এপ্রিল ২০, ২০২২ ১৯:৩৮ Asia/Dhaka

গত পর্বের আলোচনায় আমরা বলেছিলাম, মহান আল্লাহ মানুষসহ বিশ্বের প্রায় সব কিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ প্রায় সব জীবেরই রয়েছে স্ত্রী ও পুরুষ-শ্রেণী। এমনকি শক্তি, সময় ও বস্তু-জগতেও রয়েছে জোড়ার অস্তিত্ব।

যেমন, ধনাত্মক ও ঋণাত্মক বিদ্যুৎ, রাত ও দিন, আকাশ ও জমিন ইত্যাদি। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের ৫১ তম সুরা তথা সুরা জারিয়াতের ৪৯ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা শিক্ষা নাও।

পবিত্র কুরআনের ৪২ তম সুরা তথা সুরা শূরার ১১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: তিনি নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডলের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তুদের মধ্য থেকেও জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন। কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।

পবিত্র কুরআনের ত্রিশতম সুরা তথা সুরা রুম-এর ২১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

আল্লাহর আরও এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। -

এভাবে পবিত্র কুরআনের এই আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায় ইসলাম পরিবার-ব্যবস্থাকে কত বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

আমাদের আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা ইরানে বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী বাছাইয়ের রীতি ও বিবাহ-পূর্ব অনুষ্ঠান বা রীতিগুলো সম্পর্কে কিছু কথা বলব। পাত্র-পাত্রী যাতে পরস্পরের রুচি, আচরণ ও চাহিদাসহ নানা জরুরি বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারে সে জন্য ইরানি সংস্কৃতিতে বিয়ের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশের অনুষ্ঠানকে একটি ভালো সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। -ইরানে সাধারণত পাত্রের মা ও খালা পাত্রের জন্য উপযুক্ত পাত্রী বাছাইয়ের কাজ করেন। এরপর প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে পাত্রের সঙ্গে পরামর্শ করে সম্ভাব্য পাত্রীর পরিবারের কাছে বিয়ের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশের পদক্ষেপ নেয়া হয়। বিয়ের প্রস্তাব পেশের এই অনুষ্ঠানে সাধারণত ছেলে পক্ষের পরিবারের কয়েকজন নারী সম্ভাব্য কনেকে দেখতে আসেন। ফার্সি ভাষায় খস্তেগারি নামে বিখ্যাত এই অনুষ্ঠানের  প্রাথমিক এই পর্বের বৈঠকে পাত্র নিজে উপস্থিত থাকেন না।  কনে এই অনুষ্ঠানে অতিথি-আপ্যায়নে অংশ নেন এবং প্রাথমিক নানা প্রশ্নের জবাব দেন। আপ্যায়নের পর বর-পক্ষের পরিবার কনেকে পছন্দ করলে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়। আর কনে পছন্দ না হলে কিছুক্ষণ আলাপের পর বর-পক্ষ অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান।

 বিয়ের ব্যাপারে উভয় পক্ষ রাজি হলে বর ও কনের পারস্পরিক দেখাদেখি ও পারস্পরিক আলোচনা সংক্রান্ত বিয়ে-পূর্ব পরবর্তী অনুষ্ঠান বা খস্তেগারির দ্বিতীয় পর্ব সম্পন্ন করা হয়। এ পর্বে বর ও কনে পরস্পরকে আরও ভালোভাবে জানতে পারেন। এ বৈঠকের শেষ পর্যায়ে পাত্র ও পাত্রী পরস্পরকে পছন্দ করলে পাত্রীকে একটি উপহার দেয়া হয় এবং সুগার কিউব বা চিনির তৈরি দুটি বড় বার বা টুকরোকে পরস্পরের সঙ্গে ঘষে গুড়ো করা হয়। পাত্র-পাত্রী বেশ কয়েকবার পারস্পরিক আলোচনার পর পরস্পরকে পছন্দ করার বিষয়ে চূড়ান্ত মত দিলে বিয়ের আয়োজন পাকাপোক্ত করার  উদ্যোগ নেয়া হয়। ফার্সি ভাষায় 'বালেহ্ বরুন' নামে পরিচিত এ অনুষ্ঠানে উভয় পক্ষের মুরব্বি শ্রেণীর সদস্যরা পাত্রীর মোহরানা ও অন্যান্য শর্ত নিয়ে কথা বলেন। প্রি-এনগেইজম্যান্ট বা  বাগদানের প্রাথমিক পর্বের এ অনুষ্ঠানে পাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে কনেকে একটি আংটি, নারীর পোশাকের ওপর চাদর জাতীয় অতিরিক্ত পরিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত একটি ঢিলেঢালা পোশাকের কাপড়  (যা ফার্সিতে চাদর হিসেবে খ্যাত), বিয়ের দিনের পোশাক, স্কার্ফ বা ওড়না কিংবা শাল, ফুলের তোড়া ও মিষ্টি উপহার দেয়া হয়।

উল্লেখ্য প্রি-এনগেইজম্যান্ট অনুষ্ঠানে বিয়ের যেসব শর্ত ও ওয়াদার কথা বলা হয় সেসব একটি কাগজে লিখে রাখা হয় এবং তাতে উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করেন। এরপর রয়েছে চূড়ান্ত এনগেইজম্যান্ট বা বাগদান অনুষ্ঠানের পালা।

ইরানি পরিবারগুলোতে বিয়ের অনুষ্ঠান ও বিয়ের আগে অনুষ্ঠেয় ঐতিহ্যবাহী এসব পর্ব এখন অনেকাংশেই আধুনিক স্টাইলে সম্পন্ন হয়। ফলে পরিবার ও পাত্র-পাত্রীর ভূমিকা অনেকটা ম্লান হয়ে আনুষ্ঠানিকতা-গোছের হয়ে গেছে।  কারণ, আধুনিক যুগে পাত্র-পাত্রীদের অনেকেই পরস্পরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা কর্মক্ষেত্রে খুব কাছ থেকে দেখে পরস্পরকে খুব ভালোভাবেই চেনেন, জানেন ও বোঝেন। অন্য কথায় পাত্র-পাত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পরিবারের ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা আর আগের মত তেমন ব্যাপক নেই। জীবন সম্পর্কে অনভিজ্ঞতা ও আবেগ-প্রবণতার শিকার হয়ে যারা আধুনিক কায়দায় বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন তাদের বিয়েও এ কারণে অনেক সময় সফল হচ্ছে না।

বিয়ের জন্য নারীর কাছে পুরুষের প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি নারীর উচ্চ মর্যাদা তুলে ধরে। পাখি যেমন ফুলের কাছে যায় ফুল কখনও পাখির কাছে যায় না তেমনি নারীর পক্ষ থেকে পুরুষের কাছে বিয়ের প্রস্তাবও অনেকটাই প্রকৃতির রীতি বিরোধী। পুরুষের হৃদয়ের ওপর নারী কর্তৃত্বশীল হতে পারে বলে বিয়ের প্রস্তাবের জবাবে না শোনাকে পুরুষ সহ্য করতে সক্ষম ও বিষয়টি গ্রহণযোগ্য কিন্তু নারী নিজে যেচে পুরুষের কাছে প্রস্তাব দেয়ার পর না জবাব শোনা নারীর জন্য অমর্যাদাকর।   

বিয়ের পর স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব হল পুরুষের তথা স্বামীর। স্ত্রীকে তার পরিবারের অবস্থার আলোকে এমনভাবে ভরণ-পোষণ দিতে হবে যা ওই পরিবারের জন্য সম্মানজনক হয়। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষই পরিবারের প্রধান। কারণ, নারীর নানা দুর্বলতার কারণে ঘরোয়া কাজের বিষয়গুলো ছাড়া বাইরের জগতে পুরুষকেই সংসারের জন্য বেশি দায়িত্বশীল ও পরিশ্রমী হতে হয়। সাধারণত অর্থনৈতিক বিষয়ে পুরুষের অভিজ্ঞতাই বেশি থাকে। তাই সাংসারিক খরচসহ নানা বিষয়ে নারীর উচিত মিতব্যয়ী হওয়া ও সব বিষয়ে স্বামীর সহযোগী ও সহমর্মী হওয়া।#                                                                                                                               

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/ ২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ