হিজরত পাপ-বর্জনের অন্যতম উপায়
রমজান: আত্মশুদ্ধির মহোৎসব (পর্ব-২৩)
রমজান: আত্মশুদ্ধির মহোৎসব (পর্ব-২৩)
মনের মাঝে ছুটে চলে কামনা-বাসনার শত-সহস্র প্রবাহ
কতটুকু তার ভালো কতটুকু আঁধারের আলো তা তো তুমিই জানো হে অন্তর্যামী
এ ক্ষমা-ভিখারি মহাপাপীর পানে যদি একবার মুখ তুলে চাহো
অসম্ভব নয় প্রেমের পথে পূর্ণতার শিখরে আরোহণ এক রাতেই হে জগত-স্বামী!
৮৩ বছর তিন মাসের বর নিয়ে তোমার পরম-প্রিয়-ক্ষণে শবে ক্বদরের রাতে
সব আশা বাসনা ভুলে শুধু তোমাতেই বিলীন হতে চাই!/বিরহের অশ্রুজলের পথ বেয়ে প্রেমের সাগর সৈকত হতে
আমার ভাঙ্গা তরীখানি যেন আখেরি নবীর আবে-কওসর সরোবরে 'নূহের মহাতরী'তে পায় ঠাঁই! /ফেরেশতাদের নুরের পাখা-বিছানো আলোকিত প্রভাতে
নবী-নন্দিনীর হারানো-ইউসুফের দিদার যেন পাই!
মহিমান্বিত রজনী তথা শবে ক্বদরের বরকতযুক্ত পবিত্র রমজান মাস দানের কারণে মহান আল্লাহর অশেষ প্রশংসা করছি এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত ও ন্যায়পরায়ণ সাহাবিদের শানে অশেষ দরুদ আর সালাম জানাচ্ছি।
রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস এবং আত্মশুদ্ধির মাস পবিত্র রমজান শেষ হয়ে আসছে। পবিত্র শবে কদর বা তথা ভাগ্য-নির্ধারণের রাতগুলো অতিক্রম করছি আমরা। আত্ম-সংশোধন ও পাপ বর্জনের অনুশীলনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত এই দিন ও রাতগুলোকে আবারও ফিরে পেতে এক বছরের হায়াত লাভ জরুরি। সে সৌভাগ্য যে আমরা পাব তার কি কোনো গ্যারান্টি রয়েছে? ! তাই এই রমজানেই আত্মাকে পুরোপুরি বিশুদ্ধ ও পাপের প্রভাব থেকে মুক্ত করা উচিত যাতে অপ্রস্তুত অবস্থায় মৃত্যু না হয়। আমরা পাপ ও মন্দ স্বভাবগুলো থেকে দূরে থাকতে কতটা বাস্তব উদ্যোগ নিয়েছি? বড় বড় পাপের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে কতটা নিজেকে ও নিজের পরিবারকে সচেতন করেছি? যেসব বই পড়লে বা যেসব আলোচনা শুনলে ধর্মের জরুরি বিষয়গুলো জানা যায় ও পাপ পরিহার সহজ হয় -এমনসব কাজে কতটা সক্রিয় হয়েছি?
উন্নত চরিত্র গঠনের জন্য মহাপুরুষ বা আল্লাহর প্রিয়পাত্রদের জীবনী ও তাঁদের দোয়া থেকে কতটা শিক্ষা নিচ্ছি আমরা? পবিত্র কুরআন পড়ে ও মহাপুরুষদের শেখানো দোয়া পড়ে আমাদের চোখে কি পানি আসছে? যদি না আসে তাহলে বুঝতে হবে যে অন্তর বা আত্মা মরে আছে। অতিরিক্ত পাপের ফলে কলুষিত আত্মা পাষাণ হয়ে পড়েছে। তাই এই মৃত আত্মাকে জাগাতে হবে।
মহান আল্লাহ সুরা ফাতিরে বলেছেন, 'কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর ভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না-যদি সে নিকট-আত্মীয়ও হয়। আপনি কেবল তাদেরকে সতর্ক করেন, যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখেও ভয় করে এবং নামায কায়েম করে। যে কেউ নিজের সংশোধন করে, সে সংশোধন করে, নিজ কল্যাণের জন্যেই। আর আল্লাহর কাছেই সবাইকে ফিরতে হবে। দৃষ্টিমান ও দৃষ্টিহীন সমান নয়। সমান নয় অন্ধকার ও আলো। সমান নয় ছায়া ও তপ্তরোদ। আরও সমান নয় জীবিত ও মৃত। আল্লাহ শ্রবণ করান যাকে ইচ্ছা। আপনি কবরে শায়িতদেরকে শুনাতে সক্ষম নন। আপনি তো কেবল একজন সতর্ককারী।.....
আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়। যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়েম করে, এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা করে যাতে কখনও লোকসান হবে না। পরিণামে তাদেরকে আল্লাহ তাদের সওয়াব পুরোপুরি দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশী দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।' পবিত্র কুরআনের হৃদয়-নিংড়ানো এইসব বাণী থেকে এটা স্পষ্ট যে, কিয়ামতের দিন সৎকর্ম ও ঈমান ছাড়া আর অন্য কিছুই কোনো কাজে আসবে না। আপনার ধন-সম্পদ, পদ-মর্যাদা, সন্তান-সন্ততি, দল-বল –এসব কিছুই কাজে আসবে না কবরে চলে যাওয়ার পর থেকে। তাই সেই মহাবিপদের দিনের জন্য এখন থেকেই পাথেয় সংগ্রহ করতে হবে। -আমরা আরও জানলাম কুরআন থেকে যে, কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করেন। তাই জ্ঞান অর্জন সবচেয়ে বেশি জরুরি পাপ বর্জনের জন্য। আত্মগঠন ও আত্ম-সংশোধনের ক্ষেত্রে এটাই হওয়া উচিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পদক্ষেপ। হাদিসেও এসেছে, আল্লাহ যাকে ভালবাসেন তাকে ধর্মের জ্ঞান দান করেন।
শয়তান যেন জীবনের শেষ মুহূর্তে আমাদের ঈমান কেড়ে না নেয় সেজন্য সব সময় মহান আল্লাহর আশ্রয় কামনা করতে হবে। অনেক সময় শয়তান আমাদের পরম প্রিয় বস্তু দখলের হুমকি দিয়ে মৃত্যুর মুহূর্তে বলবে: কলেমায়ে শাহাদাত বা এক আল্লাহর প্রভু হওয়ার বিষয়ে সাক্ষ্য দিলে আমি তোমার অমুক প্রিয় বস্তু বা ব্যক্তিকে কেড়ে নেব বা তোমার অমুক গোপন পাপের বিষয়টি প্রকাশ করে দেব! তাই নিরব থাকো অথবা বল যে আল্লাহ দুই জন বা বহু সংখ্যক(নাউজুবিল্লাহ!) -তাই এ সময়ে ভড়কে গেলে চলবে না। সব সময় মহান আল্লাহর পথে থাকার চর্চা করলে, হালাল-হারাম বেছে চললে এবং কুরআন তিলাওয়াতে ও দরুদ শরিফ পাঠে অভ্যস্ত হলে শয়তানের এ ধরনের ধ্বংসাত্মক ফাঁদ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা করা যায়।
এখনই ও এই মুহূর্ত থেকেই আমাদের পাপ বর্জনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা উচিত এবং এমনকি যেসব কাজ আমাদেরকে পাপের পথের কাছাকাছি বা পাপময় গলির আশপাশে নিয়ে যায় সেসব থেকেও দূরে থাকা উচিত। রমজান মাসে হালাল বর্জনের অনুশীলন এ জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/মো.আবুসাঈদ/২৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।