ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২ ২৩:০২ Asia/Dhaka

ইরানকে নতজানু করার লক্ষ্যে দেশটির ওপর গত ৪৩ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের সবচেয়ে কঠোর অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় ইরানের প্রবল প্রতিরোধের মুখে আমেরিকার সমস্ত নিষেধাজ্ঞা এবং অবরোধ শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ যাকে বলা যায়-'Abject failure'। এসব কথা বলেছেন, ইরান প্রবাসী বাংলাদেশি বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, গবেষক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার মো.মুনীর হুসাইন খান।

রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, সারা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ের ক্ষেত্রে ইরান রোল মডেল। ইরানের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আমেরিকাকে পরাজিত ও ব্যর্থ করেছে। বিপ্লবের সময় ইরান ছিল একাকী কিন্তু আজ ইরানের সাথে অনেকেই আছে অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিন দিন একাকী ও  একঘরে হচ্ছে।

পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। এটি গ্রহণ, উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব মো. মুনীর হুসাইন খান, সম্প্রতি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৪৩ তম বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। আপনি কী মনে করেন ইসলামি বিপ্লব তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?

মুনীর হুসাইন খান: জ্বী হ্যাঁ, ইসলামি বিপ্লব তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের অবসানে ইরানে ইমাম খোমেনী (র.)র নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইসলামি বিপ্লব সফল হয় এবং ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই ইরান সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু করে যা আজও পূর্ণদমে অব্যাহত আছে।

বিশ্বের শীর্ষ সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার তাবৎ সাঙ্গপাঙ্গ নিয়েও ইসলামি ইরানের প্রতিরোধ সংগ্রামের মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে। ইরানকে নতজানু করার লক্ষ্যে দেশটির ওপর গত ৪৩ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  ইতিহাসের সবচেয়ে কঠোর অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় ইরানের প্রবল প্রতিরোধের মুখে আমেরিকার সমস্ত নিষেধাজ্ঞা এবং অবরোধ শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ যাকে বলা যায়-'Abject failure'। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব  প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার কথা সম্প্রতি দেশটির কর্মকর্তারাও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন। উল্লেখ্য যে, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ইরানের প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রাম কেবল ইরানের মাটিতেই সীমাবদ্ধ থাকে নি। বরং তা গোটা পশ্চিম এশয়ায় অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি এর ঢেউ লাতিন আমেরিকাতে পৌঁছে গেছে। লেবাননি এবং ফিলিস্তিনিরা ইসলামি ইরানের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিরোধ সংগ্রাম ও যুদ্ধে ইসরাইলকে বারবার পরাজিত করেছে। এ অঞ্চলের জাতিগুলো যেমন ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান- ইরানের কাছ থেকে প্রতিরোধ সংগ্রামের অনুপ্রেরণা ও সাহায্য  নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের পরাজিত করেছে।

রেডিও তেহরান: ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইরান সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অনেকে মনে করেন, ইরান এখনো সারা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের ক্ষেত্রে  রোলমডেল। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

মো.মুনীর হুসাইন খান: জ্বী হ্যাঁ, ইরান এখনো নিঃসন্দেহে সারা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ের ক্ষেত্রে রোল মডেল। এর প্রমাণ হচ্ছে  আগের প্রশ্নের জবাবে বলেছি যে, এ অঞ্চলে লেবানন, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক, বাহরাইন ও আফগানিস্তানের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী  প্রতিরোধ সংগ্রামীরা ইরানের প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং সফলও হচ্ছে। একইসাথে লাতিন আমেরিকার  দেশগুলো যারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী-তারাও ইরানের কাছ পরামর্শ নিচ্ছে সহায়তা নিচ্ছে ও অনুপ্রাণিত হচ্ছে।

রেডিও তেহরান: বিপ্লবের পর ইরান সারা বিশ্বে অনেকটা একাকী ছিল। কিন্তু আজ সেই পরিস্থিতি পাল্টেছে। এক্ষেত্রে ইরানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে অনেকে বড় করে দেখেন। আপনি কোন দিকটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেবেন?

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী 

মো.মুনীর হুসাইন খান: বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা ওয়ালি আমরিল মুসলিমিন আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী সুযোগ্য বলিষ্ট নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় সাম্রাজ্যবাদবিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রাম সফল ও কার্যকর হয়েছে। যথাযথ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং সঠিক বিপ্লবী নীতি অবস্থান গ্রহণের জন্যই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এখন একাকী ও নিঃসঙ্গ নয়।

অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিন দিন একাকী ও  একঘরে হচ্ছে। ইরান যে আজ আর একাকী নয় তার প্রমাণ ইরানের সাথে রাশিয়া ও  চীনের মতো দেশের সখ্যতা ও বন্ধুত্ব। একইসাথে এ অঞ্চলের অধিকাংশ দেশের সাথেই ইরানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এরবাইরে বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশের সাথে ইরানের উষ্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা রয়েছে।

রেডিও তেহরান: মধ্যপ্রাচ্যে ইরান এখন সামরিক ও রাজনৈতিক দিকে দিয়ে প্রধান শক্তি। কিন্তু বিষয়টিকে অনেকে মেনে নিতে পারছে না। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ। অনেক সময় এসব দেশ ইরান-বিরোধী তৎপরতা চালাতে গিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে হাত মেলায়। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

মো.মুনীর হুসাইন খান: দেখুন, পশ্চিম এশিয়ার হাতে গোনা কয়েকটি দেশের সরকার এ বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না। বরং তারা ইঙ্গো মার্কিন ইসরাইল খবিসচক্র ও শয়তানি অক্ষের কাছে সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ হয়ে পড়েছে। ঐ শয়তানি চক্রের কাছে আটকে থাকার জন্যই  তাদের প্রভাবে ও চাপে পড়ে তারা ইরানের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। সিরিয়ায় গোলযোগ  ও গৃহযুদ্ধ বাধিয়েছে। তবে এতসব করার পরও  তারা আজও কোনো সফলতার মুখ দেখে নি এবং দেখবেও না বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ তারা বাতিল ও মিথ্যা পক্ষ। ইসলামি বিপ্লবী ইরান ও তার মিত্ররা নিঃসন্দেহে সত্য পক্ষ।

'বলুন সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হতে বাধ্য।' ( সূরা বনি ইসরাইল-৮১ নং আয়াত)

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৩

ট্যাগ