এপ্রিল ১৩, ২০২২ ২১:২৭ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান 'স্বাস্থ্য কথার' আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন।

ক্যান্সার যাকে বাংলায় কর্কটরোট বলা হয়। এ রোগটি বর্তমান বিশ্বে একটি ভয়াবহ এবং রাজকীয় রোগ। রাজকীয় এইজন্য বলছি- এ রোগের  চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি। প্রায় ২০০ শ'রও বেশি প্রকার ক্যান্সার রয়েছে। এ রোগে মৃত্যু হারও অনেক বেশি। প্রত্যেক ক্যান্সারই আলাদা আলাদা এবং চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা।

ক্যান্সার নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কয়েক পর্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাক্ষাৎকার প্রচার করব। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য  আমাদের সাথে অতিথি হিসেবে আছেন ক্লিনিকাল হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. কামরুল হাসান। তিনি মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।

জনাব, ডা. মো. কামরুল হাসান, রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: ডা.কামরুল হাসান। ক্যান্সার বা কর্কট রোগ (Cancer ) নিয়ে আলোচনার শুরুতেই জানতে চাইব- এই রোগটি আসলে কী?

ক্যান্সার

ডা. মো. কামরুল হাসান: মানুষের শরীরে প্রায় ৭৫ ট্রিলিয়ন কোষ থাকে। একহাজার বিলিয়নে হয় এক ট্রিলিয়ন তাহলে ৭৫ লাখ কোটি কোষ থাকে মানুষের শরীরে। আর প্রতিটি কোষের স্বাভাবিক কার্যাক্রম খোদা প্রদত্ত কিছু বিধান যেটা ডিএনএ'র  মধ্যে থাকে। আর এর দ্বারা কোষগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কোষগুলোর কোনো একটি কোষে যদি অসঙ্গতি দেখা দেয় অর্থাৎ কোষের স্বাভাবিক যে আয়ু সেটি নষ্ট হয়ে যায় এবং কোষটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যায়। আর সেই বেড়ে যাওয়াটা এরকম- একটা থেকে দুইটা, দুইটা থেকে চারটা, চারটা থেকে আটটা....। স্বাভাবিক সময়ে যেকোষগুলোর মৃত্যু হওয়ার কথা এবং নতুন কোষের জন্ম নেযার কথা। সেটি না হয়ে অর্থাৎ কোষের মৃত্যু না হয়ে অস্বাভাবিক কিছু বৃদ্ধি হয় শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে। আর এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধিজনিত যে রোগ সেটাকেই বলা হয় ক্যান্সার।

এককথায় যদি বলা হয়- ক্যান্সার বা কর্কটরোগ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি।

রেডিও তেহরান: ডা. কামরুল হাসান-ক্যান্সার এর বাংলা যে কর্কট রোগ এই শব্দটি কি সাধারণ মানুষ জানে?

ডা. মো. কামরুল হাসান: দেখুন, যদিও ক্যান্সারের বাংলায় যে বলা হয় 'কর্কট' শব্দটি তার চেয়ে আমাদের রোগীরা ক্যান্সার শব্দটির সাথে বেশি পরিচিত।

রেডিও তেহরান:  ক্যান্সার রোগটি কি ভয়াবহ কিংবা দূরারোগ্য ? একসময় বলা হতো-ক্যান্সার হলে সে মারা যাবে-অর্থাৎ কোনো চিকিৎসা নেই.. তো বাংলাদেশ ও ভারতের প্রেক্ষাপটে এই রোগের পরিস্থিতি সম্পর্কে যদি প্রাথমিক একটা ধারণা যদি দিতেন?

ডা. মো. কামরুল হাসান: ক্যান্সার শুধু বাংলাদেশ কিংবা ভারত নয় গোটা বিশ্বের জন্য একটি ভয়াবহ রোগ হিসেবে চিহ্নিত। আমাদের দেশে ক্যান্সার বিষয়ে যে সচেতনতা এবং ক্যান্সারের চিকিৎসাটা এদেশের মানুষের কাছে হয়তো নতুন মনে হতে পারে। কারণ হলো উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের এখানে একসময় সংক্রামক ব্যাধির পরিমাণ খুব বেশি ছিল। আর এ সংক্রামক ব্যাধি নিরাময় বা নির্মূলের প্রোগ্রামগুলোর ওপর সরকার অনেক বেশি জোর দিয়েছিল। আর সুখের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে সংক্রামক ব্যাধিগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। তো সংক্রামক ব্যাধিগুলো নিয়ন্ত্রণের আসার পর অসংক্রামক ব্যাধির ব্যাপারে দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে। যারা আমাদের দেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের কাছে অসংক্রামক ব্যাধিগুলো এখন বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।

সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে আসার পর মানুষের কোয়ালিটি অব লাইফ এবং গড় আয়ু বেড়ে গেছে। এরফলে অসংক্রামক ব্যাধির ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর এই অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে একটি হচ্ছে 'ক্যান্সার'। এখনও ক্যান্সার দূরারোগ্য ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত। একটা সময় বলা হতো ক্যান্সার মানে নো অ্যানসার। ক্যান্সার যার হবে সে মারা যাবে। একথাটাই প্রচলিত ছিল বিশ্বে কিন্তু এখন আর কথাটা ঐভাবে বলা হয় না। কিছুদিন আগেও বলা হতো যে, ক্যান্সার দেয়ার ইজ সাম অ্যানসার'। বর্তমানে আরো একটু এগিয়ে বলা হয় ক্যান্সার যদি আগে আগে ধরা পড়ে সেক্ষেত্রে দেয়ার ইজ  মেনি অ্যানসার। এখন ক্যান্সার নিয়ে আমার নিজস্ব বিষয়-যে বিষয়ে আমি কাজ করি হেমাটজিকাল ক্যান্সার, রক্ত ক্যান্সার, লিউকেমিয়া (Leukemia) বা লিউকিমিয়া (অস্থিমজ্জার ক্যান্সার) এর বিষয়ে বলা হয়,There are many answer. এখন আমাদের অনেক রোগী ব্লাড ক্যান্সার ( Blood Cancer), হেমাটোলজিক্যাল ক্যান্সারগুলো থেকে সুচিকিৎসা পাচ্ছে খুব ভালোভাবে। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা সুচিকিৎসার মাধ্যমে ভালোভাবে বেঁচে আছেন এবং সুন্দরভাবে জীবনযাপন করছেন।

শ্রোতাবন্ধুরা! আপনারা ক্যান্সার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুনছেন। শিগগিরিই ফিরছি। আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: ডা.কামরুল হাসান- আপনি খুব সুন্দর করে ক্যান্সার রোগটি কি,এ রোগের ভয়াবহতা কতটা এখন এ রোগের বাস্তবতা সম্পর্কে আলোচনা করলেন। আপনি কোষের অস্বাভাবিক কিংবা অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির কথা বলছিলেন- এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলে কি হয় সে কথাটি কি একটু বুঝিয়ে দেবেন?

ডা. মো. কামরুল হাসান: জ্বি, অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলে কি হয়? কোষের যে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হচ্ছে সেগুলো স্বাভাবিক কোষ নয়। তাদের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা থাকে না। আর যদি কোষের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা না থাকে তাহলে সেটি শুধু বোঝা হয়ে থাকে। শুধু বোঝাই না শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটায়। এসময় শরীরে নানারকম লক্ষণ দেখা দেয়। এ অবস্থাকে আমরা ক্যান্সার রোগাক্রান্ত বলে থাকি।

রেডিও তেহরান: জ্বি ডা. কামরুল হাসান ক্যান্সার কত ধরণের হতে পারে-সে বিষয়টি কি বলবেন?

ডা.কামরুল হাসান: আপনি একটি চমৎকার প্রশ্ন করেছেন-কত ধরনের ক্যান্সার হতে পারে? শুরুতে যে বলেছিলাম আমাদের শরিরে যে ৭৫ ট্রিলিয়ন কোষ আছে। এটা বিভিন্ন অঙ্গ- যেমন হাত-পা, নাক-কান, জিহবা, চামড়া, পাকস্থলি, অগ্নাশয়, লিভার থাকে এসবের যেকোনো অঙ্গে যদি ক্যান্সারের প্রলিফিকেশন হয় তখন সেই অঙ্গের নাম অনুসারে ক্যান্সারের নামকরণ করা হয়। লিভারে যদি হয়-তখন এটার নাম হয় লিভার ক্যান্সার। স্কিনে ক্যান্সার হলে তাকে স্কিন ক্যান্সার বলা হয়। টিস্যুর ক্যান্সারগুলোর মধ্যে একেকটার নাম একেকরকম হয়। এরমধ্যে দেখা যায় কোনো ক্যান্সার খুব ধীরে ধীরে এগোচ্ছে আবার কোনো কোনোটা খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। কোনোটাতে দেখা যায় যেখানে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছে সেখানেই মাসের মাস থেমে থাকছে। আবার কোনোটা ঠিক ভিন্নরকম। আক্রান্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাসের মধ্যে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। এইভাবে শরীরে যতরকমের টিস্যু আছে সবগুলোতে ক্যান্সার হতে পারে। ফলে যে টিস্যুতে ক্যান্সারটি তৈরি হবে সেই টিস্যুর নাম অনুযায়ী আমরা ক্যানসারের নামকরণ করে থাকি।

রেডিও তেহরান: জনাব, ডা. মো. কামরুল হাসান, ক্যান্সার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার প্রথম পর্বের শেষ দিকে আপনি ক্যান্সারের প্রকার বা ধরন নিয়ে কথা বলছিলেন। আজ আর আমাদের হাতে সময় নেই, আগামী আসরে এ বিষয় দিয়ে শুরু করব। তো আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য  আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ডা.কামরুল হাসান: আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ। সেইসাথে  রেডিও তেহরানের শ্রোতাদেরকেও আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ এবং আন্তরিক শুভেচ্ছ।

আর শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা, আপনারা সবাই পুষ্টিকর খাবার খাবেন, বেশি বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন এবং নিয়মিত ব্যয়াম করবেন। সবাই সু্স্থ ও নিরাপদ থাকুন।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৩

ট্যাগ