এপ্রিল ০৩, ২০২২ ১১:৫৩ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! স্বাগত জানাচ্ছি রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান আলাপনে আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশাকরি আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ্ আছেন। ইসলামি ইরানের ৪৩ তম প্রজাতন্ত্র বার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আমাদের আজকের আসরে অতিথি হিসেবে আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক,বিশিষ্ট রাজনৈতিক ভাষ্যকার ড.তারেক মুহম্মদ তওফীকুর রহমান। সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব পুরোটাই তুলে ধরা হল। এটি প্রযোজনা ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

জনাব, ড. তারেক মুহম্মদ তওফীকুর রহমান রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: জনাব ড. তারেক মুহম্মদ তওফীকুর রহমান,১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার পর দেশটিতে ৩০ মার্চ গণভোটের আয়োজন করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে- কেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস প্রতিষ্ঠার জন্য গণভোট অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হলো?

ড. তারেক মুহম্মদ তওফীকুর রহমান: ইসলামি ইরানের প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রেডিও তেহরানের এই সাক্ষাৎকারে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

একটি সফল বিপ্লবের পর একটি সংবিধানের বিষয়ে দেশটিতে গণভোটের আয়োজন করা হলো কেন-এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন।

রাষ্ট্রগঠনের আলোচিত সামাজিক চুক্তি মতবাদের অন্যতম প্রবক্তা বৃটিশ রাজনীতি চিন্তাবিদ জন লক( ১৬৩২-১৭০৪) শাসিতের সম্মতির ধারণাটি জোরালভাবে উপস্থাপন ও সমর্থন করেছিলেন। এ তত্ত্ব বা ধারণার মূল কথা- ‘শাসিত জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সরকার শাসনকার্য চালাবে।’

ইরানে ব্যাপক জনগণের অংশগ্রহণে ১৯৭৯’র বিপ্লব সফল হয়। বিপ্লবের নেতৃত্ব জনগণের সেই ব্যাপক অংশগ্রহণকে তাঁদের শাসক হবার জন্য উপযুক্ত ভিত্তি মনে করতে পারতেন।

ইরানি বিপ্লবের ইসলামি নেতৃত্ব তা করেন নি। একটি নির্বাচিত বিশেষজ্ঞ পরিষদ বা মজলিসে খুবরাগণ এর দ্বারা প্রণীত সংবিধান জনগণের সামনে তথা জনগণের বিবেচনা ও সম্মতির জন্য উপস্থাপন করেন। একটি আনুষ্ঠানিক গণভোটের মাধ্যমে সেই সংবিধানটি জনগণের দ্বারা অনুমোদিত হয়। ইসলামি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এ গণভোট অনুমোদিত হয়।

আধুনিক পশ্চিমা ধারণার ‘শাসিতের সম্মতি’ এখানে চমৎকারভাবে অনুশীলিত হয়। ইসলামি বিবেচনাতেও শাসিতের সম্মতিকে শাসনের ন্যায্যতা  ও বৈধতা হিসেবে গণ্য করা হয়।‘বাইয়াতের’ ধারণাটি তার প্রমাণ।

ইরানের ইসলামি নেতৃত্ব আধুনিক তথা যুগের উপযোগী একটি সেরা পন্থা হিসেবে তাদের পরিবর্তিত শাসনব্যবস্থা বিষয়ে সেই গণভোটের মাধ্যমে শাসিত জনগণের আনুষ্ঠানিক সম্মতি গ্রহণ করেন। এটিকে একটি চমৎকার ও অভূতপূর্ব উদ্যোগ বলা উচিত। তাই বলা উচিত সেই গণভোটের যথার্থ প্রয়োজন ছিল এবং ইরানের ইসলামি নেতৃত্ব তা সক্ষমতার সাথে পালন করেছেন।

রেডিও তেহরান: ইসলামি নেতৃত্বের লক্ষ্য কী ছিল?

ড. তারেক মুহম্মদ তওফীকুর রহমান: সেই গণভোটের চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্ভবত ছিল পরবর্তী অনাগত নেতৃত্বকে জানিয়ে রাখা যে, জনগণকে শাসনের জন্য তাদের সম্মতির বিষয়টিকে সর্বদা সর্বোচ্চ সম্মান ও গুরুত্ব দিতে হবে।

রেডিও তেহরান:  আচ্ছা ঐ গণভোটের কি প্রয়োজন ছিল?

 ড. তারেক মুহম্মদ তওফীকুর রহমান: ১৯৭৯ সালের ৩০ মার্চ ইরানি ভোটার জনগণ প্রস্তাবিত ইসলামি রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি যে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিলেন, ৪২ বছর পরে এখনও নীতিগত সেই সমর্থন কম বেশি অটুট আছে বলে আমার ধারণা। কারণ ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সাগ্রহ সমর্থন ছাড়া প্রায় সারা বিশ্ব শক্তির বৈরী ও আক্রমণাত্মক ভূমিকার প্রেক্ষাপটে ইরানের ইসলামি রাজনৈতিক ব্যবস্থা টিকে থাকার কথা নয়।

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! আপনারা ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ড.তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার শুনছেন। ফিরছি শিগগিরিই আমাদের সাথে থাকুন।

রেডিও তেহরান: মিউজিক বিরতির পর আবারও ফিরে এলাম সাক্ষাৎকারে। ১৯৭৯ সালের ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত গণভোটে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পড়েছিল। বিপ্লবের এত বছর পরে এসে জনগণের মনোভাব ও অবস্থানকে কেমন দেখছেন?

ড. তারেক মুহম্মদ তওফীকুর রহমান: ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইরানের ইসলামি রাজনৈতিক ব্যবস্থা ৪২ বছর টিকে আছে। এটি একটি স্বস্তি, তৃপ্তি ও গৌরবের বিষয়।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক সক্ষমতার প্রশ্ন বিবেচনায় নিয়ে ইরান ১৯৭৯’র তুলনায় অনেক উপরে উঠেছে। একথা মানতে দ্বিধার কিছু নেই। দেশটি প্রায় সবক্ষেত্রে  স্বনির্ভর ও সক্ষম হয়েছে। আগে সেটি ছিল না।

রেডিও তেহরান: আচ্ছা এবার খানিকটা হাইপোথিটিকাল একটি প্রশ্ন আপনাকে করতে চাইছি, বলা হয়-ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আজকের শক্তিশালী ইরান। আসলে কী তাই? যদি এমনটি না হতো তাহলে কী চিত্র হতে পারত?

ড. তারেক মুহম্মদ তওফীকুর রহমান: ১৯৭৯’র বিপ্লব সম্পন্ন না  হলে দেশটির কী হতো তা হয়তো অনুমান করা চলে কিন্তু নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। স্বৈরশাসক কবলিত অন্য কিছু মুসলিম রাষ্ট্রের মতোই হয়তো এখনও ইরান টিকে থাকত। রাজনৈতিক নেতৃত্ব একটি দেশ ও জাতির প্রগতি ও সক্ষমতা নিশ্চিতে মূল ভূমিকা পালন করে। বর্তমান নেতৃত্বকে কাঙ্খিত নেতৃত্বের কাছাকাছি বলে দাবি করা যায়।

রেডিও তেহরান: তো জনাব ড.তারেক মুহম্মদ তওফীকুর রহমান-ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবসে রেডিও তেহরানকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

ড.তারেক মুহম্মদ তওফীকুর রহমান:  ধন্যবাদ আপনাকে এবং রেডিও তেহরানের শ্রোতাবন্ধুদেরকে।

 পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৩