আসমাউল হুসনা (পর্ব-৬০)
মানুষ দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি হতে হলে তাঁর নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা রাখতে হবে। এইসব পবিত্র নাম কেবল একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে বিচিত্রময় এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে।
মহান আল্লাহর এমনই দুই সুন্দর নাম হল ' মাযিদ ' ও ' ওয়াযিদ ' । আজ আমরা এ দুই নামের অর্থ ও ব্যাখ্যা নিয়ে কথা বলব। আরবি ওয়াযিদ واجد" "শব্দের অর্থ হল ধনী, শক্তিদাতা ও অমুখাপেক্ষীকারী এবং শক্তিশালী ইত্যাদি। আর মাযিদ " ماجد"শব্দের অর্থ হল অত্যন্ত দানশীল ও ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু, মহান, সুপ্রিয়, সদাচারী, বীর বা নারীর মর্যাদা রক্ষায় শক্তিমান এবং সভ্রান্ত বা অভিজাত ইত্যাদি।
মহানবীর (সা) একটি হাদিসের বর্ণনার আলোকে বিশ্বের সব যুগের সব মানুষ মহান আল্লাহর কাছে অশেষ দাবি-দাওয়া বা আবদার-আবেদন জানালে তিনি যদি সেসবই পূরণ করেন তবুও আল্লাহর অশেষ সম্পদ থেকে সূচাগ্র পরিমাণ সম্পদও কমে যাবে না, বিষয়টির স্বরূপ কিছুটা বোঝার জন্য ধরুন মহাসাগরে কেউ সূচাগ্র ডুবালে তাতে মহাসাগর থেকে যেমন পানি কমে গেছে বলা যায় না তেমনি মহান আল্লাহর অশেষ দানশীলতাও অনেকটা একই রকম।
মহান আল্লাহ জাওয়াদ, কারিম, মাযিদ এবং ওয়াযিদ। তাই তিনি যা চান তা-ই করতে পারেন। তিনি কোনো কাজ করার বা কোনো কিছু সৃষ্টির ইচ্ছা করে কেবল যদি বলেন হও অমনি বা সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে যায়।
সুরা ইয়াসিনের ৮২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:
তিনি তথা মহান আল্লাহ যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়।
পবিত্র কুরআনে ওয়াযিদ-এর সঙ্গে সম্পর্কিত নাম পাঁচ বার এসেছে। ওয়াযিদ -واجِد নামের অর্থ আরবি ফাক্বিদ শব্দের বিপরীত। ওয়াযিদ সব কিছুর অধিকারী এবং এইসব কিছু অর্জনের ক্ষেত্রেও তিনি কোনো কিছুরই মুখাপেক্ষী নন। অন্য কথায় বিশ্বে যা কিছু অস্তিত্বমান সেই সব কিছুর মূলেই সক্রিয় হল মহান আল্লাহর নাম ওয়াযিদ।
মহান আল্লাহ যা চান তা-ই হয়। তাঁর ইচ্ছার মধ্যে নেই কোনো ত্রুটি। বিশ্বে যা যা ঘটানো বা সৃষ্টি করা সম্ভব তিনি তার সবই করতে বা সৃষ্টি করতে সক্ষম। তাই প্রকৃত মুমিন মুসলমান তার সব কিছুই চান ওয়াযিদের কাছে। কারণ তাঁর কাছেই রয়েছে সব সম্পদের চাবি।
মহান আল্লাহর এ নামের তথা ওয়াযিদ নামের প্রতিফলন যার মধ্যে রয়েছে সে সম্পদ দানের ক্ষেত্রে কোনো চরমপন্থার অনুসারী নয় এবং কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করেই দান করে থাকেন। এমনকি নিজের কাছে দেয়ার মত কিছু না থাকলেও এমন ব্যক্তি নিজের সম্মানকে কাজে লাগিয়ে অন্যদের মাধ্যমে অভাবগ্রস্তকে দান করেন।
মহান আল্লাহর মাযিদ مَجد" " নামের অর্থ হল যিনি খুবই মহানুভব, সব ভালো স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এবং সভ্রান্ত। মাযিদ চূড়ান্ত পূর্ণতার অধিকারী এবং তাঁর সব গুণ ও কাজ সর্বোচ্চ বা চূড়ান্ত সৌন্দর্য এবং ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর। দান করার ক্ষেত্রে ও ক্ষমাশীলতার ক্ষেত্রে তিনি অসীম উদারতার অধিকারী। মাযিদ-এর মহত্ত্ব ও সম্মানও অসীম। মহান আল্লাহ মাযিদ বলে তাঁর সব কাজ সম্মানজনক এবং তাঁর দয়া বা রহমত সব কিছুকে ঘিরে রাখে।
মহান আল্লাহ মাযিদ বলেই এতই দয়ালু, কারিম তথা অসীম দানশীল বা মহানুভব ও করুণাময় যে তাঁর তুলনায় এ-সব ক্ষেত্রেই তাঁর চেয়ে বড় আর কেউ নেই। হযরত সুলাইমান নবীর কাহিনীতে জানা যায় তিনি একবার দেখেন যে একটি পিপড়া একটি গম মুখে নিয়ে একটি ব্যাঙের মুখে বসে সাগরের গভীরে নেমে আবার ফিরে আসে। তিনি পিপড়াটিকে প্রশ্ন করে জানতে পারেন যে মহান আল্লাহরই নির্দেশে একটি পাথরের ভেতরে থাকা একটি কীটকে বাঙের সাহায্য নিয়ে আমি নিয়মিত গম দিয়ে যাই। এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর সব সৃষ্টিকে রিজিক দিতে সক্ষম। ওই কীট গম পেয়ে সব সময়ই বলে: হে খোদা! তুমি এই সাগরের নীচের পাথরের ভেতরেও আমাকে ভুলে যাওনি! তাই যারা তোমাকে বিশ্বাস করে তাদের প্রতি তোমার রহমত প্রদর্শনকে ভুলে যেওনা।
যারা মহান আল্লাহর মাযিদ নামের রঙে রঙ্গিন হন তারা সম্পদ দানের ক্ষেত্রে কোনো চরমপন্থা অবলম্বন না করেই দান করে যান। আর এভাবে মহান আল্লাহর মাযিদ বা মহানুভবতার কিছু আলো তুলে ধরেন তারা। স্বার্থপর, কৃপণ, ইন্দ্রিয়পরায়ণ ও বলদর্পি মানুষের চেয়ে তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। সমাজের গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে তারা ফলবান বিশাল বৃক্ষ বা পাহাড়ের মত সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে অবিচল থাকেন এবং মহান আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলে মহত্ত্ব, সম্মান ও গৌরব রক্ষা করেন। জীবনে এরাই হন সফল ও স্বার্থক। মহান আল্লাহ আমাদেরকেও মহান আল্লাহর এইসব নামের রঙে রঙ্গিন হওয়ার তৌফিক দান করুন।#
পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ১০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।