মে ২৮, ২০২২ ১৭:৪৪ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা নিজেকে ভালোভাবে চেনা এবং নিজের সম্পর্কে ভালোভাবে জানার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি।

আমিরুল মুমিনিন হজরত আলী (আ.) বলেছেন, নিজেকে যে চিনে না সে কীভাবে তার পালনকর্তাকে চিনবে। মানুষের রূহ বা আত্মার উৎস মহান আল্লাহ। ইসলামের দৃষ্টিতে এই রুহ হচ্ছে মানুষের প্রকৃত অস্তিত্ব যা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের দেহে আমানত হিসেবে রাখা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সূরা আল হিজরের ২৯ নম্বর আয়াতে মানুষ সৃষ্টির পর তাতে আমার পক্ষ হতে রূহ ফুঁকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।  

ব্যক্তির উন্নয়ন ও অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে আরো ভালোভাবে বেঁচে থাকার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। নিজেকে চেনার মাধ্যমে এই ক্ষেত্র প্রস্তুত সহজতর হয়। কারণ এর মাধ্যমে নিজের শক্তি, সামর্থ্য, দুর্বলতা, চাহিদা, আগ্রহ, ভীতি ও প্রত্যাশা সম্পর্কে নিজের মধ্যেই সুস্পষ্ট উপলব্ধি ও ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এই উপলব্ধি নিজের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যদিয়ে আমরা নিজের মধ্যে লালিত কুঅভ্যাস ও কুচিন্তার সঙ্গেও পরিচিত হতে পারি। এটা স্বতসিদ্ধ যে, সমস্যা সমাধানের পূর্বশর্ত হচ্ছে সমস্যা চিহ্নিতকরণ। সমস্যা চিহ্নিত করতে পারলেই কেবল তা সহজে সমাধান করা যায়। খারাপ অভ্যাস ও খারাপ চিন্তা-ভাবনা দূর করতেও এই পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে চিনতে পারার অর্থ হলো,  নিজের সম্পর্কে বিশদ তথ্যে সমৃদ্ধ হওয়া এবং অজ্ঞতা ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকা। এ ধরনের ব্যক্তি জেনে-বুঝে নিজের পথ নির্বাচন করেন এবং শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, সামাজিক পর্যায়েও তার আচার-আচরণ ও পথচলা হয় বিজ্ঞচিত।                                                          

তবে নিজেকে চিনতে হলে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতেই হবে। প্রথম পদক্ষেপ হলো, আপনাকে জানতে হবে কোন কোন বিষয় বা জিনিস আপনাকে বেশি টানে অর্থাৎ কোন বিষয়গুলোর প্রতি আপনার আগ্রহ বেশি। চেষ্টা করুন, আপনার আবেগ-উচ্ছাস, বিনোদনসহ যা কিছু আপনাকে আকৃষ্ট করে তা চিহ্নিত করার। বেশিরভাগ মানুষই পছন্দনীয় ক্ষেত্রে কাজ করাকে প্রাধান্য দেয়। আপনি নিজের আগ্রহের জায়গা সম্পর্কে যত বেশি অবহিত হতে পারবেন তত বেশি সুন্দরভাবে জীবনকে সাজাতে পারবেন এবং চাকুরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রেও সাফল্য অর্জনে সক্ষম হবেন। পরবর্তী পদক্ষেপটি হলো, মূল্যবোধ নির্ধারণ। মূল্যবোধ হলো একটি মানদণ্ড যা মনোভাবের ভিত্তিতে গঠিত অপেক্ষাকৃত স্থায়ী বিস্বাস। মূল্যবোধগুলো আমাদেরকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সঠিক পথে চলার পথে উৎসাহ যোগায়। একইভাবে আমাদেরকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহায়তা করে। যেকোনো লক্ষ্যে পৌঁছাতে কিছু কষ্ট সহ্য করতেই হয়। এই কষ্ট সহ্য করার শক্তি যোগায় এই মূল্যবোধ।

আপনি যখন নিজের বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে অবহিত হন তখন নিজের প্রতিভাকে সহজেই আরও বেশি প্রস্ফুটিত করার সুযোগ পান। নিজের ব্যক্তিত্বকে চিনতে পারলে সহজেই নিজের ভালো দিকগুলোকে শানিত করা সম্ভব হয় এবং নিজের দুর্বলতাকে সহজেই কাটিয়ে ওঠা যায়। নিজের শক্তি ও সামর্থ্য সম্পর্কে জানার ফলে বেশি বেশি সাফল্য অর্জন করা যায়, কারণ কোনো মানুষই ত্রুটিমুক্ত নন, পরিপূর্ণতাও শতভাগ নয়। আমরা অন্যের সমালোচনা করতে খুবই পটু হলেও নিজের দোষ-ত্রুটিগুলো চোখে পড়ে না। নিজেকে চিনতে পারার ফলে আমরা নিজেদের দোষ-ত্রুটিগুলোকে সঠিকভাবে বুঝতে পারি এবং আমরা জানতে পারি অন্যদের মতো আমরাও ত্রুটিমুক্ত নই। নিজেকে চেনার তৃতীয় পদক্ষেপ হলো লক্ষ্য নির্ধারণ। সঠিক নীতি ও বাস্তবতার আলোকে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা যখন লক্ষ্য নির্ধারণে ভুল করি অথবা অবাস্তব স্বপ্ন দেখতে থাকি তখন আমরা ভুল পথে এগোতে থাকি এবং এক সময় আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি।

আত্মপরিচিতি মানুষকে সঠিক চিন্তা-বিশ্বাসের ভিত্তিতে লক্ষ্য নির্ধারণ করার পথ দেখায়। অন্যভাবে বলা যায়, মানুষ নিজের শক্তি ও দুর্বলতার আলোকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে। আরেকটি বিষয়ে অবশ্যই মনোযোগ দেবেন তাহলো নিজের জীবনযাপনের পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার চেষ্টা করবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, খেয়াল করবেন রাত-দিনের কোন সময়টায় আপনি কাজ-কর্মে বেশি উৎসাহবোধ করেন এবং বেশি কাজ করতে পারেন। যেসব বিষয় আপনার ওপর প্রভাব ফেলে সেগুলোকে চিহ্নিত করুন। এসব বিষয় আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহযোগিতা করবে। আত্মপরিচিতির অনেক উপকারী দিক রয়েছে। এসবের মধ্যে একটি হলো সুখানুভূতি। নিজেকে চেনার ফলে লক্ষ্য অর্জনের পথটি আপনার কাছে অনেক মসৃন ও সহজ মনে হবে। কারণ আপনি জানেন কী করছেন, কেন করছেন। আপনার আবেগ-উচ্ছাস, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সঙ্গে আপনার প্রত্যাশা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। কাজেই আপনার জীবনে আরও বেশি প্রশান্তি আসবে।

আপনি নিজের শক্তি-সামর্থ্য ও দুর্বলতা সম্পর্কে জানার পর যখন পথ চলতে থাকবেন তখন আপনি পা ফেলবেন হিসাব-নিকাশ করে, কারণ আপনি আপনার সীমা ও পরিধি সম্পর্কে অবহিত, আপনি যে জীবন-কাঠামো গড়ে তুলেছেন তা বাস্তবভিত্তিক। আত্মপরিচিতি আপনাকে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে। আপনি যখন নিজের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে যাবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই দুর্বলতা দূর করতে সচেষ্ট হবেন এবং শক্তি ও সামর্থ্যকে আরও বাড়াতে চাইবেন। এটাই সব সময় করা উচিত। নিজের দুর্বলতা দূর করার চেষ্টার মধ্যদিয়ে খারাপ অভ্যাসগুলো দূর করা সম্ভব হবে যা জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/আবুসাঈদ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ