরু করেছে এবং ক্রমেই তারা নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এদের পেছনে কয়েকটি আরব দেশের সমর্থন ও সহযোগিতা রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানেও এদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।#

পার্সটুডে/এমআরএইচ/

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

ট্যাগ