ধৈর্য শেখার এক বড় উপায় হল নামাজ ও রোজা
রমজান: খোদাপ্রেমের অনন্য উৎসব (পর্ব-২৮, ধৈর্য ও রোজা )
পবিত্র রমজানের আর মাত্র দুই দিন বা এক দিন বাকি।
মহান আল্লাহ যদি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট না হয়ে থাকেন তাহলে আমরা যেন এমন সব কাজ করতে পারি যাতে তিনি আমাদের ওপর এই বাকি দুই-একদিনে সন্তুষ্ট হন এবং আমরা যেন ক্ষমাপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি। আর যদি তিনি সন্তুষ্ট হয়েই থাকেন ইতোমধ্যে তাহলে আমরা যেন এমন সব কাজ করতে পারি যাতে তিনি আমাদের ওপর আরও বেশি সন্তুষ্ট হন।
মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে তাঁর প্রকৃত স্মরণকারী হওয়ার তৌফিক দান করেন। যারা তাঁর প্রকৃত স্মরণকারী তারা অবশ্যই পাপ থেকে ও কলুষতা থেকে দূরে থাকেন। আর যারা মহান আল্লাহর প্রকৃত স্মরণকারী নয় তারা নামাজ-রোজা, হজ, জাকাত এসব আদায় করলেও পাপ বর্জন করে না। আল্লাহর প্রকৃত স্মরণকারী নয় বলে তাদের নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাতসহ কোনো ইবাদতই কবুল হয় না।
নামাজ-রোজা, হজ, যাকাত ও অন্য সব ইবাদতের লক্ষ্য হল আমাদের আত্মা যেন পবিত্র হয়। আমরা যদি পাপাচার থেকে দূরে না থাকি তাহলে আমাদের আত্মা পবিত্র হবে না তা আমাদের নামাজ, রোজা ও অন্য সব ইবাদত বাহ্যিক দিক থেকে যতই শুদ্ধ হোক না কেন।
খোদাভীতি বা তাকওয়া অর্জন করা ছাড়া মানুষের ইবাদত ও সৎকর্মেরও কোনো মূল্য নেই। তাকওয়াবিহীন অনেক বেশি ইবাদতের চেয়ে তাকওয়াযুক্ত অল্প ইবাদতও অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয় আল্লাহর দরবারে। তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিরা মহান আল্লাহর কাছে অন্যদের চেয়ে বেশি প্রিয় ও বেশি মর্যাদার অধিকারী। খোদা-সচেতনরা মহান আল্লাহর খাস্ রহমতের অধিকারী হন।
ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ) বলেছেন, যারা তাকওয়ার কারণে পাপের স্বাদ নেন না তাদেরকে কোনো সম্পদ ছাড়াই মহান আল্লাহ অভাবমুক্ত রাখেন, আত্মীয়-স্বজন ও বংশের লোকজন ছাড়াই তাদেরকে সম্মান দান করেন ও মানুষের মদদ ছাড়াই তাদেরকে ভালবাসার পাত্রে পরিণত করেন।
কোনো এক হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী যারা গোপন স্থানে বা নির্জনেও পাপ করতে আল্লাহকে ভয় করবে এবং মহান আল্লাহ তাকে জীবনে যা দিয়েছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ থাকবে তারা বিনা হিসাবে বেহেশতে যাবে। অন্য এক হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী যারা পাপের প্রলোভনের মুখেও ধৈর্য ধরে পাপ বর্জন করবে ও ধৈর্য ধরে মহান আল্লাহর নির্দেশিত ইবাদত করে যাবে তারাও বিনা হিসাবে বেহেশতে যাবে। প্রকৃত ধৈর্যশীলরা মহান আল্লাহর সব পরীক্ষায় জয়ী হন উচ্চতর নম্বর নিয়ে। তারা সুখের সময় ও প্রাচুর্যের সময়ও আল্লাহকে ভোলেন না এবং অহংকারে মত্ত হয়ে বিলাসিতায় ও পাপে ডুবে পড়েন না; আবার দুঃখ ও বিপদের সময়ও অস্থির হয়ে পড়েন না ও অকৃতজ্ঞ হন না। মহান আল্লাহ এ ধরনের ধৈর্যধারণকারীদের তাঁর খাস বা বিশেষ রহমতের দুয়ার খুলে দেন। আর ধৈর্য শেখার এক বড় উপায় হল নামাজ ও রোজা।
ধৈর্য ধারণের গুরুত্ব প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুরা আনফালের ৪৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন:
আর আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ বা নিস্তেজ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা রয়েছেন ধৈর্যশীলদের সাথে। -
এই আয়াতে এটাও স্পষ্ট যে মুমিন মুসলমানদের উচিত নয় পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হওয়া। মুসলমানদের অনৈক্য কাফেরদের শক্তিশালী করে এবং তাদের দুঃসাহস ও স্পর্ধা বাড়িয়ে দেয়।
দুঃখজনকভাবে মুসলমানদের অনৈক্যের ফলেই আজ বিশ্বের নানা অঞ্চলে মুসলমানরা জুলুম ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিন, মিয়ানমার ও কাশ্মিরের মুসলমানরা যুগ যুগ ধরে জুলুমের শিকার হত না যদি মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য থাকতো। মুসলমানদের প্রথম কিবলাকে ইহুদিবাদী দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করতে ও ইসলামী ঐক্য জোরদার করতে মরহুম ইমাম খোমেনি বিশ্ব কুদস দিবসের প্রচলন করেছেন। ফলে ইহুদিবাদী শক্তি ও ইসলাম বিরোধী শক্তি এ ধরনের ইসলামী ঐক্যকে আতঙ্কের দৃষ্টিতে দেখছে। মুনাফিক মুসলিম সরকারগুলোও বিশ্ব কুদস দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের বিপরীতে এবং পবিত্র কুরআনের আয়াতের বিপরীত পথ বেছে নিয়ে ইসলাম বিরোধী কাফির শক্তিগুলো ও কাফির শক্তিগুলোর মধ্যে ইসলাম-বিরোধিতায় সবচেয়ে কঠোর হিসেবে কুখ্যাত ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে নতজানুমূলক ও অপমানজনক বন্ধুত্ব ক্রমেই জোরদার করছে।
ধৈর্যশীলতা ও দৃঢ়চিত্ততার গুরুত্ব তুলে ধরে মহান আল্লাহ সুরা আনফালের ৬৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন: কাজেই তোমাদের মধ্যে যদি দৃঢ়চিত্ত একশ লোক বিদ্যমান থাকে, তবে জয়ী হবে দু’শর উপর। আর যদি তোমরা এক হাজার হও তবে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী জয়ী হবে দু’হাজারের উপর আর আল্লাহ রয়েছেন দৃঢ়চিত্ত লোকদের সাথে।
আসলে ধৈর্যশীলতা ও দৃঢ়চিত্ততা হল ঈমানের অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য অঙ্গ। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলীর ভাষায় ধৈর্য হচ্ছে ঈমান নামক দেহের মাথার সমতুল্য। মাথা ছাড়া দেহ কোন কল্যাণই লাভ করতে পারে না। ইসলামের টিকে থাকার ও অগ্রগতি লাভের রহস্যও ছিল এই ধৈর্য। বর্তমান যুগে ইসলামী ইরানের, লেবাননের হিযবুল্লাহর, ফিলিস্তিনের ও ইয়েমেনের এবং প্রতিরোধকামী শক্তিগুলোর নানা সাফল্য আর বিজয়ের রহস্যও হল এই ধৈর্য।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে রমজানের রোজার বরকতে ধৈর্যশীলতা ও দৃঢ়চিত্ততার অধিকারী প্রকৃত মুমিন হওয়ার তৌফিক দান করুন।
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।