আসমাউল হুসনা (পর্ব-৫৬)
সব সুন্দর ও সর্বোত্তম নামের অধিকারী মহান আল্লাহ। মহান আল্লাহর অনেক নাম আমরা প্রায়ই শুনে থাকি যা মানুষও ব্যবহার করে নামের অংশ হিসেবে: যেমন আবদুল হামিদ তথা হামিদের দাস, আবদুল কারিম বা কারিমের দাস, আবদুর রাহিম বা রাহিমের দাস, আবদুর রাহমান বা রাহমানের দাস ইত্যাদি।
মহান আল্লাহর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর নাম হামিদ। যার অর্থ চির-প্রশংসনীয় বা চির-পছন্দনীয়। পবিত্র কুরআনে ১৭ বার এসেছে এই নাম। হাম্দ্ শব্দটি থেকে এসেছে হামিদ। হাম্দ্ অর্থ প্রশংসা যা তিরস্কার ও প্রশংসার বিপরীত। মহান আল্লাহর এই নামের ব্যবহার মাহমুদ বা প্রশংসিত ও হামিদ বা প্রশংসাকারী হিসেবেও দেখা যায়।
মহান আল্লাহ সৃষ্টিকুলের সব কিছুর স্রস্টা। তিনি সৃষ্টিকুলকে দিয়েছেন অসংখ্য নেয়ামত। তাই সমস্ত প্রশংসা পাওয়ার একমাত্র উপযুক্ত সত্ত্বাই হলেন মহান আল্লাহ। এ ছাড়াও তিনি তাঁর দাসদের ভালো কাজের প্রশংসা করেন ও এসব কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। দাসদের খুব ক্ষুদ্র ভালো কাজেরও তিনি ব্যাপক পুরস্কার দেন। আর এ জন্যই মহান আল্লাহ হচ্ছেন হামিদ বা প্রশংসাকারী।
সব সৃষ্টিই মহান আল্লাহর প্রশংসা করে। পবিত্র কুরআনের ভাষায় সাত আকাশ ও জমিনের যা কিছু আছে সবই মহান আল্লাহর প্রশংসায় ও পবিত্রতা ঘোষণায় মশগুল। (আসরা,৪৪) তবে এর অর্থ এটা নয় যে মহান আল্লাহ সৃষ্টিকুলের প্রশংসার মুখাপেক্ষী বা তাদের প্রশংসা ছাড়া মহান আল্লাহ প্রশংসিত নন! কেউ মহান আল্লাহর প্রশংসা না করলেও তিনি প্রশংসিত বা হামিদ। সুরা ফাতিহার দ্বিতীয় আয়াতেও বলা হয়েছে: সব প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহর জন্যই নির্ধারিত। অর্থাৎ আমরা যে কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য যারই বা যে কোনো কিছুরই প্রশংসা করি না কেন সব প্রশংসা আসলে আল্লাহরই করা হয়। কারণ, সব কিছুর মূল শক্তি হচ্ছেন মহান আল্লাহ। অন্যদিকে মহান আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করার সাধ্যও কারো নেই। মানুষের মধ্যে আল্লাহকে যারা যত মাত্রায় চিনেছে তাদের প্রশংসাও তত উন্নত মানের। কিন্তু আল্লাহ এত মহান ও উচ্চ যে তাঁকে পুরোপুরি কেউই কখনও চিনতে বা জানতেও পারবে না। মহান আল্লাহর প্রশংসা করাটাও মহান আল্লাহরই দেয়া এক বড় অনুগ্রহ। মানুষের মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ ও প্রশংসার চেতনা যদি না থাকে তাহলে সে আসলে পশুর চেয়েও নীচু প্রকৃতির।
মহান আল্লাহর হামিদ নাম পবিত্র কুরআনে দশ বার গ্বানি غنی এবং কয়েকটি বিশেষ নাম যেমন, আযিয عزیز, মাজিদ مجید ও হাকিম حکیم- নামের সঙ্গে একবার করে এসেছে। পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতের বক্তব্য অনুযায়ী বিশ্বের সব মানুষও যদি মহান আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয় তবুও মহান আল্লাহ হামিদ ও গ্বানি এবং বিশ্বের সব মানুষও যদি মহান আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে তাতেও মহান আল্লাহর বিন্দুমাত্রও ক্ষতি হবে না। সুরা লোকমানের ১২ নম্বর আয়াতে যেমনটি বলা হয়েছে: যে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে নিজের জন্যই বা নিজের কল্যাণেই তা করে, আর যে কুফ্রি করে তথা অকৃতজ্ঞ হয় সে জেনে রাখুক মহান আল্লাহ চির-অমুখাপেক্ষী ও প্রশংসিত।
সৃষ্টি জগতের সব কিছুই মহান আল্লাহর মালিকানাধীন। তাই মানুষের প্রশংসার মুখাপেক্ষী নন তিনি। বরং মানুষ সব সময়ই আল্লাহর মুখাপেক্ষী। সুরা ফাতির-এর ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: হে মানুষেরা! তোমরাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী। আর একমাত্র আল্লাহই চির-অমুখাপেক্ষী ও প্রশংসিত।
হামিদ নাম যখন সিরাত্ব বা পথ শব্দের পর আসে তখন তা হয় স্থিতিশীলতা বা স্থায়ীত্ব ও দৃঢ়তার অর্থবোধক। এর সঙ্গে যারা হয় সম্পর্কিত তারা পার্থিব জীবনে পরকালীন সৌভাগ্যের পথে হয় পরিচালিত। সুরা ইব্রাহিমের প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:
আলিফ-লাম-রা; এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি-যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন-পরাক্রান্ত, সকল প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তা তথা আযিয ও হামিদ-এর নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে।
ইসলাম এবং এর জ্ঞান ও বিধি-বিধানই সঠিক ও সহজ-সরল পথ। যে ইসলামের সব শিক্ষাকে গ্রহণ করে ও তাতে অবিচল থাকে সে সহজ-সরল পথেই রয়েছে। কিন্তু সহজ সরল পথের চেয়েও উন্নত পথ হল হামিদ-এর পথ। সিরাতুল মুস্তাকিম-এ বিধি-বিধান ও অধিকার এবং করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ের কথা এসেছে। আর হামিদ ও প্রশংসিতের পথ অনেক উঁচু। এ পর্যায়ের মুমিনদের আচরণ এতই সুন্দর যে মানুষ তা দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হয় এবং তারা উচ্চতম প্রশংসা করতে বাধ্য হয়। সুরা হজ-এর ২৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: যারা সব ধরনের প্রশংসার যোগ্য মহান আল্লাহর পথে হয়েছে পরিচালিত তারাও প্রশংসার অধিকারী হয়। -তাই যারা প্রশংসা পেতে চায় তাদের উচিত প্রাথমিক পর্যায়ের ঈমান ছাড়াও তাদের উচিত সুন্দর চিন্তাভাবনা করা, হৃদয়জুড়ানো কথা বলা ও পছন্দনীয় আচরণ করা।
সৃষ্টিকুলের মধ্যে সে-ই হামিদ যার ওপর প্রতিফলন ঘটে মহান আল্লাহর প্রশংসনীয় বৈশিষ্টগুলোর এবং মানুষ তাদেরকে সৎ কাজ ও সৎ স্বভাবের জন্য প্রশংসা করে। কিন্তু এই উচ্চ শ্রেণীর মানুষ কেবল আল্লাহরই প্রশংসা করেন। কারণ তারা জানেন তাদের মধ্যে ভালো যা কিছু জনগণ দেখছে তা আল্লাহরই দেয়া আমানত মাত্র।
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী-আ. দোয়ায়ে কুমাইলে বলেছেন: মানুষের মধ্যে কত উচ্চ মানের প্রশংসা আপনি ছড়িয়ে দিয়েছেন যার যোগ্য আমি ছিলাম না।- মহানবীর (সা) মধ্যে মহান আল্লাহর হামিদ নামের পরিপূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছে। আর এ জন্যই তাঁর নামকরণ হয়েছে আহমাদ ও মুহাম্মাদ। মহানবীর আহমাদ নাম হওয়ার কথাটি বলে গিয়েছিলেন হযরত ঈসা-আ.( সুরা সাফ-এর ৬ নম্বর আয়াত দ্র.)। এই নাম মহানবীর একটি বিশেষ নাম। ইহুদিরা একবার মহানবীকে প্রশ্ন করেছিল: কেন আপনার নাম আহমাদ ও মুহাম্মাদ? মহানবী উত্তরে বলেছেন: আমি জমিনে প্রশংসিত বলে মুহাম্মাদ ও আকাশে প্রশংসিত বলে আহমদ নামের অধিকারী হয়েছি।#
পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।