ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২ ১৭:৩৭ Asia/Dhaka

রংধনু আসরের কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছো ভালো ও সুস্থ আছো। আজকের আসরে তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশিদ  এবং আমি আকতার জাহান।

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই রূপকথার গল্প শুনতে পছন্দ করো। আর তাইতো আমরা মাঝেমধ্যে শিক্ষণীয় রূপকথার গল্প শুনিয়ে থাকি। আজকের আসরেও রয়েছে একটি ইরানি রূপকথা। গল্পের পর থাকবে একটি গান ও একটি কবিতা।   আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটিও তৈরি করেছেন আশরাফুর রহমান। তাহলে প্রথমেই গল্পটি শোনা যাক।

এক শকুন আর এক শিয়ালের মাঝে বন্ধুত্ব হয়েছিল। একদিন শিয়াল বন্ধু শকুনকে বলল: ‘দোস্ত! তুমি তো সবসময় আকাশেই উড়ে বেড়াও। শুভ্র মেঘ ছাড়া তো আর তেমন কিছুই দেখার সুযোগ তোমার হয় না। এক কাজ করো! তুমি একদিন আমার পিঠে চড়ে বস, তোমাকে আমি পুরো বন জঙ্গল দেখাবো। এখন তো বসন্তকাল। বনের গাছ গাছালি সবুজে শ্যামলে মাখামাখি। আর ফুলে ফুলে চারদিক একেবারে সুশোভিত। তোমার ভালো লাগবে, চলো।’

শকুন চিন্তা-ভাবনা করে দেখল-একেবারে মন্দ হয় না, শিয়ালের প্রস্তাবটা শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করল এবং শিয়ালের পিঠে চড়ে বসল। মনে তার বনাঞ্চল দেখে বেড়াবার সাধ।

শিয়াল তো এমনিতেই ভীষণ চতুর। শকুন তার পিঠে চড়ে বসার সাথে সাথে সে তার চালাকি শুরু করে দিল। কাঁটাময় ঝোপ জঙ্গল, গাছ গাছালি যেদিকে বেশি সেদিক দিয়ে সে ভীষণ গতিতে দৌড়াতে লাগল। ডালপালা আর কাঁটার আঘাতে শকুন বেচারার পাখার পালকগুলো একের পর এক ঝরে পড়তে লাগল। শিয়াল যেদিক দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছিল পুরো রাস্তাজুড়ে শকুনের সাদা-কালো আর খয়েরি ঝরা পালক ভর্তি। শকুনের পালক ঝরতে দেখেও শিয়াল তার দৌড় থামাল না। সে দৌড়াতেই লাগল।

এদিকে শকুনের পাখার সকল পালক ঝরে পড়ার পর এবার বুকের পালক ঝরতে লাগল। একটা সময় দেখা গেল শকুনের সারা গায়ে একটি পালকও অবশিষ্ট নেই। শিয়াল এবার শকুনের দিয়ে তাকিয়ে তার পালকহীন শরীর দেখে মনে মনে হাসল। শিয়াল শকুনের সাথে ঠাট্টা মশকরা করতে লাগল।

পালকহীন শকুন না পারে উড়তে আর না পারে শিকার করতে। সে কারণে বন্ধু শিয়ালের ওপর শকুন অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়ল। শিয়াল যা শিকার করতো তা খেয়ে দেয়ে উচ্ছিষ্টটুকু শকুনকে খেতে দিত। কখনো কখনো শিয়াল শকুনের কথা ভুলেই যেত। ফলে শকুন দিনের পর দিন সপ্তার পর সপ্তা না খেয়ে খেয়ে খিদের জ্বালায় চড়ুইয়ের বাসায় হানা দিয়ে বাচ্চাকাচ্চা খেতে বাধ্য হতো।

এভাবে দীর্ঘদিন কেটে গেল। ধীরে ধীরে শকুনের পাখায়, বুকে নতুন পালক গজাল। একেবারে আগের মতোই সকল পালক সে ফিরে পেল। ফিরে পেল আকাশ উড়বার এবং শিকার করার আগেকার অবস্থা। এখন সে বরং আগের চেয়েও শক্তিশালী। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবার পর একদিন শকুন তার বন্ধু শিয়ালকে বলল: দোস্ত! আমার তো যাবার সময় হলো। আচ্ছা তুমি কখনো কি ভেবেছ শূন্য আকাশের বিশাল উচ্চতা থেকে নীচের এই জমিন দেখতে কেমন লাগে?

শিয়াল বলল: না তো!

শকুন বলল: অনেক সুন্দর, অনেক! এই জঙ্গলের ভেতর থেকে অনেক অনেক বেশি সুন্দর লাগে। তুমি যদি দেখতে চাও আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারি। যাবে কিনা একবার ভেবে দেখো।’

শিয়াল মনে মেন ভাবল সুযোগটা হাতছাড়া করা ঠিক না। সে রাজি হয়ে গেল আর শকুন তার পায়ের নখে শিয়ালকে আটকিয়ে দিল উড়াল। উপরে উড়ে যেতে যেতে শকুন শিয়ালকে জিজ্ঞেস করতে লাগল: দোস্ত জমিনটাকে এখন কেমন দেখতে পাচ্ছো?

শিয়াল বলল: অনেক বড় দোস্ত।

শকুন আবারো উপরের দিকে যেতে লাগল। কিছুটা উপরে উঠে আবার জিজ্ঞেস করল: এখান থেকে কেমন দেখতে পাচ্ছো?

শিয়াল বলল: পুরো পৃথিবীটাকে একটা শহরের মতো মনে হচ্ছে।

শকুন আরো উপরে গিয়ে তৃতীয়বারের মতো জিজ্ঞেস করল: এখন কেমন দোস্ত!?

শিয়াল বলল: এখন তো পৃথিবীটাকে একটা তরমুজের মতো লাগছে।

শকুন বলল: ‘ঠিক আছে হে বীর। এবার তাহলে নীচে চলে যাও।’

ই বলে শকুন তার পায়ের নখ থেকে শিয়ালকে ছেড়ে দিল। এতো উপর থেকে ভীষণ গতিতে পড়তে পড়তে বাতাসের তোড়ে শিয়ালের গায়ের পশমগুলোও ঝরে গেল। কিন্তু শিয়াল একটা কাজ করল। পড়তে পড়তে আল্লাহর কাছে সে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করল: ‘হে খোদা! আমাকে তুমি একটা নরম শরীর কিংবা চামড়ার তৈরি আলখাল্লার ওপর ফেলো’।

আল্লাহর দরবারে তার দোয়া কবুল হয়ে গেল। এক কৃষক নাস্তা খেতে বসেছিল। তার আলখাল্লাটি পাশেই খুলে রেখেছিল। সামনে ছিল বিচিত্র নাশতা। কৃষকের নজর উপরে পড়তেই দেখল কী যেন একটা ঠিক তার ওপর পড়তে যাচ্ছে। সে সরে গেল আর অমনি শিয়াল এসে পড়ল আলখাল্লার ওপর। বেঁচে গেল শিয়াল। সেইসাথে চমৎকার নাশতাও পেল তৈরি। পেট ভরে খেয়ে আলখাল্লা পরে সে রওনা দিল বনের ভেতর।

পথেই দেখা হলো সিংহের সাথে। সিংহ জিজ্ঞেস করল: আলখাল্লা পেলি কাথায়?

শিয়াল বলল: কেন, জানো না আমি সেলাই করি।

সিংহ আশ্চর্য হয়ে বলল: তাহলে আমার জন্যেও একটা সেলাই কর তোরটার মতোই।

শিয়াল বলল: আমি রাজি। তবে দুটো শর্ত আছে। আমার পাঁচটা হৃষ্টপুষ্ট হরিণ লাগবে। এক সপ্তা সময় লাগবে।

সিংহ পাঁচটা হরিণ এনে দিল। শিয়াল তার পরিবার পরিজনকে নিয়ে সেগুলো মজা করে খেলো। সপ্তাশেষে সিংহের সাথে দেখা হলে শিয়াল বলল: আস্তিন আর বেল্টের জন্যে ছোট্ট দুটি ভেড়ার বাচ্চাও লাগবে। সিংহ তাও দিল আর শিয়াল পরিবার আগের মতোই মজা করে সেগুলো খেলো কিন্তু সিংহকে আলখাল্লা বানিয়ে দিতে পারল না।

সিংহ বলল: ধৈর্যের সীমা ছেড়ে গেছে।

শিয়াল বলল: ওস্তাদ! আলখাল্লা রেডি আছে ঘরে, চলুন।  

ঘর মানে গর্তের কাছে গিয়ে শিয়াল পালাতে চাইলো কিন্তু লেজ ধরে ফেললো সিংহ। বেচারা শিয়ালের লেজ ছিঁড়ে গেল। সিংহ বলল: তোকে আমি ঠিকই চিনে নেবো লেজবিহীন শয়তান...।

শিয়াল পরদিন তার গর্ত থেকে বেরিয়ে দেখল তার বন্ধুরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে তাদেরকে আঙুর বাগানে নিয়ে গেল। গাছের উপরে উঠে শিয়ালেরা যখন আঙুর খাচ্ছিল লেজকাটা শিয়াল তখন তার বন্ধুদের একজনের লেজ আরেকজনের লেজের সাথে বেঁধে দিল। এরপর বাগানের মালিককে খবর দিল। বাগানের মালিক তাড়াহুড়া করে লাঠি হাতে আসতেই শিয়ালেরা ভয়ে হুড়োহুড়ি করে পালাতে গিয়ে সবাই তাদের লেজ হারাল।

এই ঘটনার খানিক পরেই সিংহ এসে হাজির। সিংহ বলল: শেষ পর্যন্ত তুই আমার হাত থেকে আর রেহাই পেলি না লেজকাটা শয়তান।

শিয়াল মুচকি হেসে জোরে চিৎকার দিল। অমনি তার লেজহারানো শিয়াল বন্ধুরা এসে হাজির হলো। সব শিয়ালেরই লেজ কাটা-এ অবস্থা দেখে সিংহ ভাবল: শিয়াল ভয়ংকর প্রতারণা করেছে। তার সরলতার সুযোগে শিয়াল ক’দিন তার পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থার জন্যে নিশ্চিন্তমনে কাটিয়েছে। সিংহ শেষ পর্যন্ত শিয়ালকে লক্ষ্য করে বলল: ‘হে বজ্জাত! তোর মতো প্রতারক আর কেউ নেই’।

এরপর থেকে সিংহ সতর্ক হয়ে গেল যেন শিয়ালের মতো কারো কাছে আর প্রতারিত হতে না হয়।

বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে তোমাদের জন্য রয়েছে একটি উপদেশমূলক গান। 'লোক দেখানো ভালো কাজ'  শিরোনামের গানটি লিখেছেন ইমাম সাদিক আদনান, সুর করেছেন এস বি হাবিব আর গেয়েছেন শিশুশিল্পী জাইমা নূর, সারামনি, রাফা ও নাবিহা।

ছোট্টবন্ধুদের কণ্ঠে গানটি শুনলে। আশা করি ভালো লেগেছে। বন্ধুরা, এবার শুনবে বাবাকে নিয়ে একটি কবিতা। 'আমার বাবা লক্ষ্মী বাবা'  শিরোনামের কবিতাটি আবৃত্তি করেছে কাজী তাসনিয়া বিনতে সলিম।

কাজী তাসনিয়ার চমৎকার উচ্চারণে কবিতাটি শুনলে। তো বন্ধুরা, তোমরা যারা রংধনু আসরে অংশ নিতে চাও তারা তোমাদের মোবাইল বা টেলিফোন নাম্বার জানিয়ে দাও। আমরাই তোমাদের কাছে ফোন করে সাক্ষাৎকার নেবো।

আর তোমরা চাইলে গান, ছড়া-কবিতা, সূরা কিংবা কৌতুক রেকর্ড আমাদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপ করতে পারো। আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার হচ্ছে- 0098-903-5065490

তো বন্ধুরা, তোমরা ভালো ও সুস্থ থেকো আবারো এ কামনা করে গুটিয়ে নিচ্ছি রংধনুর আজকের আসর।# (বাজনা)

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।