মে ২৮, ২০২২ ১৭:৩৬ Asia/Dhaka

আজকের আসরে আমরা এই প্রদেশের গোরগান শহরের দিকে যাবো। গোরগান শহরের আয়তন ২৮৮০ বর্গ কিলোমিটার।

এর উত্তর এবং উত্তর-পূর্বে রয়েছে কাবুস গম্বুজ, পূর্বে রয়েছে আলীয়াবাদ শহর, উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে তুর্কমেন বন্দর, পশ্চিমে কোর্দকুয়ী শহর এবং দক্ষিণে রয়েছে আলবোর্য পর্বতমালা যার পূর্বপ্রান্ত গিয়ে মিলেছে সেমনানের সাথে। গোরগান শহরটি প্রধান দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি হলো কেন্দ্রীয় গোরগান, অপরটি 'অগ-কেলা'। অগ-কেলা গোরগান শহরের উত্তরে অবস্থিত। এখানকার আবহাওয়া মোটামুটি নাতিশীতোষ্ণ এবং শুষ্ক। এই শহরের ভেতর দিয়ে গোরগান নদী বয়ে গেছে।

গোরগান নদীর উপরে নির্মিত সাফাভি আমলের ব্রিজটিকে এখানকার সবচে প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়। এই পুলটিতে অবশ্য সালজুকি আমলে ইটের কাজ করা হয়েছে। এখানকার পাঞ্জশাম্বে বাাার বা বৃহস্পতিবারের হাট খুবই পরিচিত। শহর কিংবা গ্রামের অধিবাসীরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা-বেচার জন্যে এই বাজারে আসে। ব্যবসায়ীরা জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় বিচিত্র জিনিসপত্র এখানে বিক্রি করতে আনেন। বিশেষ করে গ্রামবাসীরা তাদের এক সপ্তার প্রয়োজনীয় বাজার এই পাঞ্জশাম্বে বা বৃহস্পতিবারের বাজার থেকে কিনে রাখেন। এই বাজার মেলার ফলে কৃষক বা রাখালদের যেমন সময় নষ্ট হয় না, অপরদিকে যাতায়াত খরচও বেঁচে যায়।

গোরগান অঞ্চলে রয়েছে মূল্যবান ও সমৃদ্ধ বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন। ছয় হাজার বছর আগের মৃৎশিল্পের যেসব নিদর্শন এখানকার তুরাঙ্গ টিলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া গেছে, সেগুলো প্রমাণ করে এই এলাকার মানব বসতি তথা সভ্যতার ইতিহাস কতো প্রাচীন। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে গোরগান একটি স্বাধীন ভূমি ছিল এবং রোম সম্রাটের দরবারে তাদের রাষ্ট্রদূত বা প্রতিনিধি ছিল। আলে যিয়ারের সময়ে এটি ছিল প্রশাসনকার্য পরিচালনার কেন্দ্রীয় শহর। কিন্তু তৈমুরীয় এবং মোগলদের হামলার ফলে গোরগানের এই প্রাচীন শহরটি নাস্তানাবুদ হয়ে যায়। এ সময় গোরগান শহরের জনগণ আস্তারাবাদ নামের ছোট্ট একটি পার্বত্য শহরে চলে যায়। পার্বত্য উপত্যকার জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে এই শহরটি অবস্থিত। আস্তারাবাদের আবহাওয়া ছিল অনুকূল। তাছাড়া এখানকার ভূমিও বেশ উর্বর অর্থাৎ কৃষিকাজের উপযোগী। ব্যবসায়ীরা তখন এদিক দিয়েই যাওয়া-আসা করতো। এইসব কারণে শহরটির উন্নয়ন ঘটে এবং ধীরে ধীরে এটি বিশাল একটি শহরে পরিণত হয়। পরবর্তীকালে এই আস্তারাবাদই গোরগান নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে।  

সাফাভিদের শাসনামলে গোরগান শহরকে দারুল মোমেনীন বলা হতো। এই সময় গোরগান ছিল জ্ঞানী-গুণী আলেম-ওলামাদের বাসস্থান ও সমাগমস্থল। অতীতে গোরগানের পাঁচটি প্রবেশদ্বার ছিল। শহরের দূর-দূরান্ত থেকে এখানকার টাওয়ার এবং কেল্লার উঁচু প্রাচীর দেখা যেত। গোরগানের উত্তরে, পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে এস্কান্দারী প্রাচীর নামে খ্যাত প্রশস্ত একটি প্রাচীর ছিল। এই প্রাচীরটি সাসানীয় শাসনামলে নগর প্রতিরক্ষার লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে। প্রাচীরটির স্মৃতিচিহ্ন এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে এইসব ধ্বংসাবশেষ টাওয়ার এবং কেল্লারই নিদর্শন। শহর প্রতিরক্ষার জন্যই এগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল।

গোরগান জামে মসজিদও এখানকার আরেকটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই মসজিদটির মূল ভিত্তি সালজুকি শাসনামলে নির্মাণ করা হয়েছে। এখনো এই মসজিদটির ইটের তৈরী মিনার এবং মিম্বারের উপরে কুফি অক্ষরে লেখা শিলালিপীর অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। কাঠের তৈরী মিম্বারের উপরে এক হাাজর আঠারও হিজরী লেখা আছে। মিউজিয়াম বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য অনুযায়ী বিশ্বের ব্যতিক্রমধর্মী চারটি মিম্বারের মধ্যে গোরগান জামে মসজিদের মিম্বারটি একটি। গোরগানের মিউজিয়ামটিও এখানকার আরেকটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এই মিউজিয়ামটি প্রধান তিনটি বিভাগে বিভক্ত। পুরাতত্ত্ব বিভাগ, নৃতত্ত্ববিদ্যা বিভাগ এবং শিলালিপী বিভাগ। প্রাচীন নিদর্শনবহুল ইরানের গুরুত্বপূর্ণ মিউজিয়ামগুলোর মধ্যে এটি চতুর্থ স্থানীয়। এখানে মজুদ প্রাচীন নিদর্শনগুলো পাঁচ হাজার বছর আগেকার।

গোলেস্তান প্রদেশটি জঙ্গলে ঢাকা। এখানে রয়েছে সবুজ চারণভূমি আর অনেক নদী-হ্রদ। সেইসাথে রয়েছে বুনো জন্তু-জানোয়ারের বাস। যদিও গুলিস্তান প্রদেশের সকল এলাকাই গুরুত্বপূর্ণ, তারপরও গুলিস্তান বন, সংরক্ষিত অঞ্চল জাহান-নামা এবং গোরগানের নহর খোরান পার্কের একটা বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। গোরগানের গোলেস্তান জাতীয় পার্ক একটি বিখ্যাত উদ্যান। এখানে বছরে প্রায় বিশ লাখ লোক বেড়াতে আসে। মাশহাদ থেকে গোরগানে যাবার পথে এই পার্কটি পড়বে। গোরগান থেকে মাশহাদের দূরত্ব হলো পাঁচ শ ষাট কিলোমিটারের মতো। মজার ব্যাপার হলো গোরগান থেকে মাশহাদে যাবার পথে গুলিস্তান বনের ভেতর দিয়ে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়।

আলবোর্য পর্বতমালার পূর্বে অবস্থিত এই বনটির আয়তন হলো একানব্বই হাজার আট শ' নব্বই হেক্টর।

খোরাসান, সেমনান এবং গোলেস্তান এই তিনটি প্রদেশের সীমানা জুড়ে বনটি বিস্তৃত। বিচিত্র উদ্ভিদ থাকার কারণে এই বনে বাস করে বুনো ও স্তন্যপায়ী বিচিত্র প্রজাতির প্রাণী। বিচিত্র পাখিও রয়েছে এই উদ্যানে। কমপক্ষে এক শ দশ প্রকারের পাখি এই বনে দেখতে পাওয়া যায়। শীতের সময় আরো বহু প্রকারের অতিথি পাখি এই পার্কে এসে জমে। পার্কের সীমানার ভেতরে রয়েছে বেশ ক'টি বিনোদনকেন্দ্র। এই বিনোদনকেন্দ্রগুলো থেকে পশু-পাখিসহ পার্কের বিচিত্র সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় খুব সহজে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ