মার্চ ০২, ২০২২ ১৬:১৮ Asia/Dhaka

মানুষ দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি হতে হলে তাঁর নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা রাখতে হবে। এইসব পবিত্র নাম কেবল একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়।

বিভিন্ন সময়ে বিচিত্রময় এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। বিশ্বজগতের ব্যবস্থাপনা বিপুল সংখ্যক এইসব নামেরই ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর। এসবের মধ্যে কোনো কোনো নামের রয়েছে সাধারণ বা অভিন্ন দিক ও বিশেষ দিক। যেমন শাহিদ ও রাক্বিব -মহান আল্লাহর এই দুই নামের অর্থ উপস্থিত, পর্যেবক্ষক ও সাক্ষ্য। কিন্তু শাহিদ বলতে সমগ্র অস্তিত্ব জগতের ওপর সাক্ষ্যকে বোঝায় তথা সব কিছু ও সব কাজ প্রকাশ্য বা গোপন যাই হোক না কেন সবই তিনি দেখছেন। আর রাক্বিব হলেন তিনি যিনি উপস্থিত ও পর্যেবক্ষক বা নাজির কেবল  গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সুরক্ষার জন্য।

যাই হোক আজ আমরা মহান আল্লাহর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর নাম হল মুহসি'র অর্থ ও ব্যাখ্যা নিয়ে কথা বলব। বিশেষ দিক বা বৈশিষ্ট্য বিবেচনা না করলে মহান আল্লাহর এই নাম অনেকটা তাঁর হাসিব নামের অনুরূপ। অর্থাৎ যিনি সব কিছু ও সব বিষয়ের অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও যথাযথ হিসাব-নিকাশকারী এবং গোপন পরিকল্পনা বা ষড়যন্ত্র -সবই তিনি জানেন। তবে  মুহসি বলতে বিশ্ব জগতের সব কিছুর অংশ ও পরিমাণের গণনাকারীকে বোঝায়। পৃথিবীর সব বালুকণার সংখ্যা ও পানির ফোটার সংখ্যা ও সব মানুষের পাপ ও পুণ্যের সংখ্যা সবই তিনি জানেন।

সুরা জিনের ২৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: মহান আল্লাহ সব কিছু গণনা করে রেখেছেন ও  সেসবের সংখ্যা তিনি জানেন। এ ছাড়াও তিনি সুরা ইয়াসিনের ১২ নম্বর আয়াতে বলেছেন: আমিই মৃতদেরকে জীবিত করি এবং তাদের কর্ম ও কীর্তিসমূহ লিপিবদ্ধ করি। আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে রেখেছি সংরক্ষিত। পরিপূর্ণ বা নিরঙ্কুশ অর্থে মুহসি হলেন একমাত্র মহান আল্লাহ। কারণ একমাত্র তাঁর কাছেই সব কিছুর পরিমাপ ও সংখ্যা স্পষ্ট। মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও কোনো কোনো যন্ত্রের মাধ্যমে কোনো কোনো বিষয় গণনা করতে সক্ষম হলেও অন্য অনেক কিছু পরিমাপে অক্ষম।

অন্যদিকে মহান আল্লাহর জ্ঞান সীমাহীন। তাই বিচার-দিবসে মহান আল্লাহর সূক্ষ্ম ও নিখুঁত হিসাব দেখে মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবে। তারা দেখবে খুব ছোট ও বড় কোনো কাজের রেকর্ডই আমলনামা থেকে বাদ যায়নি!

সুরা কাহাফের ৪৯ নম্বর আয়াতে এসেছে:

'আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবে: হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না।'

সুরা হাক্ব-এর ১৯ থেকে ২৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবে: নাও, তোমরাও আমলনামা পড়ে দেখ। আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। অতঃপর সে সুখী জীবন-যাপন করবে, সুউচ্চ জান্নাতে। তার ফলসমূহ অবনমিত থাকবে।বিগত দিনে তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে, তার প্রতিদানে তোমরা খাও এবং পান কর তৃপ্তি সহকারে।

মহান আল্লাহর নেয়ামতের সংখ্যাও এত বেশি যে আল্লাহ  ছাড়া অন্য কেউ তা গণনা করতে সক্ষম নয়। বিশ্বের সব মানুষও সব মাধ্যম ব্যবহার করেও মহান আল্লাহর নেয়ামত কখনও গুণে শেষ করতে পারবে না! আকাশ, বাতাস, পানি, চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজি, নদ-নদী ও  সাগরগুলো মহান আল্লাহর অশেষ নেয়ামতের সামান্য অংশ মাত্র। জীবন ও সুস্থতাও এক মহানেয়ামত। আমাদের শরীরের সুস্থতা কোটি কোটি জীবন্ত কোষের কাছে ঋণী। আর আমাদের শরীরের বাইরের লক্ষ কোটি জীবন্ত ও প্রাণহীন সত্ত্বার নানা তৎপরতার কারণে আমরা বেঁচে আছি ও সুস্থ আছি। এসব ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও বেঁচে থাকতে পারতাম না। এমন অসংখ্য নেয়ামত আছে যে সেসবের কোনো জ্ঞানই আমাদের নেই। জ্ঞাত নেয়ামতের সংখ্যা অজ্ঞাত নেয়ামতের তুলনায় যেন মহাসাগরের তুলনায় এক ফোটা পানির সমতুল্য। জ্ঞান-বিজ্ঞানে মানুষের অগ্রগতি যত বাড়ছে ততই মানুষ আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত সম্পর্কে আগের তুলনায় বেশি জানতে পারছে।

মহান আল্লাহর মুহসি নামের ব্যাপারে যার সচেতনতা রয়েছে তথা তার কৃতকর্ম রেকর্ড হওয়ার বিষয়ে যে সতর্ক সে সব ধরনের পাপ কাজ এড়িয়ে চলার ও বেশি বেশি সৎ কাজ করার ব্যাপারে সক্রিয় থাকে। এমন ব্যক্তি এটা মাথায় রাখেন যে জীবনের সব কিছুরই ভিডিও রেকর্ড করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এইসব ভিডিও বা ফিল্ম বিচার দিবসে সাক্ষ্য হিসেবে দেখানো হবে। তাই সেদিন যেন সবার সামনে লজ্জিত হতে না হয় সে লক্ষ্যে সে প্রত্যেক কথা, কাজ ও আচরণের ব্যাপারে সতর্ক থাকে যাতে সামান্যতম ভুল বা বিচ্যুতিরও শিকার না হতে হয়।#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।