মার্চ ২৯, ২০২২ ২০:৩৮ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর পবিত্র নামগুলো কেবল একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার তালিকাভুক্ত এমনই এক নাম হল সামাদ।

এর অর্থ যিনি সামাদ তিনি কারো বা কোনো কিছুরই মুখাপেক্ষী নন, বরং অন্য সবাই ও সব কিছুই তার মুখাপেক্ষী । পবিত্র কুরআনে এই নাম মাত্র একবার এসেছে। কিন্তু এর অর্থ ও পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। এই নাম সৃষ্টিকুলের যে কোনো গুণ বা বৈশিষ্ট্য যেমন, বর্ণ, গন্ধ, স্থির বা গতিশীল অবস্থা, শরীর, সীমানা, পরিমাণ, ওজন ইত্যাদি বস্তুগত বৈশিষ্ট্য আল্লাহর মধ্যে থাকার বিষয়টি নাকচ করে দেয়। সামাদ বলতে এত বড়কে বোঝায় যে তাঁর মহত্ত্ব ও গৌরব নিরঙ্কুশ পরিপূর্ণতায় পৌঁছেছে এবং তাঁর অমুখাপেক্ষিতা এমনই যে সব সৃষ্টিকুল তাদের অস্তিত্ব ও সব কিছু তাঁর কাছ থেকেই পেয়ে থাকে। সৃষ্টিকুল সব সময় ও সবখানে মহান আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী। জ্ঞান, মর্যাদা, কৌশল বা প্রজ্ঞায় কেউই মহান আল্লাহর সমকক্ষ নন। আরবি সাহিত্যে সামাদের রয়েছে নানা অর্থ। যেমন, গোত্রীয় সর্দার, ইচ্ছা বা নিয়ত, সুর-ধ্বনি, কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি মনোযোগ ইত্যাদি।

মহান আল্লাহ সামাদ। তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতা অসীম। মহানবীর (সা) আহলে বাইতের সদস্য ইমাম বাক্বির (আ) বলেছেন, সামাদ হচ্ছেন এমন এক কর্তা বা অধিপতি যার নির্দেশাবলী মান্য করা হয় এবং তাঁর চেয়ে বড় আদেশ-নিষেধকারী আর কেউ নেই। মহান আল্লাহ সব সৃষ্টির মূল লক্ষ্য এবং সব কিছুর সমাপ্তি ঘটবে আল্লাহর সমীপে এসে। মহানবী (সা) বলেছেন, আমার প্রতিপালক হলেন সামাদ যিনি পরিপূর্ণ ও শক্তিশালী। আল্লাহর কাজে কোনো ত্রুটি নেই ও কোনো বাধা তাঁর কোনো কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না এবং তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন।–

মহান আল্লাহর অমুখাপেক্ষিতা সসীম কিছু নয়। তিনি কেবল বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুর জন্য সামাদ নন, বরং তিনি সব কিছুর জন্যই চূড়ান্ত লক্ষ্য।  যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো আশা বা ভরসা নিয়ে মহান আল্লাহর দয়া ভিক্ষা করতে পারেন। মহান আল্লাহ বান্দাদের সব দাবি বা দোয়া পূরণ করতে সক্ষম। তিনি দয়ালু ও করুণাময় না হলে কারো দোয়ারই জবাব দিতেন না ও কারো প্রত্যাশাই পূরণ করতেন না।

একদল ফিলিস্তিনি মহানবীর (সা) আহলে বাইতের সদস্য ইমাম বাক্বির (আ)কে মহান আল্লাহর সামাদ নামের অর্থ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সামাদ শব্দের মধ্যেই রয়েছে এর ব্যাখ্যা। সামাদ-এর সোয়াদ অক্ষর এ জন্য যে মহান আল্লাহ সাদিক্ব তথা সত্যবাদী। আল্লাহ মানুষকে সত্যিকার অর্থেই সত্যের পথে চলার আহ্বান জানান।  এ ছাড়াও মহান আল্লাহ সত্যিকার অর্থেই সত্যপন্থীদের সত্যের আবাসস্থলের তথা বেহেশতবাসী করার ওয়াদা দিয়েছেন। সামাদ শব্দের মিম অক্ষরটি আল্লাহর মুল্‌ক্‌ বা রাজত্বকে তুলে ধরে। মহান আল্লাহই হলেন সত্যিকারের বাদশাহ বা ন্যায়সঙ্গত বাদশাহ, তিনি সব সময়ই বাদশাহ বা অধিপতি ছিলেন ও থাকবেন এবং তাঁর রাজত্ব বা বাদশাহির কোনো ক্ষয় নেই। আর সামাদ শব্দের দাল অক্ষরটি এসেছে আল্লাহর রাজত্বের চিরস্থায়িত্ব তথা অব্যাহত থাকা ও আল্লাহর সত্ত্বার অপরিবর্তনশীলতা অব্যাহত থাকাকে তুলে ধরতে। এ দাল হচ্ছে অব্যাহত থাকা অর্থে ব্যবহৃত আরবি আদ্‌দাওয়াম  الدَّوَام  শব্দের দাল অক্ষর।

মহান আল্লাহ সব সৃষ্টির স্রষ্টা। তাঁরই দয়া, ইচ্ছা, রিজিক প্রদান ও সৃষ্টিশীলতার সুবাদে নানা সৃষ্টি অস্তিত্ব লাভ করেছে। - এরপর ইমাম বাক্বির (আ) আরও বলেন, মহান আল্লাহ আমাকে যে জ্ঞান দিয়েছেন তা বহন করার তথা বুঝতে পারার মত যদি কাউকে পেতাম তাহলে সুনিশ্চিতভাবে একত্ববাদ, ইসলাম ও ধর্ম আর শরিয়তের বাস্তবতাগুলো আমি সামাদ নামের মাধ্যমেই প্রকাশ করতাম।

সামাদ নামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ হল এর মুসমাত «مُصْمَت» হওয়া তথা পরিপূর্ণ হওয়া যাতে এর ভেতরে কোনো ধরনের শূন্যতা বা বিন্দুমাত্রও খালি কোনো স্থান না থাকে এবং যা খুবই কঠোর বা শক্ত, অভঙ্গুর, অপ্রতিরোধ্য ও শক্তিশালী বলে বিন্দুমাত্র ত্রুটি-বিচ্যুতির শিকার হয় না। অন্য কথায় মহান আল্লাহ নিজের ছাড়া অন্য কারোই মুখাপেক্ষী নন বলেই সামাদ।

মহান আল্লাহ সামাদ, কারণ তিনি জ্ঞান ও শক্তিসহ সব কিছুতেই পরিপূর্ণ সমৃদ্ধ এবং তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন অথচ অন্য সব কিছুই তাঁরই মুখাপেক্ষী। মহান আল্লাহ সব কিছুতেই পরিপূর্ণতার অধিকারী ও ত্রুটি বা ঘাটতিমুক্ত। অসীম সত্ত্বাও সামাদ। যা  অসীম তা দৈর্ঘে, প্রস্থে, উপরে, নীচে ও গভীরতাসহ সব দিকেই অস্তিত্বমান।

যে মু'মিন ব্যক্তি মহান আল্লাহর সামাদ নাম সম্পর্কে সচেতন সে সর্বোচ্চ বিনয় নিয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করবে এবং অন্য কাউকে এই স্থানের অধিকারী মনে করবে না, তিনি যা কিছু চান তা কেবল সব পদের ওপরের পদ সামাদিয়াতের অধিকারী তথা সব কিছুই যার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে সেই অতুলনীয় সত্ত্বা তথা মহান সামাদ-এর কাছেই চান। কারণ তিনি জানেন সৃষ্টিকুলের যে যত বড় আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত অবস্থানেই থাকুক না কেন- দুর্বলতা ও ত্রুটিমুক্ত নন এবং সব কিছুই আল্লাহর মুখাপেক্ষী। মু'মিন আচার-আচরণ ও স্বভাবের ক্ষেত্রে খোদায়ি বৈশিষ্ট্যের রং ও পছন্দনীয় গুণগুলো অর্জনে সচেষ্ট থাকেন এবং এ জন্য তিনি আশ্রয়হীনদের ও মুখাপেক্ষীদের আশ্রয়স্থলের আশ্রয় নেন। #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।