স্বাস্থ্যকথা
কানের ভেতর শোঁ শোঁ শব্দের কারণ ও প্রতিকার
শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! স্বাস্থ্যকথার আসরে স্বাগত জনাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করি আপনারা ভালো ও সুস্থ আছেন। নাক কান গলার বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকার নিয়ে কয়েক আজ পঞ্চম ও শেষ পর্বের আলোচনা হবে। আপনারা জানেন, নাক-কান-গলার সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঠান্ডার কারণে সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখা দেয়। কিন্তু ঠান্ডাজনিত সমস্যা ছাড়াও নাক-কান-গলার আরও অনেক জটিল অসুখ হতে পারে। আর তাই নাক-কান-গলার নানা রকমের সমস্যা ও চিকিৎসা নিয়ে আমরা কয়েকটি পর্বে আলোচনা করেছি। আজও এ বিষয়ে স্বাস্থ্যকথার কথার আসরে আলোচনায় আমাদের সঙ্গে অতিথি হিসেবে আছেন, ই এন টি স্পেশালিস্ট ডা, এম মইনুল হাফিজ।
জনাব, ডা. এম. মইনুল হাফিজ রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
রেডিও তেহরান: ডা.এম মইনুল হাফিজ, আগের পর্বগুলোতে মোটামুটিভাবে গলা ও নাক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, চতুর্থ পর্বের আলোচনায় কানের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তো আজও কানের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে চাইছি। এই যে ধরুন কানের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ করে। তাছাড়া বাইরে যখন আমরা বের হই তখন উচ্চস্বরে গাড়ির হর্ণ বাজে, মাইকের শব্দ কিংবা লাউড স্পিকারের শব্দে কানে আঘাত লাগে। তো এসব কারণে কি কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে?
ডা. এম. মইনুল হাফিজ: দেখুন, শুধুমাত্র জোরে শব্দের কারণে যে কানের পর্দা ফেটে যায় এমনটি না। তবে শব্দের কারণেও কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। তবে হঠাৎ করে কানের ভেতরের পর্দা ফেটে যাওয়ার কিন্তু অন্য কারণ আছে। তবে আঘাত লাগলে, খুব জোরে শব্দ হলে, বাতাস জোরে প্রবেশ করলে, মাইকের শব্দ কিংবা অন্যকোনো ভীষণ জোরে শব্দে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। তবে প্রচণ্ড জোরে শব্দে পর্দা ফাটার চেয়ে বেশি সমস্যা হয় নার্ভের। কানের সমস্যার কারণে ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণেও কানে শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে।
রেডিও তেহরান: যে কোনো কারণে কানের ভেতর শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে, ধরা যাক একটি কানের মধ্যে। তো কেন শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে এবং চিকিৎসা কিভাবে হবে? বিষয়টি নিয়ে যদি আলোচনা করেন।
ডা. এম. মইনুল হাফিজ: দেখুন কানে শোঁ শোঁ শব্দ অনেক কারণে হতে পারে। এখানে কানে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়ার প্রধান কারণগুলো তুলে ধরছি:
বহিঃকর্ণে কোনো বস্তু আটকে গেলে শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে। মধ্যকর্ণে কফ জমে গেলে কিংবা কানের পর্দা ফেটে গেলে শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে। কানে খৈল জমলে, কানে প্রদাহের সৃষ্টি হলে এবং মধ্যকণের্র অস্থিসমূহ নড়াচড়া না করলেও এমন শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে। কখনও কখনও অন্তঃকণের্র চাপ বৃদ্ধি পেলে, শ্রবণসংক্রান্ত স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কানের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে, অন্যান্য সাধারণ শারীরিক সমস্যা হলেও শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে। এছাড়া, বার্ধক্যজনিত কারণে ৬০ বছরের বেশি বয়স হলে, শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিলে, দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপ থাকলে, মানসিক অস্থিরতার কারণে শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে। কখনও কখনও কিছু কিছু ভাইরাল ইনফেকশনের কারণেও এমনটি হতে পারে।
আর শোঁ শোঁ শব্দ হলে কি হয়? তখন-কানে কম শোনা, মাথা ঘোরানো কান বন্ধ লাগা ভাব ইত্যাদি হয়ে থাকে।
প্রতিকার ও চিকিৎসা
তবে এরকম হলে অবশ্যই ময়লা কিছু দিয়ে কান পরিষ্কার করা যাবে না। যদি প্রদাহ ও পর্দা ফেটে গেলে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে। অনেক সময় শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। স্নায়ু সমস্যায় শ্রবণযন্ত্র বা টিনিটাস মাসকার ব্যবহার করলে শোঁ শোঁ শব্দ ভালো হয়ে যায়। কিছু কিছু ওষুধ প্রয়োগেও কানের শোঁ শোঁ শব্দ কমে যায়। তাছাড়া রিলাক্সজেশন থেরাপি বা ইয়োগা থেরাপির মাধ্যমেও শোঁ শোঁ শব্দ কমে।
কানের শোঁ শোঁ শব্দের চিকিৎসা হিসেবে শুরুতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমরা ওষুধ দিয়ে থাকি। যদি ওষুধে ভালো না হয় শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। কখনও কখনও আমরা ঐ শব্দটাকে অন্য আরেকটি শব্দ দিয়ে কমানোর চেষ্টা করে থাকি। এটাও খানিকটা হেয়ারিং এড এরমতো। এটাও একটি প্রোগ্রাম করে দেয়া হয় একটি শব্দ। প্রথমে যে শব্দটি হচ্ছে তারা সার্বিক বিষয় অ্যানালাইসিস করা হয়। এজন্য এখন সফটওয়্যার পাওয়া যায়। ফলে এরমাধ্যমে এই শোঁ শোঁ শব্দ এর হাত থেকে মুক্ত হওয়া যেতে পারে।
আপনারা নাক কান গলার নানাবিধ সমস্যা ও প্রতিকার নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এম মইনুল হাফিজের সাক্ষাৎকার শুনছেন। ফিরছি শিগগিরি আমাদের সাথেই থাকুন।
রেডিও তেহরান: শ্রোতাবন্ধুরা! মিউজিক বিরতির পর আবারও ফিরে এলাম আলোচনায়। ডা. এম মইনুল হাফিজ, আপনি কানের সমস্যা এবং প্রতিকার নিয়ে আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। তো সবশেষে আপনি কানের সাবধানতার ব্যাপারে আমাদের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে আর কিছু বলবেন কি?
ডা. এম. মইনুল হাফিজ: শিশুদের জন্য আমরা বলা যখনই আপনাদের বাচ্চাদের কানে ব্যথা হবে, কান থেকে পানি বা পুঁজ বের হবে তখন তা খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়ে একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে কানের ফুটে ছিদ্র হয়ে যাওয়া বলা যায় প্রায় শতভাগ পর্দা লেগে যায়। আর বড়দের ক্ষেত্রে শব্দ দূষণ বড় একটি ক্ষতিকর বিষয়। এটি নিয়ে বিশ্বে অনেক কিছু হচ্ছে। আমাদের মতো দেশে এখনও হর্ণের শব্দমুক্ত করতে পারলাম না। এই শব্দ বন্ধে পৃথিবীতে নয়েজ ইনডিউজ হেয়ারিং ল' আছে। এরজন্য স্থায়ী আইন আছে। ফ্যাক্টরি যারা কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে শব্দদূষণ থেকে রক্ষার জন্য কর্মীদের প্রটেক্টরের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি ইউরোপ আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে আছে আমাদের দেশেও অবশ্যই এসব ব্যবস্থা থাকা উচিত। এতে হাজার হাজার মানুষ কানের সমস্যা থেকে রক্ষা পাবে। অবশ্য বাইরের শব্দ দূষণ থেকে রক্ষার জন্য এখন নানারকম ইকুইপমেন্ট পাওয়া যায়। সেগুলোও প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন।
তো ডা. এম মইনুল হাফিজ, নাক কান গলার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রেডিও তেহরানকে দীর্ঘ পাঁচ পর্বে আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য আবারও অসংখ্যা ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আর শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! স্বাস্থ্যকথার আজকের আসর এখানেই গুটিয়ে নিচ্ছি। আপনারা সবাই ভালো সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন। আবারও কথা হবে আগামী আসরে অন্যকোনো বিষয় নিয়ে সে আসরেও আমাদের সাথে থাকতে ভুলবেন না।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১০