ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২২ ১৫:৪৪ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর নাম হল ওয়ালি যার অর্থ অভিভাবক বা পৃষ্ঠপোষক, সাহায্যকারী, বন্ধু ও সব বিষয়ের সমস্যা সমাধানকারী। এই নাম ও শব্দ এতই গুরুত্বপূর্ণ যে তা পবিত্র কুরআনের ২০১টি বাক্য বা আয়াতে বিভিন্ন আঙ্গিকে স্থান পেয়েছে।

যিনি ওয়ালি ও এই হিসেবে তিনি যার অভিভাবক তাদের দুজনের মধ্যেই সম্পর্ক হয় খুবই ঘনিষ্ঠ। অন্যদিকে দুই বস্তু বা সত্ত্বার মধ্যে বাহ্যিক নৈকট্য থাকলেও তাদের মধ্যে সম্পর্ক যদি খারাপ হয় বা কোনো বন্ধুত্ব কিংবা ঘনিষ্ঠতা না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে ওয়ালি শব্দ ব্যবহার করা হয় না আরবি সাহিত্যের রীতি অনুযায়ী। ওয়ালি হলেন সর্বাবস্থায় প্রত্যক্ষ সঙ্গী ও সাহায্যকারী এবং অভিভাবক। অন্য কথায় তারা দুজনেই একান্তই বন্ধু বা পরস্পরের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী এবং অন্য কোনো কিছুর ব্যবধান তাদের মধ্যে নেই।

যখন ফেরাউনের অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ থেকে বনি ইসরাইলকে মুক্ত করতে তাদেরকে নিয়ে হযরত মুসা (আ) নবী নীল নদের তীরে পৌঁছলেন তখন তাদের পিছে পিছে ছুটে আসছিল ফেরাউন ও তার সেনাদল। এ অবস্থায় মুসা নবীর সঙ্গে থাকা অনেকেই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। কারণ পেছনে ছুটে আসছে প্রাণের শত্রু  ও সামনে হল নীল দরিয়া! কিন্তু এ অবস্থায়ও মুসা নবী তাঁর ওয়ালি তথা মহান আল্লাহর সাহায্যের ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও দ্বিধান্বিত ছিলেন না। সুরা শোয়ারার ৬০ ও ৬১ নম্বর আয়াতে বিষয়টি এভাবে এসেছে:  যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখল, তখন মূসার সঙ্গীরা বলল, আমরা যে ধরা পড়ে গেলাম। মূসা বলল, কখনও নয়, আমার সাথে আছেন আমার পালনকর্তা। তিনি আমাকে পথ দেখাবেন। - এরপরের ইতিহাস তো আমাদের সবারই জানা। মহান আল্লাহর নির্দেশে মুসা নবী তাঁর লাঠি দিয়ে নিল নদে আঘাত হানলে তাতে শুকনো পথ বেরিয়ে আসে এবং বনি ইসরাইল নিরাপদে নদী পার হয়ে যায়। অন্যদিকে তাদেরকে বন্দি করতে ছুটে আসা ফেরাউন ও তার সেনাদল একইস্থানে এসে পানিতে ডুবে মারা যায়।

মালিক বা প্রভুও ওয়ালি শব্দের অন্যতম অর্থ। মানুষ তার নিজের শরীরসহ অনেক কিছুর ওপর মালিকানা রাখলেও তা প্রকৃত বা নিরঙ্কুশ মালিকানা নয়। বরং তা অস্থায়ী মালিকানা বা আমানত মাত্র। তাই  মহান আল্লাহ আমাদের সব কিছুর প্রকৃত মালিক তথা ওয়ালি হিসেবে যখন খুশি তখনই আমাদের জীবনসহ সব কিছু নিয়ে নিতে পারেন।  মহান আল্লাহ একইভাবে আমাদের চোখ, কান, নাক, হাত, পা- এসবও কেড়ে নিতে পারেন যে কোনো সময়।  

সুরা বাক্বারার ১০৭ নম্বর আয়াতে ওয়ালি শব্দ ব্যবহার করে মহান আল্লাহ বলেছেন:

তুমি কি জান না যে, আল্লাহর জন্যই নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডলের প্রকৃত আধিপত্য? আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন বন্ধু বা ওয়ালি ও সাহায্যকারী নেই।

এর কারণ নিখিল বিশ্বের সব কিছুর সৃষ্টি, এসবের স্থিতি, স্থায়িত্ব ও সংরক্ষণ, পরিচালনা ও ধ্বংস সাধন -এসবই রয়েছে মহান আল্লাহর হাতে।

আমরা আসমাউল হুসনা অনুষ্ঠানের কোনো কোনো পর্বে এটা জেনেছি যে মহান আল্লাহর কোনো কোনো নাম সবার বা সর্বসাধারণের জন্য প্রসারিত এবং কোনো কোনো নাম কেবল বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য বা তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন: মহান আল্লাহর রাহমান নাম তথা রাহমানিয়াত সৃষ্টিকুলের সব কিছুর জন্য প্রযোজ্য। এ জন্যই সুরা আ'রাফ-এর ১৫৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: আমার রহমত সব কিছুতে ছড়িয়ে আছে।– অর্থাৎ মরুভূমির পাথরের ক্ষুদ্র কণাগুলোও আল্লাহর রহমতের ঋণে আবদ্ধ। অন্যদিকে আল্লাহর রাহিম নাম তথা রাহিমিয়্যাত কেবল মুমিনদের জন্য প্রযোজ্য।  মহান আল্লাহর রাব বা রব নামও সব কিছুর প্রভু বা প্রতিপালক হওয়ার অর্থ তুলে ধরে। কিন্তু ওয়ালি নাম কেবল বিশেষ ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য।

সুরা বাক্বারার ২৫৭ নম্বর আয়াতে ওয়ালি শব্দ ব্যবহার করে মহান আল্লাহ বলেছেন:

যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের ওয়ালি বা অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরি করে তাদের ওয়ালি বা অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। -বাজনা

এটাও মনে রাখা দরকার প্রত্যেক মানুষই মুমিন ও অমুমিন নির্বিশেষে ওয়ালির মুখাপেক্ষী। আল্লাহ যদি কারো ওয়ালি না হন তখন তাদের অভিভাবক বা পৃষ্ঠপোষক হয় নানা ধরনের শয়তান তথা মিথ্যা প্রভু বা বাতিল শক্তিগুলো। আর এইসব শক্তি তাদেরকে মানবীয় মূল্যবোধ থেকে দূরে সরিয়ে বিভ্রান্তি ও অধঃপতনের দিকেই তাদের নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

ওয়ালি শব্দের অন্যতম অর্থ বন্ধু বা সাহায্যকারী। আল্লাহ ধার্মিক তথা খোদা-সচেতনদের ওয়ালি। খোদা-সচেতনতায় ও খোদাভীরুতায় খুব উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হিসেবে গৌরবময় বিশেষণের অধিকারী হন আল্লাহর পক্ষ থেকে। স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহ তাঁদের ভালবাসেন ও তাঁদের সাহায্য করেন। পবিত্র কুরআনের আয়াত অনুযায়ী মহান আল্লাহ সৎকর্মশীল বান্দাদের ওয়ালি। (আমার সহায় তো হলেন আল্লাহ, যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। বস্তুত; তিনিই সাহায্য করেন সৎকর্মশীল বান্দাদের। - সুরা আরাফ-১৯৬) একইভাবে তিনি মুত্তাকি বা খোদা-সচেতনদেরও ওয়ালি। এই শ্রেণীর ব্যক্তিরা তথা মুত্তাকি ও সৎকর্মশীল বা সালিহিন যারা তারা সৎকাজ ও ঈমানের মাধ্যমেই আল্লাহর বন্ধুত্ব অর্জনের পথ খুলেছেন। আর এভাবেই তারা আল্লাহর ওয়ালি হন। 

নবী-রাসুলগণ ছাড়াও মহান ইমামরাও ওয়ালি বা নেতা হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছেন পবিত্র কুরআনে। যেমন, সুরা মায়েদার ৫৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

তোমাদের নেতা তো আল্লাহ ও তাঁর রসূল এবং এমন ঈমানদার যারা নামায কায়েম করেন,  আর রুকুতে থাকা অবস্থায় যাকাত দেন।- তবে এখানে মনে রাখতে হবে নবী-রাসুলরা ও ইমামগণ মানুষের এমন ওয়ালি বা নেতা যে তাঁরা স্বাধীন বা নিরঙ্কুশ নেতা নন, বরং তারাও আল্লাহর অভিভাবকত্ব বা ওলিত্বের মুখাপেক্ষী।  একমাত্র আল্লাহই হলেন মানুষের প্রকৃত ওয়ালি। নবী-রাসুল ও ইমামগণ হলেন আল্লাহর ওলিত্ব বা বেলায়াতের প্রকাশ মাত্র।#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ০৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।